আখি সীমা কাওসার, রোম, ইতালি : সাগরের পানিতে তীব্র ঢেউয়ের সাথে লাশ হয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে স্বপ্ন পুরনের সেই হতভাগা মানুষগুলো….।
আমরা হর হামেশাই শুনে থাকি অবৈধ অভিবাসীদের সাগর পথে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাতে। বিশেষ করে গত কয়েক বছর ধরেই লিবিয়া থেকে কয়েক লাখ বাংলাদেশি সহ অন্যান্য দেশের অভিবাসীরা ইতালি সহ ইউরোপের দেশগুলোতে ঢুকে পড়েছে। এখানে বেশীরভাগই ইতালিতে প্রবেশ করে থাকে। ইতালিয়ানসহ বিভিন্ন জনের প্রশ্ন কেন অন্যান্য দেশের তুলনায় অভিবাসীরা ইতালিতে বেশী প্রবেশ করতে পছন্দ করে ?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কথা বলি কয়েকটি এনজিও কর্মকর্তা ও পুলিশ এবং অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করে এমন দু একজনের সাথে, সবার উপরে যে কথাটা উঠে এসেছে তা হলো ইতালিতেই কেবল অবৈধভাবে নিশ্চিন্তে থাকা যায় । কঠিন কোন নিয়ম কানুন এই দেশটাতে নেই । অন্যান্য দেশে এমন নিশ্চিন্তে অবৈধভাবে থাকা মোটেও সহজ নয়। ইতালির পার্শ্ববর্তী দেশ সুইজারল্যান্ড, জার্মান. পোল্যান্ড বুলগারিয়া, ইতালির তুলনায় আইন কানুন একটু কঠিন হওয়াতে (ইতালির তুলনায়) অবৈধভাবে ইতালিকেই বেছে নেয় সবাই।
ইতিমধ্যে এক জরিপে এসেছে, প্রায় প্রতিবছরই ইতালিতে অবৈধদের সংখ্যা বাড়ছে । শংকিত এবং হতাশ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কর্মকর্তারা নানান রকম পদক্ষেপ নিয়েও বিশেষ করে সাগরপথে আসা অভিবাসীদের ইউরোপে আসা বন্ধ করতে পারছেনা। কেউ কেউ বলছে যদি (অভিবাসীরা যেসব দেশের) বিভিন্ন দেশের দূতাবাসগুলো আরো জোর প্রচারনা করে যে এইভাবে মৃত্যুকে হাতে নিয়ে অন্তত সাগর পথে নয় ইউরোপে যেন না যায় । গত সপ্তাহের এই মর্মান্তিক ঘটনা শুধুমাত্র দালালদের খপ্পরে পড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি জমানোর বড় বেশি মূল্য দিতে হলো তাজা ৩৫ টা প্রাণের । মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা এক বাংলাদেশির কাছে জানা গেল, গত সপ্তাহে প্রায় ৭০ জনের মত বাংলাদেশি সহ ৫০০ যাত্রী নিয়ে নিখোঁজ হয় লিবিয়া থেকে ছেড়ে যাওয়া চারটি ট্রলার। এর মধ্যে একটি ট্রলার দুই দিন পর লিবিয়ার উপকূলে ফেরত গেলে ৩৫ বাংলাদেশিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। পরে বিশ বাংলাদেশির সলিল সমাধি হলেও বাকী ১৫জন কূলে এসে প্রাণ হারিয়েছে।
জানাগেছে নিহতদের মধ্যে সিলেট মৌলভীবাজারের বড়লেখা চান্দ গ্রামের ফারুক হোসেন ও বিয়ানিবাজার পৌরসভার ইমন নামের এই দুইজনের পরিচয় নিশ্চিত করেছে। এ ব্যাপারে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম সচিব আশরাফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তবে তিনি এর বেশি কিছুই বলতে চাননি। কিন্ত কেন ? সেখানকার দূতাবাসের ভুমিকা নিয়ে আগেও অনেকবার প্রশ্ন উঠছে। এখন প্রাণে বেঁচে যাওয়া বাংলাদেশিরা চাচ্ছে যেন তাদেরকে কোন হয়রানি না করে। দেশে ফেরত পাঠানো হয়। এবং এও তারা দাবি করেন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যেন বাংলাদেশের দালালদের ধরে কঠিন শাস্তি প্রদান করে।
গত আগস্ট ২০১৭ এক জরিপে দেখা গেছে, আফ্রিকার নারী পুরুষরা সবচেয়ে বেশী এমন ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা করেন বর্তমানে বাংলাদেশিদের মধ্যে এমন ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রার প্রবল ইচ্ছা প্রকট হচ্ছে বলে জানা গেছে। লিবিয়াতে বাংলাদেশ দূতাবাসকে আরো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট না হয়, এধরনের কার্যকলাপ আর না ঘটে। বাংলাদেশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যেন পদক্ষেপ নেন লিবিয়া হযে কোন দালালের মাধ্যমে আর যেন বাংলাদেশের অভিবাসীরা সাগরপথে পাড়ি দিয়ে জীবনের অবসান না ঘতাতে পারে।