হাকিকুল ইসলাম খোকন, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি: শেখ হাসিনা মঞ্চ যুক্তরাষ্ট্র এর যথাযোগ্য মর্যাদায় ও অত্যন্ত ভাবগম্ভীর পরিবেশে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস পালন করে। কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষিতে নিউইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী সামাজিক দূরত্ব মেনে ১৫ আগস্ট ২০২০, শনিবার স্থানীয় সময় বিকাল ৬টায় নিউইয়র্কের বাংঙ্গালি অধ্যাুষিত জ্যাকসন হাইটসে আয়োজন করা হয় জাতীয় শোক দিবসের এ অনুষ্ঠান।

এসময় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতেই জাতির পিতা ও বঙ্গমাতা এবং তাঁদের শহীদ পরিবারবর্গসহ ১৫ আগস্টের সকল শহীদদের বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। অত:পর ১৫ আগস্টের শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের পর জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেন উপস্থিত সবাই। আলোচনা সভায় বক্তাগণ বলেন, বিশ্বব্যাপী জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের প্রাক্কালে এবারের জাতীয় শোক দিবসের এই অনুষ্ঠান বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। বক্তারা আরোও বলেন, জাতির পিতার সংগ্রাম ও ত্যাগ বিশ্বমানবতাকে সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পথ দেখাবে।

১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রথমবারের মতো দেওয়া জাতির পিতা বাংলায় ভাষণের উদাহরণ টেনে বক্তাগণ বলেন, “আজ পৃথিবীর সকল দেশ এজেন্ডা ২০৩০ এর ১৭টি অভীষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়ণের জন্য কাজ করছে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণে আমরা এর অধিকাংশের কথাই খুঁজে পাই”। তারা আরও বলেন, আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মে দেওয়া জাতির পিতার সেই ভাষণে শিক্ষা, সাম্যতা এবং সম্মানজনক জীবন ও জীবিকার কথা রয়েছে। জাতীয়তার সীমা পেরিয়ে আন্তর্জাতিকতাকে স্পর্শ করেছেন। তাঁর এই ভাষণে ফুটে উঠেছে বিশ্ব মানবতার আশা আকাঙ্খা। তিনি শান্তির কথা বলেছেন, মানুষের মুক্তির কথা বলেছেন, বহুপাক্ষিকতার কথা বলেছেন, উন্নত বিশ্ব ব্যবস্থার কথা বলেছেন, মানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকারের কথা বলেছেন। এমন ভাষণ কেবল তাঁর মতো একজন বিশ্বনেতার পক্ষেই দেওয়া সম্ভব।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের প্রেক্ষাপটসহ জাতির পিতার জীবন ও কর্ম তুলে ধরেন বক্তাগণ । প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের উদ্দেশ্যে তারা বলেন, “জাতির পিতার এ আদর্শ ও দেশপ্রেমের নিরন্তর অনুশীলন প্রয়োজন। জাতির পিতার অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, মুজিব গ্রাফিক্স নোবেল আজ বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রামাণ্য দলিলে পরিণত হয়েছে। এসকল বই পড়তে নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করতে হবে। প্রতিনিয়ত জাতির পিতার জীবন ও আদর্শ চর্চার মাধ্যমেই গড়ে উঠবে দেশপ্রেমিক, উন্নত চিন্তার নতুন প্রজন্ম”।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রূপকল্প ২০২১, রূপকল্প ২০৪১ এবং ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০ বাস্তবায়ণে সকলকে আরও নিবেদিত হওয়ার আহ্বান জানান বক্তাগণ। তারা বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা গড়ে তুলব জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা। জাতীয় শোক দিবসে এটাই হোক আমাদের অংঙ্গীকার”।
বক্তব্যের পাশাপাশি ১৫ আগস্টের স্মরণে কবিতা পাঠ করা হয়। ১৫ আগস্টের এই শোককে শক্তিতে রূপান্তর করার মাধ্যমে জাতির পিতা যে স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন স্ব-স্ব অবস্থান থেকে তা অর্জনের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন আলোচকগণ। শোক সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি জালাল উদ্দিন জলিল। শুভেচেছা বক্তব্যে রাখেন সাধারণ সম্পাদক কায়কোবাদ খান।
আলোচনা সভা পরিচালনা করেন জাতীয় শোক দিবস উদযাপন কমিটির আহবায়ক আসাফ মাসুক এবং সদস্য সচিব দেলোয়ার হোসেন মোল্লা। শোক সভার সার্বিক তত্বাবধানে ছিলেন মুকতিযোদ্ধা গোলাম কুদ্দুস ও সহ-সভাপতি আতাউর রহমান তালুকদার কামাল। অতিথিদের মাঝে আলোচনায় অংশ নেন মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তুফা খান মিরাজ, মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাসুদুল হাসান, সংগঠনের চীফ করডিনেটর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম কুদ্দুস, মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হোসেইন, মুক্তিযোদ্ধা শওকত আকবর রিচি, মুক্তিযোদ্ধা খুরশিদ আনোয়ার বাবলু, মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান চেীধুরী, মুক্তিযোদ্ধা সাঈদুর রহমান সাঈদ, মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল খান আমসারী, সংগঠনের ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা সিনিয়র সাংবাদিক হাকিকুল ইসলাম খোকন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের দফতর সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মোহামমদ আলী সিদ্দিকী, আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট শাহ মোহাম্মদ বখতিয়ার, আওয়ামীলীগ নেতা শরীফ কামরুল আলম হিরা, সংগঠনের উপদেষ্টা মোহাম্মদ আখতার হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন, শাহ শহিদুল হক সাঈদ, যুক্তরাষ্ট্র মহিলা আওয়ামীলীগ সভাপতি অধ্যাপক মমতাজ শাহনাজ, যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিকলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মনজুর চেীধুরী, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লস্কর মইজুর রহমান জুয়েল। এছাড়াও শোক দিবসের আলোচনায় অংশ নেন সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি টি মোল্লা, সহ সভাপতি শামসুল আলম, সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মিজানুল হাসান, সহ-সভাপতি নাদের আলী মাষ্টার, সহ-সভাপতি খসরুস আলম, সহ-সভাপতি হারুন অর রশীদ, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা নুরে আজম বাবু, আতাউর রহমান, বিলকিস মোল্লা, আতাউর রহমান তালুকদার ও শারমিন তালুকদার। শেখ হাসিনা মঞ্চের সিনিয়র সহ-সভাপতি টি মোল্লা বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন এবং সহ-সভাপতি আবুল কাশেম ভুইয়া কোরআন তেলোয়াত করেন। শোক সভা শেষে উপস্থিত সবার মাঝে তবারোক বিতরণ করা হয়।