আখি সীমা কাওসার, রোম, ইতালি প্রতিনিধি: ইতালির রোম দূতাবাসের আয়োজনে যথাযথ মর্যাদা এবং ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের ৪৮তম বার্ষিকী উদযাপন করেছে। ২৬ মার্চ সকালে ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান সিকদার দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে, আগত রাজনৈতিক, বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী এবং শিশু কিশোরদের কন্ঠে জাতীয় সংগীত গেয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে দিনের কর্মসূচী শুরু করেন।
২৬ মার্চ সন্ধ্যায় তুসকোলনা একটি হল রুমে আলোচনা সভা ও জাকজমকপূর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ দূতাবাস। অনুষ্ঠানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে শিশু-কিশোরসহ বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশিরা অংশগ্রহণ করেন। লাল সবুজের পতাকায় তৈরি হয়েছিল বিদেশের মাটিতে ছোট এক টুকরো বাংলাদেশ ।
পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে সভা শুরু হয়। এরপর মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০১৯ উপলক্ষে প্রদত্ত মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণীসমূহ পাঠ করা হয়। দিবসটির তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা সভায় ইতালিস্থ বাংলাদেশি রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। এ সময় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ দূতাবাসের মান্যবর রাষ্ট্রদূত আব্দুস সোবহান সিকদার।
রোম দূতাবাসের প্রথম সচিব সুফিয়া আক্তারের পরিচালনায় ইউরোপ আওয়ামী লীগের নেতা কে এম লোকমান হোসেন, ইতালি আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাহাঙ্গীর ফরাজী, সাধারন সম্পাদক হাসান ইকবাল, মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান বক্তব্য রাখেন ।
মান্যবর রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান সিকদার তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে, যার অবিসংবাদিত নেতৃত্বে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। তিনি বিনম্র শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন মুক্তিযুদ্ধের সকল শহিদদের এবং সম্ভ্রমহারা মা-বোনদের। মান্যবর রাষ্ট্রদূত বলেন, বাঙালিরা তদানীন্তন পাকিস্তানের অধীনে রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে বৈষম্যের শিকার ছিলেন। এই বৈষম্য থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্তি প্রদানের জন্য বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে নয় মাস সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বিজয়ের মাধ্যমে আমরা রাজনৈতিক স্বাধীনতা লাভ করেছি । স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধু বাঙালিকে অর্থনৈতিক মুক্তি প্রদানের জন্য কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু অল্প সময়ে তিনি এ কাজ সমাপ্ত করতে পারেননি।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বর্তমানে বঙ্গন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে একটি সুখী-সমৃদ্ধ দেশ নির্মাণে কাজ করে যাচ্ছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণেই বাংলাদেশ এখন একটি মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হয়েছে এবং ২০৪১ সালে মধ্যে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। এক্ষেত্রে সকল প্রবাসী বাংলাদেশীদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত।
অন্যান্য বক্তারাও কৃতজ্ঞতার সাথে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে
স্মরণ করেন, যাঁর নেতৃত্বে বাঙালি পেয়েছে এক স্বাধীন বাংলাদেশ। তারা বলেন, প্রবাসে বেড়ে উঠা শিশু-কিশোরদের বাংলাদেশের ইতিহাস এবং সমৃদ্ধ কৃষ্টি-সংস্কৃতি বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া ও চর্চায় উৎসাহিত করতে সকল বাবা-মাকে মুখ্য ভূমিকা রাখতে হবে । বক্তারা আরও বলেন, যেহেতু আমাদের পরবর্তী জেনারেশন আমাদের সন্তানেরা আগামীর বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ তাই তাদেরকে বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস কৃষ্টি-কালচারের উপরে শিক্ষা দেয়া খুবই জরুরি। এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দূতাবাস সব সময় বছরব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজনের মাধ্যমে বিশেষ ভূমিকা রাখছে বলে উল্লেখ করেন বক্তারা।
আলোচনা সভার শেষে প্রবাসী খ্যাতনামা শিল্পী তাহেরুল ইসলাম, মুরাদ খান, শহীদ, পুতুল মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করে। ঐতিহ্যবাহী নৃত্য এবং দেশাত্মবোধক ও আধুনিক সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে উপস্থিত অতিথিদের মুগ্ধ করেন।