হাকিকুল ইসলাম খোকন, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি: সংঘাত থেকে মানুষকে রক্ষা এবং মহামারির মতো অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে শান্তিরক্ষীদের অমূল্য অবদানের স্বীকৃতি জানিয়ে তাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। জাতিসংঘ সদরদপ্তরে চলমান ৭৫তম সাধারণ পরিষদের চতুর্থ কমিটির সাধারণ বিতর্কে প্রদত্ত বক্তব্যে আজ এ কথা বলেন তিনি।
বিদ্যমান ঝুঁকি এবং মহামারির মতো অপ্রত্যাশিত জরুরি পরিস্থিতিসহ শান্তিরক্ষীগণ প্রতিনিয়ত যে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত ফাতিমা। মাঠ পর্যায়ে শান্তিরক্ষীদের সুরক্ষার জন্য জাতিসংঘ গৃহীত ‘অ্যাডাপ্ট এন্ড অ্যাডজাস্ট’ শীর্ষক পদক্ষেপটির প্রশংসা করেন তিনি।
টেকসই শান্তি নিশ্চিত এবং ‘শান্তিরক্ষা কার্যক্রম’কে সাবলিল গতিতে শান্তিবিনির্মাণ কার্যক্রমে উন্নীত করতে মাঠপর্যায়সহ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের উচ্চতর পদসমূহে নারী শান্তিরক্ষীদের পদায়ন আরও বৃদ্ধি করার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা।
ইসরাইল কর্তৃক ফিলিস্তিনী জনগণের মানবাধিকার লঙ্ঘন, এ দায় থেকে পার পেয়ে যাওয়া এবং নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশনসহ আন্তর্জাতিক আইনের অব্যাহত লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা জানান বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি। পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে দ্বি-রাষ্ট্র কাঠামোর আওতায় স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ফিলিস্তিনী জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার রক্ষার প্রতি অকুন্ঠ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা। বহুবছর ধরে চলমান “নিকট পূর্ব এশিয়ায় ফিলিস্তিনী উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ ও সেবা সংস্থা (উনুরুয়া)” -এর তহবিল সঙ্কটের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। এ সমস্যা সমাধানে আরও অধিক উদারতা নিয়ে সম্ভাব্য তহবিলের জোগান এবং কারিগরি সহায়তা প্রদান করে উনুরুয়া’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সদস্য দেশসমূহের প্রতি আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত ফাতিমা। উল্লেখ্য বাংলাদেশ নিয়মিতভাবে উনুরুয়াতে স্বেচ্ছা-অনুদান প্রদান করে যাচ্ছে।
কোভিড-১৯ মধ্যেও জাতিসংঘের বিশেষ রাজনৈতিক মিশনসমূহ তাদের কর্মকান্ড চালিয়ে যাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি। তবে, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের উপর নৃশংসতার মূল কারণ খুঁজে বের করে তা সমাধান করা এবং রোহিঙ্গাদের নিজ বাসভূমি মিয়ানমারে টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে দেশটিতে নিযুক্ত জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতের বৃহত্তর ও শক্তিশালী প্রচেষ্টা গ্রহণের প্রতি জোর দেন তিনি।
‘মহাকাশের শান্তিপূর্ণ ব্যবহার বিষয়ক কমিটি (কোপিউয়াস)’ এর আওতায় গৃহীত ‘স্পেস-২০৩০’ এজেন্ডাটির প্রশংসা করেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা। মহাকাশে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ এর কথা উল্লেখ করে তিনি মহাকাশ-প্রযুক্তি ও এতদসংশ্লিষ্ট প্রয়োগিক বিষয়সমূহে সক্ষমতা বিনির্মাণে বাংলাদেশের বিশেষ প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।
উপনিবেশ ও বিদেশী দখলদারিত্বের অধীনে থাকা মানুষদের পূর্ণ আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার বাস্তবায়নের উপর জোর দেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা। উপনিবেশবাদ বিলোপ, ফিলিস্তিনী প্রশ্ন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা, বিশেষ রাজনৈতিক মিশন ও মহাকাশের শান্তিপূর্ণ ব্যবহারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয়াবলী নিয়ে সাধারণ পরিষদের চতুর্থ কমিটি কাজ করে থাকে। জাতিসংঘের সকল সদস্যরাষ্ট্র, পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনসমূহ চতুর্থ কমিটির এই সভায় অংশ গ্রহণ করে।