মো: মোস্তফা কামাল মিন্টু
গানকে তিনি ভালোবাসেন, তার নিজস্ব সত্ত্বা জুড়ে আছে গানের মোহিত নির্যাস। সেজন্যই তো ছোটবেলা থেকে গানকে ভালোবেসেছেন বলে প্রবাস জীবনেও আকড়ে ধরে আছেন বাংলা গানকে, বাংলা সংস্কৃতিকে। বলছিলাম অস্ট্রেলিয়ার সিডনি প্রবাসী জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী অমিয়া মতিনের কথা। সম্প্রতি এক সন্ধ্যায় প্রবাস মেলা কার্যালয়ে এসেছিলেন গুণী এই শিল্পী। গানের জগতে তার বিচরণ নিয়ে কথা বলেছেন প্রবাস মেলা’র সাথে। সেসবের চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।
অমিয়া মতিন মূলত নজরুল ও ক্লাসিক্যাল গান গেয়ে থাকেন। ১৯৯৫ সালে তার প্রথম গানের অ্যালবাম ‘যেতে যেতে কিছু কথা’ সঙ্গীতা থেকে বের হয়েছিল। এরপর থেকে তার আরও জনপ্রিয় একক এবং যৌথ অ্যালবাম বের হয়েছে।
বাংলা গানকে অমিয়া মতিন ভালোবেসেছেন মনের গভীর থেকে। তাইতো দীর্ঘ প্রবাস জীবনেও তিনি বাংলা গানের চর্চা করেই যাচ্ছেন। প্রবাসে ব্যবসা, পারিবারিক কাজ সামলিয়ে নতুন নতুন গানের অডিও এবং ভিডিও অ্যালবাম বের করে চমক দেখিয়েই যাচ্ছেন। জায়গা করে নিয়েছেন শ্রোতাদের হৃদয়ের মণি কোঠায়। এখন পর্যন্ত তার ১৪ টি অডিও এবং ভিডিও অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে।
তার প্রথম অডিও অ্যালবাম ১৯৯৫ সালে পুরনো দিনের মর্ডান বাংলা গানের ‘যেতে যেতে কিছু কথা’ সঙ্গীতা থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। এরপর একে একে বাসু দেব ঘোষের সুরে ‘যেতে হবে কতদূর’, শেখ সাদী খানের সুর ও সঙ্গীতে ‘মেঘ জমলেই বৃষ্টি হবে’, হারানো দিনের বাংলা গান এর ‘এ রাতের এই গান’, অ্যালবামে অমিয়ার সাথে কণ্ঠ দিয়েছেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দী। শেখ সাদী খান’র সুর ও সঙ্গীত পরিচালনায় ‘অন্তবিহীন রাত্রি’, ‘কে প্রথম কাছে এসেছি’ অ্যালবামটিতে অমিয়া মতিনের সঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছেন সাদি মহম্মদ। এছাড়া রয়েছে বাসু দেব ঘোষের ‘স্বরলিপি’, আবু হেনা মোস্তাফা কামালের ‘জানিনা কেন যে ভালো লাগে’ ইত্যাদি।
ছোটবেলাতেই অমিয়া মতিনের গানের জগতে পথচলা শুরু। ৭ বছর থেকেই তিনি গান শেখা শুরু করেন। ছায়ানটের শিক্ষক সুমন চৌধুরীর কাছ থেকে নজরুল গীতি ও ক্ল্যাসিকেল গানের তালিম নিয়েছেন।
এক সাক্ষাতকারে অমিয়া মতিন সম্পর্কে বিশিষ্ট সুরকার শেখ সাদী খান বলেছিলেন, অমিয়া’র কণ্ঠে যেকোন ধরনের গান গাওয়ায় উপযুক্ত। কারণ তিনি সুরকে কণ্ঠে ধারণ করতে পারেন।
অনেক ধরণের গান করলেও অমিয়া মূলত নজরুলসঙ্গীত এবং ক্ল্যাসিক্যাল গানেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তিনি বলেন, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর গানগুলো আমাকে নানাভাবে আন্দোলিত করে, উৎসাহ পাই। তাছাড়া তার গানগুলো ব্যাপক বৈচিত্র্যপূর্ণও বটে। দীর্ঘ গানের জগতে শ্রোতাদের কেমন ভালোবাসা পেয়েছেন তার জবাবে অমিয়া বলেন, শ্রোতাদের ভালোবাসাই একজন শিল্পীর বড় অর্জন। শ্রোতারাই আমার গানের প্রাণ, তাদের ভালোবাসা না থাকলে আমি এতদূর আসতে পারতাম না। তাদের ভালোবাসাই আমাকে এগিয়ে চলতে সাহস যোগায়।
এক প্রশ্নের জবাবে গুণী এই শিল্পী জানান, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি সহ বিভন্ন অঙ্গরাজ্যে তিনি নিয়মিত গান করেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিজয় দিবস, পহেলা বৈশাখ, বইমেলা, স্বাধীনতা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারিসহ সকল অনুষ্ঠানগুলোতে তিনি পারফর্ম করেন। প্রবাসে দেশিয় সংস্কৃতি চর্চা করা এবং সবার মাঝে বাংলা গান গাওয়া অনেক আনন্দের বিষয় বলে অমিয়া মতিন জানান।
এছাড়াও তিনি যখনই দেশে আসেন বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল, পত্রিকা হাউজ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়ে তাকে ব্যস্ত থাকতে হয়। দেশে থাকতেও অমিয়া বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং রেডিওতে নিয়মিত গান করতেন।
অমিয়া সংস্কৃতিপ্রিয় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং শিশুকাল থেকেই তিনি গানের পরিবেশে বেড়ে ওঠেন। ছোটবেলাতেই গানের প্রতি তার প্রবল আগ্রহ ছিল, যা দেখে তার মা তাকে ধানমন্ডিতে ‘কলিম শরাফী সংগীত ভবনে ‘নজরুল পরিষদ মিউজিক স্কুল’, থেকে ক্ল্যাসিকেল এবং নজরুল সংগীতের উপর গান শিখিয়েছেন। তিনি এনায়েত উল্লাহ খান, মফিজ উদ্দিন, ইয়াকুব আলী খান, সুমন চৌধুরী, বরকত উল্লাহ এবং ফাতেমা তুজ জোহরা থেকেও গানের তালিম নিয়েছেন।
জীবনের এ পর্যায়ে আসতে আপনি কাদের অনুপ্রেরণা বা সহযোগিতা পেয়েছেন এর জবাবে অমিয়া জানান, ছোট থেকেই আমার মা এবং বাবা আমাকে গানের প্রতি অনুপ্রাণিত করেছেন, তিনি আমাকে গানের স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। এরপর বিয়ের পর থেকে আমার স্বামী প্রকৌশলী আব্দুল মতিন আমাকে সবমসময় অনুপ্রেরণা উৎসাহ এবং সর্বোপরি সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। বলতে পারেন আমার জীবনের এতটুকু আসার পিছনে আমার স্বামীর অবদান সবচেয়ে বেশি।
দেশের বাইরে অমিয়া ইউরোপের নরওয়ে, জার্মানি এবং আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে লাইভ ‘শো’ তে পারফর্ম করেন। তিনি বাংলা ছাড়াও ইংরেজি, হিন্দি, নরওয়েজিয়ান ভাষায় গান করতে পারেন। ১৯৯৬ সাল থেকে অমিয়া মতিন পরিবার সহ স্থায়ীভাবে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বসবাস করছেন।