রফিকুল ইসলাম, চট্টগ্রাম: শিপইয়ার্ড থেকে লোহা বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত শিপব্রেকিং ইয়ার্ড থেকে লোহা বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। সরকারের একটি ট্যাক্স আদায়কে কেন্দ্র করে সীতাকুণ্ডের দক্ষিণাঞ্চলে গড়ে ওঠা সবগুলো শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড থেকে লোহা বিক্রি একযোগে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি শিপ ব্রেকিং সেক্টরের ব্যবসায়ীরা এক জরুরি বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত নেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের লোহার খনি হিসেবে খ্যাত শিপ ব্রেকিং সেক্টর সংকটে পড়েছে। এর মধ্যে ঋণখেলাপি হয়ে অনেক শিপ ব্রেকিং ব্যবসায়ী দেশ ছেড়েছেন। অবস্থা নাজুক হওয়ায় অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। অন্তত শ’ দুয়েক ইয়ার্ড তৈরি হলেও সাম্প্রতিক হিসেবে চালু শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের সংখ্যা ৫৯টি। এগুলোর মালিক ২৫ জন।
একাধিক ব্যবসায়ী জানান, আগে প্রতি মাসে গড়ে ২৫টি পর্যন্ত জাহাজ আসত। সেখানে গত তিন মাসে তিনটি জাহাজও আসেনি। জাহাজ আনার মতো পরিস্থিতি নেই বলে উল্লেখ করে গতকাল একাধিক শিপ ব্রেকিং ব্যবসায়ী জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে লোহার দাম কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের অনেকে বিপুল লোকসানের মুখে পড়েছেন। একেকটি জাহাজে ১০-২০ কোটি টাকা পর্যন্ত লোকসান গুনতে হচ্ছে। অপরদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপ লোহার দাম কমে যাওয়ায় দেশীয় স্টিল মিল মালিকেরা শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড থেকে লোহা না কিনে সরাসরি বিদেশ থেকে স্ক্র্যাপ আমদানি করছেন। এতে স্টিল মিল মালিকদের খরচ কম পড়ছে। কিন্তু শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তারা বলেছেন, ব্যবসা-বাণিজ্য না থাকার মাঝে ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে দেখা দিয়েছে সরকারি ট্যাক্স। শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড থেকে সরকার নানাভাবে ট্যাক্স আদায় করছে উল্লেখ করে তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত সব ধরনের ট্যাক্স প্রদান করা হচ্ছে। কিন্তু এবার নতুন করে অ্যাডভান্সড ট্যাক্স (এটি) নামে ৫ শতাংশ ট্যাঙ আগাম নেওয়া হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, আগাম ট্যাক্স কোনোভাবে সামাল দেওয়া গেলেও লোকাল ট্যাক্স নিয়ে সংকট তৈরি করা হচ্ছে। প্রতিটন লোহার ওপর এক হাজার টাকা করে লোকাল ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছে। ইয়ার্ড থেকে লোহা বিক্রি করা হলেই এক হাজার টাকা করে ট্যাক্স প্রদান করতে হবে। গত জুনে বাজেট ঘোষণার সময় এই ট্যাক্স ঘোষণা করা হয়েছে উল্লেখ করে তারা বলেন, কিন্তু আমাদের ইয়ার্ডগুলোতে ২/৩ বছর আগে আমদানি করা জাহাজের লোহাও রয়েছে। ওই লোহা বিক্রি করার সময়ও ট্যাক্স আদায় করা হচ্ছে। এসব লোহা যখন আমদানি করা হয়েছিল তখন প্রচলিত সব ট্যাক্স পরিশোধ করা হয়েছে। এখন নতুন করে ট্যাক্স আরোপ করে সংকট তীব্র করা হচ্ছে।
ট্যাক্সের ব্যাপারে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, অ্যাডভান্সড ট্যাক্স এবং লোকাল ট্যাক্স মিলে যে সংকট তৈরি হয়েছে তার সমাধান করা না হলে পরিস্থিতি খারাপ হবে। ইয়ার্ডে থাকা আগের লোহা বিক্রির ওপর যদি লোকাল ট্যাক্স প্রত্যাহার করা না হয় তাহলে কোনো ইয়ার্ড লোহা বিক্রি করবে না। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে শিপ ব্রেকিং মালিকেরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছেন।
তারা বলেন, এই ধরনের ট্যাক্স থাকলে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড থাকবে না। এখন সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরকার ট্যাক্স চায় নাকি শিপ ব্রেকিং সেক্টর।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম আয়কর বিভাগের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা বলেন, ট্যাক্স আরোপ করেছে সরকার। আমরা ট্যাক্স আদায় করব। ট্যাক্স ছাড় দেওয়ার সাথে আমরা জড়িত নই। আমাদের কিছু করারও নেই। অ্যাডভান্সড ট্যাক্সের বিষয়ে তিনি বলেন, এই ট্যাক্স পরবর্তীতে সমন্বয় করা হবে। কোনো ইয়ার্ড মালিক যদি সমন্বয়ের পর টাকা পাওনা থাকে তাহলে তা সরকার ফেরত দেবে। অবশ্য একাধিক জাহাজ মালিক বলেছেন, অ্যাডভান্সড ট্যাক্স সমন্বয় করা হবে ঠিক। কিন্তু পরবর্তীতে যদি আমরা জাহাজ আমদানি করতে না পারি তাহলে কীভাবে সমন্বয় করা হবে? তাদের মতে, সরকারের কোষাগারে টাকা চলে গেলে সেই টাকা ফেরত আনা কঠিন।