লন্ডন, যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি: যন্ত্রদানব ইউরোপের যান্ত্রিক জীবনের একঘেঁয়েমি কাটাতে পারে পিকনিক। বাংলাদেশী সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংগ এটি । প্রবাসের নগর সভ্যতার শহুরে ব্যস্ত জীবনে স্বপরিবারে একটু আনন্দ ভাগাভাগি করতে খুলনাবাসীর উদ্যোগে হয়ে গেল জমজমাট ফ্যামিলি পিকনিক ২০১৯।পিকনিক মানেই আনন্দ উল্লাস আর ভালোলাগার মুহূর্তগুলি ভাগাভাগি করা।
গত ২৭ জুলাই আয়োজিত পিকনিকের গন্তব্য ছিল ইংলিশ চ্যানেলের কোলঘেঁষা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লালনভূমি বনমাউথ। বিনোদন ও পিকনিকের জন্য এক অসাধারণ সমুদ্র সৈকত এটি । সমগ্র ইউরোপের প্রখ্যাত কণ্ঠ শিল্পী মোহাম্মদ জীবন ,সবার পরিচিত মুখ গানের পাখী খ্যাত ডাক্তার শম্পা দেওয়ানের মনমাতানো গান ও আহমেদ আলীর ঢোলের তালে তালে যাত্রা পথে বাছের মধ্যে ভ্রমণের ক্লান্তি অনুভৱ করেনি কেউ। বড়দের সাথে ছোটরাও এসময় মেতে উঠেছিল সমান তালে।

দুটো বাসই এসে থামল বনমাউথ। যাত্রীদের মধ্যে রোমাঞ্চ বোধ হলো। লন্ডনে বৃষ্টি হলেও বনমাউথে বৃষ্টি নেই। আকাশ খানিকটা মেঘাচ্ছন্ন। কিন্তু তারই মধ্যে সূর্যমামা উঁকি-ঝুঁকি মারছে।
প্রধান সড়ক থেকে সমুদ্র সৈকত ৩০০/৪০০ গজ ভিতরে। পরিকল্পিত গ্রিডে সরু সরু আঁকাবাঁকা পথ গিয়ে মিশেছে সমুদ্র মোহনায়। রাস্তার দু’ ধারে শৃঙ্খলিত ফুল বাগান, সারি সারি গাছ লতাপাতা। ছবির মতো এসব সাজিয়ে রাখা হয়েছে ভ্রমণ-বিলাসীদের জন্য।
ইংলিশ চ্যানেল সম্পর্কে জীবনে অনেক পড়েছি, অনেক লিখেছি। আজ সেই ইংলিশ চ্যানেলের পাদদেশে দাঁড়ানো। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আঁচলটানা প্রকৃতির রানী বনমাউথের সমুদ্র সৈকত। দীর্ঘ সাত মাইল সৈকত জুড়ে সোনালি বালি আর বালি। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা একবার পানিতে নামছে আবার বালির ওপর দৌড়ঝাঁপ গড়াগড়িসহ আরও কত কিছু। অবারিত পানি রাশির মধ্যে কাছে ও দূরে নোঙ্গর করা সামরিক ও বেসামরিক জাহাজ। বয়ে যাচ্ছে ফুর ফুরে বাতাস। যে বাতাসে গরম নেই ঠাণ্ডাও নেই। সাপ্তাহিক ছুটির দিন ও হলিডে উপভোগ করতে বিশুদ্ধ বাতাসে একটু নিঃশ্বাস নিতে, একটু মুক্তবায়ু সেবন করতে গ্রেট ব্রিটেনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের শহুরে মানুষ ছুটে আসে এই নির্মল পরিবেশে।

