আখি সীমা কাওসার, রোম, ইতালি প্রতিনিধি: ৩৬০ আউলিয়ার পূণ্যভুমি সিলেট একটি আধ্যাত্মিক জেলা নামে খ্যাত। কারণ সিলেটেই একমাত্র শাহজালালের মাজার অবস্থিত। যে মাজারটি এখনো বাংলাদেশের জনগণ সহ দেশ-বিদেশের সবার কাছে পবিত্র স্থান বলে মর্যাদা লাভ করেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার ভক্ত-মুরিদ সে মাজার জিয়ারত করতে আসেন। অনেকেই নানান রকম নিয়তে সেই মাজারে এসে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেন । সেই সিলেটে কলঙ্কের কালি মেখে দিয়েছে কিছু সন্ত্রাসী বখাটে মানুষ এবং সন্ত্রাসী পুলিশ যার নামের আগে ভয়ঙ্কর উশৃংখল এবং দুষ্ট পুলিশ নামে খ্যাত। সে হলো পুলিশ আকবর, যার নাম নিতেও এলাকার মানুষ ভয় পেত এক সময় ।
সিলেটে মাত্র দশ হাজার টাকা ঘুষের জন্য পুলিশ রাতভর পিটিয়ে নিরীহ রায়হানকে হত্যা করেছে। ঐ ঘটনার প্রতিবাদে দেশ-বিদেশে সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে প্রধান আসামি আকবরকে আইনের আওতায় আনার জন্য। থেমে নেই প্রবাসী সংগঠনগুলো। নিষ্ঠুর এই ঘটনার প্রতিবাদে জালালাবাদ এসোসিয়েশন ইতালি আয়োজন করেছে একটি প্রতিবাদ সভার। উক্ত সভায় আলোচনারত বক্তাগণ কঠোর হুঁশিয়ারি মাধ্যমে প্রশাসনকে অনুরোধ জানান যেন প্রধান আসামি আকবরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয় । সভাস্থল থেকে শাস্তির দাবিও জানান নেতৃবৃন্দ। ইতালির রাজধানী রোমের স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্টের হল রুমে অনুষ্ঠিত হয় এই প্রতিবাদ সভা।
বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে একেবারে নাজেহাল ইতালি, হুহু করে দিন দিন বেড়েই চলেছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ডাক্তারদের চোখে ঘুম নেই হাসপাতালগুলো দিন রাত ২৪ ঘন্টা করোনা রোগীর সেবা দিয়ে আসছে। শহরগুলোতে চলমান অ্যাম্বুলেন্স এর আওয়াজে মানুষ আতঙ্কে আছে। এরমধ্যে ১৯ দেশের এ ধরনের সংবাদ আহত করে প্রবাসী বাংলাদেশীদেরকে । এর মধ্যেও শুধু মাত্র সামাজিক দায়িত্ববোধের দায়ে এবং স্বাস্থ্য বিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এই প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছে জালালাবাবদ এসোসিয়েশন। উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি অলিউদ্দিন শামীম। পরিচালনায় ছিলেন- যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম।

উক্ত সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাব্বির আহমেদ, সহ সভাপতি এম ডি আব্দুল ওয়াদুদ, নির্বাচন কমিশনার মাসুক মিয়া, মোহাম্মদ রানা খান, আলি মিয়া, বৃহত্তর সিলেট যুব সংঘের সভাপতি আরমান উদ্দিন স্বপন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ আহমেদ আরেফিন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ জাকারিয়া, প্রচার সম্পাদক মিনহাজ হোসেন, ক্রীড়া সম্পাদক নুরুল হোসাইন মুন্না সহ আরো অনেকে।
