প্রবাস মেলা ডেস্ক: সংস্কৃতি, সংগ্রাম, আদর্শে সাহিত্যের বাচিক চর্চা ও প্রসার প্রতিষ্ঠান ‘কণ্ঠশীলন’ চল্লিশ বছরে পদার্পণ করেছে। রবীন্দ্রসাধক, শিক্ষাগুরু ওয়াহিদুল হকের দেওয়া নাম গ্রহণ করে ১৩৯১ সালের ২রা বৈশাখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে ‘বাক্সময় উচ্চার-চর্চা কেন্দ্র’ নামে কণ্ঠশীলনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সময়ের পরিক্রমায় ‘প্রমিত উচ্চারণ, বানান ও আবৃত্তি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান’ এবং ‘সাহিত্যের বাচিক চর্চা ও প্রসার প্রতিষ্ঠান’ নামে পরিচিতি পায় কণ্ঠশীলন।

গতকাল বিকাল ৪টায় ঢাকার পরীবাগে সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রের ড. আসমা চৌধুরী মিলনায়তনে কণ্ঠশীলনের ৪০ বছর উদযাপনের অংশ হিসেবে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হয় ‘কবিতায় সারাবেলা এবং রবীন্দ্রনাথ’ শিরোনামে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চিকিৎসা বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ, গবেষক অধ্যাপক ড. লিয়াকত আলী। স্বাগত বক্তব্য দেন কণ্ঠশীলন সভাপতি গোলাম সারোয়ার। অনুষ্ঠানে ১৩জন আবৃত্তিশিল্পী কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৮টি কবিতা আবৃত্তি করেন। আবৃত্তিশিল্পীরা হলেন, মো: জাহিদ হোসেন শোয়েব, আইভী ভূঁইয়া, উৎপল বর্ণা চৌধুরী, তানজিনা খান, মারিয়া কিবতিয়া, বাদল সাহা শোভন, আফরিন খান, নাহিদা আখতার লোপা, কাজী সিরাজুম মুনীরা যূঁথী, হোমায়রা আহমেদ, নুরে জিনাত আরা, মালা ভৌমিক ও মিনহাজুল বশির শোভন। আলোচনা করেন, রইস উল ইসলাম, মোস্তফা কামাল, বিলকিস আহমেদ ও লিটন বারুরী। সঞ্চালনায় ছিলেন, জে.এম মারুফ সিদ্দিকী ও শিরিন সুলতানা মিথিলা। কণ্ঠশীলন অধ্যক্ষ মীর বরকতের বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে। সারা বছরের আয়োজনে থাকছে একক আবৃত্তি, আবৃত্তি প্রযোজনা, সেমিনার, মঞ্চনাটক এবং শেষ হবে ৩দিন ব্যাপী ওয়াহিদুল হক স্মারণিক মিলনোৎসবের মাধ্যমে।

সংগঠনের জন্মলগ্ন থেকে বিভিন্ন সময়ে, ভিন্ন ভিন্ন ধাপে কণ্ঠশীলনের কাজে যুক্ত থেকে এই প্রতিষ্ঠানকে যোগ্য মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছেন, উদ্ভাসিত করেছেন বাংলা সাহিত্যের সেরা কয়েকজন মানুষ, দেশের সেরা চিন্তাবিদ- যাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাক্শিল্পী অধ্যাপক নরেন বিশ্বাস, পটুয়া কামরুল হাসান, সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, কবি শামসুর রাহমান, কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক শওকত আলী, শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী প্রমুখ।
সুন্দরভাবে কথা বলার আধুনিক শিক্ষা ও চর্চার ব্রত নিয়ে যে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয় চার দশক আগে, তা আজ বাংলা ভাষা চর্চার এক পিঠস্থানে পরিণত হয়েছে। নিরবচ্ছিন্নভাবে এই দীর্ঘ সময় ধরে মাতৃভাষা’র প্রমিতরূপ, আঞ্চলিকরূপ, তার যথাযথ উচ্চারণ, বানান ও আবৃত্তি শিক্ষার কোর্স পরিচালনা করলেও কণ্ঠশীলন সাকুল্যে মানুষ গড়ার এক মানবিক স্থান বলে চিহ্নিত করতে পেরেছে নিজেদের। ‘কণ্ঠশীলন’ বাঙালি সংস্কৃতি চর্চা ও প্রসারে যেমন আবৃত্তি, ছড়া নিয়ে কাজ করছে, তেমনি মঞ্চনাটকেও সেই সুনাম অক্ষুন্ন রেখে চলেছে।

ফলস্বরূপ অন্য এক দিকের উন্মোচন ঘটাতে পেরেছে কণ্ঠশীলন। কোর্স উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীবৃন্দ আজ দেশের বিভিন্ন প্রচার ও গণমাধ্যমে দায়িত্বশীল পদে সম্পৃক্ত হয়ে নিজেদের যোগ্যতার সাক্ষর রাখছেন। এদেশের বাচিক শিল্পে নৈপুণ্য প্রদর্শন করে বাংলা ভাষা চর্চায় আদর্শ ভূমিকা রাখার প্রয়াস পাচ্ছেন।
কণ্ঠশীলন পরিচালিত প্রমিত উচ্চারণ, বানান ও আবৃত্তিশিক্ষার ১০৭তম আবর্তন শুরু হচ্ছে। আবর্তনের প্রশিক্ষক হিসেবে থাকবেন মীর বরকত, গোলাম সারোয়ার, অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী, ড. সৌমিত্র শেখর, ড. আইরিন পারভীন লোপা, ড. তারিক মনজুর, ইলা রহমান ও নুরুজ্জামান নান্নু। আবেদনপত্র পাওয়া যাবে ১৫ই জুন ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের তিন তলায় ও কণ্ঠশীলন কার্যালয়, ৭৩/১ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকায়। অনলাইনেও আবেদন করা যাবে : www.school.kanthoshilon.org -তে।