বনমাউথ পৌঁছানোর পর পরই পরিবেশন করা হয় মজাদার দুপুরের গরম গরম খাবার। এরপর টানা ৩ ঘন্টা সবাই মিলে সমুদ্রের লোনা পানিতে সাঁতার কাটা, ইংলিশ চ্যানেলের বিশাল বিশাল ঢেউ এর মাঝে হারিয়ে যাওয়া, কান পেতে সমুদ্রের গর্জন সোনা, পায়ের নিচ থেকে শির শির করে বালু সরে যাওয়ার আনন্দে মেতে উঠেছিল অনেকে। এসময় সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন বালক নাহিদ নেওয়াজ রানাকে সাগর পাড়ের লাল বালুতে প্রায় একা একা ফুটবল খেলতে দেখা গেছে। সম্ভবত পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা দেশে থাকায় রানার মনটা ছিল বিষন্নতায় ভরা ।
বাংলাদেশের নতুন ধারার আবাসন শিল্প শাপলা সিটি লিঃ, ব্রিটেনের প্রভাবশালী ল ফার্ম লন্ডনিয়াম সলিসিটরর্স, সিকিউরিটি প্রোভাইডার আরএমএসএস ও লাস্ট মিনিট প্রিন্ট এর স্পন্সরে পিকনিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা থেকে আগত শাপলা সিটি লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ বদরুদোজ্জা।
এ ছাড়া দ্বায়িত্বশীলদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার কর্মী ব্যারিস্টার কানিজ ফাতেমা, লন্ডন ক্রিকেট লীগ (এলসিএল ) এর সভাপতি আবু সুফিয়ান ঝিলাম , Newslife24.com এর সম্পাদক শেখ মহিতুর রহমান বাবলু, ব্যারিস্টার ইমরুল হাসান, আইনজীবী জিএম আমিনুর রহমান, আইনজীবী ফয়সাল জামিল, সুলতানা আহমেদ শেখ, এসএম সিপার, এমদাদুল হক চঞ্চল,ইস্ট বেঙ্গল সোসালিস্ট পার্টি ইউকে’র সাধারণসম্পাদক ওয়াহিদুজ্জামান, আরিফা হোসাইন, বিএম ওবায়দুল হক আজমীর, শাহাদাত হোসাইন জয়, তালুকদার হোসাইন, কাইয়ুম হাসান স্বপন, রশিদ রনি প্রমুখ। পিকনিকের মিডিয়া পার্টনার ছিলেন Newslife24.com.
দুপুর গড়িয়া বিকাল। সমুদ্র স্নান শেষে সবাই ফিরে এলে শুরু হয় নানান প্রতিযোগিতা। মহিলা পুরুষ ও শিশু সঙ্গীরা এতে অংশ নেয় সবাই। অনুষ্ঠিত হয় র্যাফেল ড্র। বিজয়ীদের হাতে তুলে দেয়া হয় আকর্ষণীয় উপহার। এরপর আবারো গানে গানে মাতিয়ে তোলেন মোহাম্মদ জীবন, ডাক্তার শম্পা দেওয়ানের ও আহমেদ আলী।
বনমাউথের আকাশ সারাদিন ছিল মেঘাছন্ন। পড়ন্ত বিকালের মিষ্টি আলোতে শিল্পীরা পরিবেশন করছে একের পর এক মনমাতানো গান। এদলে এবার যোগ দেন আরেক সুরের রানী সিফাত আরা সিমি। এসময় সফর সঙ্গীদের সাথে বিদেশিরাও বাদ্যের তালে তালে নেচে চলেছে। কিন্তু বাঁধ সাধলো বেরসিক ব্যারিস্টার, পিকনিকের প্রধান উদ্যোক্তা কানিজ ফাতেমা। তিনি চিৎকার করে বলতে লাগলেন বন্ধ করেন গান বাজনা। এক্ষুনি ফিরতি বাসে উঠতে হবে। বাস কিন্তু গেল চলে। কিন্তু কে সোনে কার কথা।
এভাই চললো আরো কিছুক্ষণ। তারপর ইচ্ছার বিরুদ্ধে উঠতে হলো সবাইকে ।
স্মৃতির পটে লেপটে থাকা উজ্জ্বল সব মুহূর্ত মনের বীনায় বাজতে থাকলো ইংলিশ চ্যানেলের পানির ঢেউ এর এক একটা ঝাঁপটার মতো।