প্রবাস মেলা ডেস্ক: শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার আঘাতে বিপর্যস্ত লিবিয়া। বন্যার সাতদিন পরও দেরনা উপকূলে ভেসে আসছে মরদেহ। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লাশের গন্ধে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ডায়রিয়া, পানিশূন্যতা এবং অপুষ্টির ঝুঁকি বাড়ছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেরনা শহরে এখন কেবলই লাশের গন্ধ। মরদেহ, মৃত প্রাণী, আবর্জনায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। লাশের গন্ধে টেকা দায়। সুনামির মতো আকস্মিক বন্যা লিবিয়ার উপকূলীয় শহর দেরনাকে বিধ্বস্ত করার এক সপ্তাহ পরও মিলছে মরদেহ। তবে সাতদিন চলে যাওয়ায় পানিতে ভেসে আসা কিংবা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকা মরদেহের অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে গেছে যে পরিচয় শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ছে। তারপরও হন্যে হয়ে স্বজনদের খুঁজছেন যারা বেঁচে আছেন। তবে ভাগ্যের জোরে বন্যার হাত থেকে যারা বেঁচে গেছেন তাদের জীবনের সবকিছুই ওলটপালট হয়ে গেছে।
দেরনা শহরে অন্তত ৩০ হজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ডায়রিয়া, পানিশূন্যতা এবং অপুষ্টির ঝুঁকি বাড়ছে । বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য, আশ্রয় এবং মৌলিক জিনিসের সরবরাহ জরুরি হয়ে পড়েছে। শহরের প্রতিটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় দেরনার ৩০ শতাংশ অঞ্চল একদম নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। যারা আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে।
দেরনার এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘আমার ভাইয়ের ছেলে আমাদের উদ্ধার করতে এসেছিল, কিন্তু সে পানিতে ডুবে মারা গেছে। আমি আমার মা এবং বোনকে বাঁচাতে পেরেছি। তবে আমার ভাই, ভাবি, তাদের তিন ছেলে-মেয়ে ভেসে গেছে। এমনকি তাদের লাশ পর্যন্ত খুঁজে পাইনি। সাগরের কাছে তাদের বাড়ি ছিল।’
লিবিয়ার জন্য জাতিসংঘ ৭ কোটি ডলারের বেশি সাহায্যের আবেদন শুরু করেছে। লিবিয়ায় যেসব সাহায্য পাঠানো হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে: বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য, তাঁবু, কম্বল, হাইজিন কিট, ওষুধ এবং জরুরি অস্ত্রোপচারের সামগ্রী। পাশাপাশি ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করতে সাহায্য করার জন্য ভারি যন্ত্রপাতি এবং আরও বডি ব্যাগও পাঠানো হচ্ছে।
ফ্রান্স, ইরান, রাশিয়া, সৌদি আরব, তিউনিসিয়া, তুরস্ক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে জরুরি সহায়তা করা হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক কর্মকর্তারা বলছেন আরও অনেক সাহায্যের প্রয়োজন।
গত ১০ ডিসেম্বর আঘাত হানা শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েল ও বন্যার তাণ্ডবে লিবিয়ার দেরনা পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে যায়। দেরনাসহ দেশটির পূর্বাঞ্চলে ১১ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এখনো নিখোঁজ ১০ হাজারের বেশি।