জাহাঙ্গীর আলম সিকদার, লন্ডন, যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি: সংক্ষিপ্ত পরিসরে হলেও সুন্দরবন ফাউন্ডেশন ইউকে’র পক্ষ থেকে পালিত হয়েছে শহীদ আলতাব আলী স্মরণ সভা ২০২০। ৪ মে, ২০২০ সোমবার অনলাইন ভার্চুয়াল এ স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সহসভাপতি এমদাদুল হক চঞ্চল। সুন্দরবন ফাউন্ডেশন ইউকে’র সাধারণ সম্পাদক শেখ মহিতুর রহমান বাবলুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাহিদ নেওয়াজ রানা, সাংগঠনিক সম্পাদক মাকসুদ আহমেদ সুমন, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ওয়াহিদুজ্জামান, মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান হাওলাদার। প্রধান বক্তা হিসাবে উপস্থিত ছিলেন টিভি সাংবাদিক ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় রাষ্ট্রপতির সাবেক প্রেস সেক্রেটারী সামসুল আলম লিটন।
গত ৪ মে ২০২০ ছিল শহীদ আলতাব আলীর ৪২তম শাহাদাত বার্ষিকী। ৪২ বছর আগে এই দিনে পূর্ব লন্ডনের এডলার স্ট্রিটে বর্ণবাদী হামলায় শহীদ হয়েছিলেন তিনি। এ ঘটনার প্রতিবাদে স্ফুলিঙ্গের মতো প্রতিবাদী হয়ে ওঠে লন্ডন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। মিটিং মিছিল আর স্লোগানে রাজপথ উত্তপ্ত করে তোলেন তারা। প্রতিবাদের আওয়াজ পৌঁছে যায় প্রশাসনের কানে। পরবর্তীতে আলতাব আলীর স্মরণে ১৯৯৮ সালে লন্ডনের বাংলাদেশি পাড়া হোয়াইট চ্যাপেলে এলাকার এডলার স্ট্রিটে অবস্থিত সেন্ট মেরিস পার্কের নাম পরিবর্তন করে নতুন রাখা হয় আলতাব আলী পার্ক। স্থানীয় বাংলাদেশি বিভিন্ন সংগঠনের দাবির মুখে ১৯৯৯ সালে আলতাব আলীর রক্তের উপর নির্মাণ করা হয় শহীদ মিনার। যা ছিল বাংলাদেশের বাইরে বহির্বিশ্বে বানানো প্রথম শহীদ মিনার। ২০১৮ সালে আলতাব আলী পার্ক সংলগ্ন বাস স্টপ এর নাম পরিবর্তন করে নতুন রাখা হয় আলতাব আলী বাস স্টপ। ২০১৬ সাল থেকে টাওয়ার হ্যামলেট কাউন্সিলের পক্ষ থেকে ৪ মে দিনটিকে পালন করা হয় আলতাব আলী ডে হিসাবে। এদিন আলতাব আলীর স্মরণে বিভিন্ন সংগঠন নানা ধরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। চলতি বছর প্রাণঘাতী করোনা মহামারীর গৃহবন্দী অবস্থায় ক্ষুদ্র আকারে অনলাইন ভার্চুয়াল স্মরণ সভা করেছে বিলেতের প্রভাবশালী সামাজিক সংগঠন সুন্দরবন ফাউন্ডেশন ইউকে।
সভাপতি এমদাদুল হক চঞ্চল বলেন, শহীদ আলতাব আলী ব্রিটেনে বাংলাদেশিদের আত্মপরিচয়ের প্রতীক। তার অকাল মর্মান্তিক মৃত্যুর মধদিয়ে এদেশে বাংলাদেশি তথা বহিরাগতরের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাইলফলক ভীত নির্মিত হয়েছিল। সুন্দরবন ফাউন্ডেশন ইউকে এমন একজন মহতী মানুষের স্মরণসভা করতে পেরে গর্বিত। প্রতিবছর বৃহৎ আকারে আলতাব আলী স্মরণ সভা ও প্রয়োজনে তার পরিবারকে যেকোনো সহযোগিতার হাত বাড়ানোর কথাও বলেন সুপ্রিম কোটের সাবেক এই আইনজীবী। প্রধান বক্তা সামসুল আলম লিটন বলেন, আলতাব আলীর নির্মম হত্যাকান্ড এবং একে কেন্দ্র করে জেগে উঠা আন্দোলন বিলেত তথা সমগ্র ইউরোপের অভিবাসীদের জন্য ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। সেদিনের ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশিদের প্রতিরোধের মুখে ইষ্ট লন্ডন থেকে ন্যাশন্যাল ফন্টের স্কীনহেড রেসিষ্টরা বিতাড়িত হলেও এর পর গজিয়ে উঠে ব্রিটিশ ন্যশনাল ফ্রন্ট সহ আরো কয়েকটি রেসিস্ট সংগঠন। ইদানিং নতুন করে এর সাথে যোগ হয়েছে উগ্রবাদ। তিনি বলেন বৈষম্য, উগ্রবাদ এবং ঘৃণার কোন স্থান নেই বিলেতে। শহীদ আলতাব আলী ৪২ বছর আগে প্রাণ দিলেও এর তাৎপর্য এখনো বিদ্যমান। দিবসটিতে আমরা শুধু আলতাব আলীকেই স্মরণ করিনা। আমরা বৈষম্য, উগ্রবাদ ও বর্ণবাদকেও ঘৃণা জানাই।
বৈষয়িক এই দুর্যোগের মধ্যেও এমন একটি মহতী উদ্যোগ নেয়াতে ধন্যবাদ জানিয়ে লিটন বলেন সুন্দরবন ফাউন্ডেশন ইউকে অনেক মহতী কাজ করে ইতিমধ্যে কমিউনিটির নজর কেড়েছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের ফুসফুস সুন্দরবন ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে প্রাচীর হয়ে দেশের বিপুল সম্পদ ও প্রাণ রক্ষা করে। উপকূলীয় কয়েক লাখ লোকের জীবিকার মূল অবলম্বন এটি। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য, গাছপালা প্রাকৃতিক ইতিহাসের অনন্য পাঠশালা। আমাদের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের শেষ আশ্রয় এই সুন্দরবন। সুন্দরবন শুধুই বাংলাদেশের অহংকার নয় এটা গোটা দুনিয়ার অহংকার। বাংলাদেশের এই প্রাকৃতিক ঐতিহ্য ধ্বংস করার জন্য দেশীয় ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রের চক্রান্তের ফলে বিপন্নতার মুখে সুন্দরবন। তাই একে রক্ষার খাতিরে সুন্দরবন ফাউন্ডেশন ইউকে’র দৃশ্যমান ভূমিকা প্রত্যাশা করেন তিনি।
এদিকে বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট সুন্দরবন ফাউন্ডেশন ইউকের সাধারণ সম্পাদক শেখ মহিতুর রহমান বাবলু শহীদ আলতাব আলীর উপর একটা পূর্ণাঙ্গ ডকুমেন্টারী তৈরী ও সম্ভব হলে বিলেতের যেকোনো একটা জাদুঘরের একটি অংশে শহীদ আলতাব আলী জাদুঘর নির্মাণে তার ইচ্ছা ও স্বপ্নের কথা উল্লেখ করেন। পরিশেষে শহীদ আলতাব আলীর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মুনাজাতের মধ্যে দিয়ে অনলাইন ভার্চুয়াল স্মরণ সভার সমাপ্তি হয়। মুনাজাত পরিচালনা করেন মাকসুদ আহমেদ সুমন।