হাকিকুল ইসলাম খোকন, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি: গভীর শ্রদ্ধায় অর্লান্ডোতে অমর একুশ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করেছে। একুশে ফেব্রুয়ারি। আজ থেকে উনসত্তর বছর পূর্বে বাঙালির চেতনার ভিত্তিমূলে ঝড় তুলে মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার একুশ দিয়ে গেছে। অম্লান গৌরবকে শ্রদ্ধায় স্মরণীয় করতে সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা মহানগর আওয়ামীলীগের উদ্যোগে বোম্বে গ্রীল চত্বরে অমর একুশ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়।
মূলত: নুতন প্রজন্ম ও বিশাঙ্গণে মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার রক্তাক্ত ইতিহাস তুলে ধরতে এ বিশাল আয়োজন| এ আয়োজনে সাধারণ মানুষ, পেশাজীবি সহ বাংলাদেশ সোসাইটি, বাংলাদেশ আমেরিকান ফাউন্ডেশন, বরিশাল বিভাগীয় সমিতি, আনন্দধারা সংগঠন সমূহ অংশগ্রহণ করে। দূরালাপনীতে অংশ নেন দেশ ও প্রবাসের বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দ।

করোনাকালের নিস্তব্ধতা ভেঙে স্বাস্থবিধি মেনে সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে সর্বস্তরের মানুষ কালো ব্যাচ ধারণ করে সমাবেশে আসেন। ত্যাগ গর্ব ও অনুপ্রেরণার মহান দিবসটির গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মোয়াজ্জেম ইকবাল এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আহসান শেলী। সন্ধ্যা সাতটায় আনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত এবং ভাষা শহীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। প্রথমেই হৃদয়গ্রাহী উপস্থাপনায় অনবদ্য ভাবগম্ভীর পরিবেশ তৈরী করেন প্রধান উপদেষ্টা মাহবুব রহমান মিলন ও শামসুর রহমান সামু।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এমএ সালাম বাঙালির মননে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে মাতৃভাষা কায়েম থেকে স্বাধীনতা প্রাপ্তির ইতিহাস দূরালাপনীতে বিশদ ব্যাখ্যাকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপর গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ঢাকা থেকে আওয়ামীলীগ নেতা মতিয়ার রহমান বলেন, একুশ না হলে একাত্তর হতো না। আলোচনায় বক্তাগণ বলেন, বায়ান্নর একুশ মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাধীনতার বীজ রোপন করেছিল এবং জাতির জনক আমাদের মাতৃভূমি স্বাধীন করেছিলেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি আদায়ে এবং বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে উন্নিতকরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টির প্রশংসা করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদিকা আইরিন পারভীন মাতৃভাষার বীর শহীদের স্মৃতির উপর আলোকপাত করে এবং বাংলাদশের বর্তমান অগ্রগতি নিয়ে বিশদ আলোচনায় আলোচনা করেন।

সভায় বক্তব্য রাখেন করিমুজ্জামান, শামসুর রহমান সামু, মো: জসীম উদিদন, আবিদ আমীর, মোহাম্মদ নূর এবং রাবিব আলমসহ আরো অনেকে। নতুন প্রজন্মদের দেশের প্রতি আকর্ষণ বাড়াতে নবনীর তত্ত্বাবধানে অন্যপ্রান্তে চলে শিশু অংকন প্রতিযোগিতা। এতে দেশ মুক্তিযুদ্ধ শহিদ মিনারের চিত্র ফুটে উঠে কচি শিশুদের অংকনে । সোনামনিদের হাতে পুরুস্কার বিতরণ করেন উপদেষ্টা, সভাপতি, সেক্রেটারি ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা। সংগীত পর্বের নেতৃত্ব দেন স্বাধীন বাংলা বেতারের বিপ্লবী কণ্ঠ বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: খসরু, প্রিয় কণ্ঠ তালাত এবং বাচ্চু ভাই। যাদের কবিতা আবৃতিতে মুক্তি যুদ্বের চেতনা উদ্ভাসিত হয়েছে তারা হলেন- আবৃতিকর মুস্তাফা খোকন, লিপি, নবনী ও তালাত। পর্ব পরিচালনা, শহিদ মিনার স্থাপন, আলো নিয়ন্ত্রণ, ডেকোরেশন, খাবার পরিবেশনে যাদের অবদান অনিস্বীকার্য তারা হলেন- ইলিয়াস ঠাকুর, শামসুস তোহা, মোহাম্মদ নূর, শাজাহান কাজী, মনিরুল ইসলাম, জুয়েল, মইনুল, বাবু, সেলিম, কয়সর, ফয়সল, জাহাঙ্গীর প্রমুখ।

একদিকে সংগীতের মূর্ছনা, অন্যদিকে সুস্বাধু ভুঁড়িভোজ শেষে শহিদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের পালা। অর্লান্ডোর আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ, সকল সংগঠনের যৌথ পুষ্পাঞ্জলি অর্পনের পরে সারিবদ্ধভাবে শিশু নারী পুরুষ ফুল দেয় শহিদ মিনারে। করোনাকালে দীর্ঘ বিরতির মাঝে এরূপ মহৎ আয়োজন পরিবার পরিজন নিয়ে উপভোগে সকলে যেন মাতৃভূমির ছোঁয়া পায়। অতঃপর অনুষ্ঠানমালার সমাপ্তি হয়।