সভাপতি অলি উদ্দিন শামীম বলেন, ১১ অক্টোবর ২০২০ সিলেটে রায়হান আহমেদ নামে একটি যুবককে মাত্র ১০ হাজার টাকার জন্যে রাতভর পিটিয়ে হত্যা করেছে পুলিশ। যেটা মানবজাতির জন্য একটি জঘণ্য নিষ্ঠুর অপরাধ। এ ধরণের অপরাধ দিনদিন বাংলাদেশ বেড়েই চলেছে তাতে সাধারণ জনগণ চিন্তিত ও হতাশ। সিলেট বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (বরখাস্ত) এস আই আকবরের হাতে জীবন্ত মানুষকে হৃদয় বিদারক, নৃশংসভাবে হত্যার এই খবরে দেশে ও প্রবাসে সকলেই যেন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। জালালাবাদ এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দের আলোচনায় একটি প্রশ্ন এসেছে- তাহলে দেশে কি আইন-কানুন নেই? দুর্বল আইন খুনিদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়? তাহলে কেন দিন দিন আইন রক্ষাকারীদের হাতে মানুষ হত্যার শিকার হচ্ছে? যারা জনগণকে রক্ষা করবে তারা এখন বক্ষক হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি স্বাধীন দেশে এ ধরণের অন্যায় অবিচার মেনে নেয়া যায়না। বক্তারা বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিলেটের সন্তান, সিলেটবাসী আশা করে খুব শীঘ্রই আকবর কঠিন শাস্তি পাবে। আর ন্যায় বিচার পাবে হত্যাকারীর পরিবার। এখনও পর্যন্ত মূল আসামী ধরতে না পারায় জালালাবাদ এসোসিয়েশন ইতালির নেতৃবৃন্দ হতাশা প্রকাশ করেন।
বক্তারা আরও বলেন- বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস দমনে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন এবং তিনি তা বাস্তবায়ণের লক্ষে কাজও করে যাচ্ছেন। তারপরেও রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত ব্যক্তিরা সবসময় পার পেয়ে যায়, যা সমাজ এবং দেশের জন্য অনেক ক্ষতিকর। রায়হান হত্যা মামলার কয়েকজন আসামিকে গ্রেফতার করা হলেও মূল আসামী এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। উপস্থিত বক্তারা আশা করেন অতিদ্রুত আকবরকে গ্রেফতার করে কঠিন শাস্তির আওতায় আনা হবে।
বক্তারা বলেন, রায়হান হত্যার মূল আসামী গ্রেফতার না হলে ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জালালাবাদ এস্যোসিয়েশন ও বৃহত্তর সিলেটবাসীর পক্ষ থেকে বিশাল আকারে প্রতিবাদ করার অঙ্গীকার করছেন।
সাধারণ সম্পাদক শাব্বির আহমেদ বলেন- আমরা প্রবাসীরা দেশের কল্যাণ ও দেশের মানুষের সুখে-দুঃখে সব সময়ই পাশে থাকি। রায়হানকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, এই হত্যাকারীকে বিচারের আওতায় না নিয়ে আসা পর্যন্ত আমরা প্রবাসীরা শান্ত থাকবো না। সেই সঙ্গে প্রধান আসামি আকবরকে ফেরারী ঘোষণা করারও দাবী জানান। তিনি আরো বলেন, এই জালালাবাদ এসোসিয়েশন সব সময়ই সিলেটের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের অংশীদার যেমন ছিল তেমনইভাবে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ও সামাজিক অবক্ষয়গুলোকে দূর করার জন্যও কাজ করে যাবে।
উল্লেখ্য, জালালাবাদ এসোসিয়েশন ইতালি সিলেটে রাজন হত্যাকান্ডের সময়ও বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিল। আসামী গ্রেফতার বিষয়ে, একই সঙ্গে খাদিজার ঘটনায় তার পরিবারের পাশে এসে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। সর্বশেষ সিলেটের এম সি কলেজে গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনা ও রায়হান হত্যার প্রতিবাদে বিশ্বের সকল জালালাবাদ এসোসিয়েশন ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় নিজেদের অবস্থান, করণীয় ও মতামত প্রকাশ করছে।