সম্পাদকীয়:
ভূমধ্যসাগর হয়ে নৌকায় চেপে অবৈধ উপায়ে ইউরোপে পাড়ি জমানোর প্রচেষ্টা চালাতে গিয়ে প্রতিবছরই শত শত অভিবাসন প্রত্যাশীর প্রাণহানি হচ্ছে। তবুও অবৈধভাবে বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা থামছেই না। সম্প্রতি বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ঘটনায় ১৭ বাংলাদেশিকে উদ্ধার করা হয়েছে। লিবিয়া থেকে অবৈধপথে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে তাঁরা ইতালি যাচ্ছিলেন। ইতালি কর্তৃপক্ষ তাঁদের উদ্ধার করে উপকূলে নিয়েছে। বিপজ্জনক এ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে গত কয়েক বছরে প্রাণ হারিয়েছেন ১৪ হাজারের বেশি মানুষ। ইউএনএইচসিআরের তথ্য বলছে, ২০২০ সাল থেকে ২০২১ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেড় বছরে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে আটক হয়েছেন অন্তত সাড়ে পাঁচ হাজার বাংলাদেশি।
আবার দু’সপ্তাহ আগে তিউনিসিয়ার উপকূলে অভিবাসন প্রত্যাশীদের নিয়ে একটি নৌকা ডুবে গেছে। এতে শিশুসহ অন্তত ৩৪ জন নিখোঁজ রয়েছেন। দেশটির কর্তৃপক্ষের ধারণা, অভিবাসন প্রত্যাশীদের নিয়ে নৌকাটি ভূমধ্যসাগরে পেরিয়ে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করছিল। এ নিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে তিউনিসিয়ার উপকূলে অভিবাসন প্রত্যাশীদের বহনকারী ৫টি নৌকা ডুবে যাওয়ার ঘটনা ঘটল। নৌকা ডুবির এসব ঘটনায় প্রাণ গেছে ৭ জনের। এখনো নিখোঁজ অন্তত ৬৭ জন। তিউনিসিয়ার কোস্টগার্ড জানিয়েছে, দেশটির উপকূল থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে ইউরোপগামী ৫৬টি নৌকা আটকে দেওয়া হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপে যেতে ইচ্ছুক অভিবাসন প্রত্যাশীদের কাছে ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী তিউনিসিয়া এবং লিবিয়া অন্যতম একটি কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ইতালিতে প্রবেশ করা অন্তত ১২ হাজার অভিবাসন প্রত্যাশী তিউনিসিয়া বা লিবিয়া থেকে এসেছেন। গত বছরের একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল মাত্র ১ হাজার ৩০০। গত ১৩ মার্চ আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে প্রায় ১৭ হাজার অভিবাসন প্রত্যাশী ইতালিতে পৌঁছেছেন। আগের বছরের একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল ৬ হাজার। এসব অভিবাসন প্রত্যাশীদের মধ্যে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি রয়েছেন যারা মূলত মানব পাচারের শিকার।
মানব পাচারের মতো জঘন্য অপরাধ দমনের জন্য প্রচলিত আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃতুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে, তবুও মানব পাচার থামছে না কেন? বিশেষজ্ঞরা মনে করেন পাচারকারীদের শাস্তি নিশ্চিত হলেই মানব পাচার অনেকাংশে কমে যাবে। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। জাতীয় পর্যায়ে মানব পাচারের বিরুদ্ধে সভা, সমাবেশ, সেমিনারের মাধ্যমে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী।
সংযমের মাস পবিত্র মাহে রমজান। এক মাস রোজা রাখার পর আসে পবিত্র ঈদুল ফিতর। এ উপলক্ষে সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ্য থাকবেন।