হাকিকুল ইসলাম খোকন, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি: নিউইয়র্ক হতে প্রকাশিত বাংলা সাপ্তাহিক ঠিকানার ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ সংখ্যায় বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি কনস্যুলেটের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। প্রতিবেদনে যে সকল বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মিথ্যাচার।
যখন নিউইয়র্ক শহর করোনা প্রাদূর্ভাবের এপিসেন্টার ছিল এবং সম্পূর্ণ নিউইয়র্ক শহর লকডাউনের আওতায় ছিল, তখনও কনস্যুলেট সার্বক্ষণিক ২টি হটলাইন (২৪/৭), ইমেইল ও Trackable Postal Service এর মাধ্যমে এবং জরুরী প্রয়োজনে স্বশরীরে উপস্থিতির মাধ্যমে কনস্যুলার ও কল্যাণ সেবা অব্যাহত রেখেছিল। ৬ জুন ২০২০ হতে নিউইয়র্কে লকডাউন প্রত্যাহার করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের Centers for Disease Control and Prevention (CDC) এবং নিউইয়র্কস্থ স্থানীয় সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মেনে Trackable Postal Service এর পাশাপাশি এ্যাপয়েন্টমেন্টের ভিত্তিতে পরস্পর হতে ৬ ফুট দুরত্ব বজায় রেখে স্বশরীরে সেবা চালু করা হয়। বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন স্বশরীরে দেড় শতাধিক এবং ডাকযোগে দেড় শতাধিক মোট তিন শতাধিক সেবা প্রার্থীকে সেবা প্রদান করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ২০২০ সালে ১০,৩৯০টি পাসপোর্টের আবেদন গৃহীত হয়েছে এবং ২০২০ সালের মধ্যেই ৯,৬২৯টি পাসপোর্ট ডেলিভারী দেয়া হয়েছে। ২০২০ সালে পাসেপোর্ট সেবার সংখ্যা ২০১৯ সালের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ বেশি। ২০২০ সালে করোনা মহামারীর মধ্যেও ৭,১৪৪টি নো-ভিসা রিকোয়ার্ড (NRV) এবং ৮৮৫টি সত্যায়ন ইস্যু করা হয়েছে। এই পরিসংখ্যান প্রমাণ করে যে করোনাকালেও নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল সার্বিক কার্যক্রম পূর্ণদ্যোমে অব্যাহত রেখেছে।
করোনাকালে কনস্যুলার সেবা প্রদানের পাশাপাশি হটলাইন স্থাপন, ডক্টরস পুল গঠনসহ নানাবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় যা কমিউনিটিতে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমেও তা প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে গমনেচ্ছু অপেক্ষমান প্রবাসীদের জন্য বিশেষ ফ্লাইট এর আয়োজনে বাংলাদেশ কনস্যুলেট সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করেছে।
উল্লিখিত সংবাদে আবেদনপত্র গায়েব হওয়ার তথাকথিত অভিযোগটি সঠিক নয়। উল্লেখ্য, পাসপোর্ট, নো-ভিসা, জন্মসনদসহ অন্যান্য সেবা গ্রহণের জন্য Trackable Postal Service এর মাধ্যমে প্রাপ্ত আবেদনসমূহ যদি অসম্পূর্ণ থাকে তৎক্ষনাত বিষয়টি সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীকে টেলিফোন/ ভয়েসমেইল/এসএমএস/ইমেইলযোগে অবহিত করা হয় এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সরবরাহের জন্য অনুরোধ করা হয়। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট প্রাপ্তি সাপেক্ষে দ্রুততার সাথে সংশ্লিষ্ট সেবা প্রদান করা হয়। কনস্যুলেটে গৃহীত প্রতিটি আবেদনপত্র, টেলিফোন কল, ইমেইল ইত্যাদি ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হয়। একটি অত্যন্ত স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জনবান্ধব পরিবেশে কনস্যুলেট সেবা প্রদান অব্যাহত রেখেছে।
ডিজিটাল পদ্ধতিতে বর্তমানে প্রচলিত Machine Readable Passport (MRP) প্রদানের ক্ষেত্রে পেমেন্ট ভেরিফিকেশন নিশ্চিত হলেই কেবলমাত্র পাসপোর্ট প্রিন্ট করা হয়। সুতরাং, পাসপোর্ট ফি বাবদ আদায়কৃত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা ব্যাতিরেকে পাসপোর্ট প্রদান করার বিষয়টি অবান্তর। পাসপোর্টসহ অন্যান্য সেবা হতে সংগৃহীত অর্থের স্বচ্ছতা নিশ্চিতকল্পে কোন ধরনের নগদ অর্থ/ব্যক্তিগত ব্যাংক চেক গ্রহণ করা হয় না। কনস্যুলার ফি বাবদ শুধুমাত্র The Consulate General of Bangladesh, New York শিরোনামে মানি অর্ডার/ব্যাংক সার্টিফাইড চেক গ্রহণ করা হয় এবং বিধিমোতাবেক নিয়মিতভাবে সংশ্লিষ্ট সরকারি ব্যাংক একাউন্টে জমা প্রদান করা হয়। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়মিতভাবে প্রেরণ করা হয়। সুতরাং, তথাকথিত আর্থিক অনিয়মের অভিযোগটিও ভিত্তিহীন।
কনস্যুলেটের সার্বিক কার্যক্রম পূর্ণদ্যোমে অব্যাহত রয়েছে এবং করোনা পূর্বকালীন সময়ের মতোই কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে চলেছেন। কাজেই, কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে সরিয়ে দেয়ার তথাকথিত অভিযোগটিও সঠিক নয়।
এই ভিত্তিহীন প্রতিবেদনটি প্রকাশের পূর্বে সাপ্তাহিক ঠিকানার নিউজ এডিটর পরিচয়ে সাংবাদিক শহীদুল ইসলাম, কনসাল জেনারেল এবং প্রথম সচিব (পাসপোর্ট এবং ভিসা উইং) এর সাথে যোগাযোগ করলে তাকে পাসপোর্টসহ অন্যান্য সেবা সংক্রান্ত আবেদন গ্রহণ এবং সেবা প্রদানের সার্বিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয় এবং তার তথাকথিত অভিযোগের ভিত্তি, সুনির্দিষ্ট তথ্য ও প্রমাণ চাওয়া হলে তিনি তা সরবরাহ করতে অস্বীকৃতি জানান।
বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল এই ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত প্রতিবেদনের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। একই সাথে সাপ্তাহিক ঠিকানা এ ধরণের উদ্দেশ্য প্রণোদিত, ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচার হতে বিরত থাকবে বলে আশা করছে।