মো: জাহাঙ্গীর আলম হৃদয়, রিয়াদ, সৌদি আরব প্রতিনিধি: ২৯ এপ্রিল, ২০২০ রিয়াদ বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে প্রবাসীদের সাস্থ্য সেবা দেয়ার লক্ষে প্রবাস বন্ধু কল সেন্টারের যাত্রা শুরু হয়েছে। সৌদি আরবে বসবাসরত ২২ লাখ প্রবাসীদের স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ প্রদানের লক্ষ্যে নতুন রূপে যাত্রা শুরু করেছে প্রবাস বন্ধু কল সেন্টার। ২৯ এপ্রিল, ২০২০ বুধবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ দূতাবাস রিয়াদ’র সহযোগিতায় ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) এবং আইসিটি বিভাগ এর বাস্তবায়ন করছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি’র সঞ্চালনায় ডিজিটাল প্রেস কনফারেন্সে যোগ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এমপি, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ এমপি, তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব সেলিম রেজা, সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক মো: হাবিবুর রহমান, এটুআই প্রকল্প পরিচালক মো: আব্দুল মান্নান, আইসিটি বিভাগের উপদেষ্টা আনীর চৌধুরী, দূতাবাসের ইকনোমিক মিনিস্টার মোহাম্মদ আবুল হাসান, দূতাবাসের কর্মকর্তা, সাংবাদিক এবং বাংলাদেশি চিকিৎসকরা।

প্রবাস বন্ধু কল সেন্টারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এটুআই প্রকল্পের ই-গভার্ণেন্স স্ট্রেটেজিস্ট চীফ মো: ফরহাদ জাহিদ শেখ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, প্রবাসীরা দেশের সম্পদ। তাদের দেখভালের দায়িত্ব আমাদের।
প্রবাসীদরা যাতে মিশনে না এসে সেবা নিতে পারে সেজন্য একটি এপস করা হয়েছে। এই এপসের মাধ্যমে প্রবাসীরা ৩৪ ধরনের সেবা নিতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, আজকে যে প্রবাস বন্ধু কল সেন্টার চালু হয়েছে সেটি যাতে অন্যান্য মিশনেও চালু রাখা যায় সেই চেষ্টা করে যাচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সব সময় প্রবাসীদের সঙ্গে আছে। প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, যতদিন সম্ভব বিদেশে থাকেন, খুব বেশি সমস্যা না হলে দেশে না আসাই ভালো।পরিস্থিতি দেশে আসতে বাধ্য করলে চলে আসবেন। আমরা আপনাদেরকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত আছি।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ বলেন, আমাদের এককোটির ঊর্ধ্বে প্রবাসী রয়েছেন তাদেরকে আমরা দেশের সাথে যুক্ত করতে চেষ্টা করছি একটি এপসের মাধ্যমে। প্রবাসীরা যারা কষ্টে আছেন, দেশে আসতে চান, চাকরি হারিয়েছেন, এই এপসের মাধ্যমে কানেকটিভিটি বৃদ্ধির মাধ্যেমে তাদের খবর নেয়া যাবে। তিনি আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে প্রবাসী ভাইদের সহযোগিতার জন্য এ পর্যন্ত ১০ কোটি টাকার সাহায্য বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়েছে। প্রবাস বন্ধু কল সেন্টারের মাধ্যমে সৌদি আরবের যে সব চিকিৎসকরা এগিয়ে এসেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানান মন্ত্রী। এসময় তিনি বৈশ্বিক এই ক্রান্তিলগ্নে প্রবাসীদের ভাইদেরকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে কষ্ট হলেও প্রবাসে অবস্থান করার অনুরোধ করেন। রাতের পরে যেমন দিন আসে তেমনি এই কষ্টের পর ভালো সময় আপনাদের জন্য আসবে বলেও মন্তব্য করেন ইমরান আহমেদ।
তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এম এম জিয়াউল আলম বলেন, আমি মনে করি এই কল সেন্টারটি সৌদি প্রবাসী ভাইদের কাজে আসবে। সৌদি আরবে ৯টি ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। আমি মনে করি এই কল সেন্টারটি আরও বেশি ফলপ্রসূ হবে যদি আমরা সবাই একসাথে কাজ করতে পারি। আইসিটি ডিভিশন সবসময় সহযোগিতা করে যাবে।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, প্রবাসের বাংলাদেশি চিকিৎসকদের মাধ্যমে বাংলাদেশিরা বিনামূল্যে সেবা পাবেন। এই সেবা চালু রাখার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। এই বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি সেল চালু আছে যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
প্রবাসী কল্যাণ সচিব সেলিম রেজা সবাইকে রমজানের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আজকের এই করোনা মহামারীর এই সময়ে প্রবাসীদের স্বাস্থসেবা দেয়ার জন্য যে উদ্যোগটি দেয়া হয়েছে অত্যান্ত সময়োপযোগী। এর মাধ্যমে ২২ লাখ সৌদি প্রবাসী ভাই বোনেরা স্বাস্থ্য সেবা পাবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সকলে মিলে করোনা মহামারির বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি। ইন শা আল্লাহ আমরা সফল হবো।
সৌদি আরবের মতো অন্যান্য সকল মিশনেও যাতে এটি চালু হয় এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানান তিনি। তিনি বলেন, প্রবাসীদের ভয়ের কোন কারণ নেই, আমরা সবাই আপনাদের সাথে আছি। সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ বলেন, আজকে একটি স্মরণীয় দিন। আজকে দেশ থেকে যারা যুক্ত হয়েছেন সবাই সৌদি আরব সম্পর্কে অবগত আছেন। আমি সৌদি আরবের প্রবাসী বাংলাদেশি ডাক্তারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই তারা রাত ১২টা পর্যন্ত প্রবাসী ভাইদেরকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, দেশে ফিরে যাওয়ার আগেই সৌদি আরবের প্রতিটি শহরে প্রবাসী সেবা কেন্দ্র চালু করবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠবো ইনশাআল্লাহ।
এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ নারী গৃহকর্মী সৌদিতে এসেছেন এবং ফিরে গেছেন ১৭ হাজারের মতো। যখনই কোন নারী গৃহকর্মীর কাছ থেকে অভিযোগ পাই তখনই তাদেরকে আমরা উদ্ধার করে নিয়ে আসি। তাদেরকে আশ্রয় দেয়ার জন্য রিয়াদ, জেদ্দা এবং মদীনায় সেফহোম করা হয়েছে যেখানে ৫শতাধিক নারী গৃহকর্মী থাকতে পারবেন।
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক মো: হাবিবুর রহমান বলেন, আজকে যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। আজকের মতো আগামী দিনেও যেকোন সমস্যা সক্ষমতার সঙ্গে মোকাবিলা করে যাবো।
ইকনোমিক মিনিস্টার মোহাম্মদ আবুল হাসান বলেন, আমরা মান্যবর রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্বে একটি টিম কাজ করে যাচ্ছি। আজকে ডাক্তারদের যে টিম তৈরী হয়েছে সেটি করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতেও কাজ করে যাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রবাসী চিকিৎসক আব্দুল মালেক মোল্লা বলেন, করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য সৌদি সরকার সুন্দর ব্যবস্থা নিয়েছেন। সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হটলাইন নাম্বার ৯৩৭-এ কল দিলে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে এর জন্য কোন ধরনের ফি নিবেনা। বৈধ-অবৈধ, সৌদি-নন সৌদি সবার জন্য বিনামূল্যে করোনা চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে সৌদি সরকার।
উল্লেখ্য, সৌদি আরব সময় সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে প্রবাস বন্ধু কল সেন্টার। একটি হট লাইন নাম্বার +৮৮০৯৬১১৯৯৯১১১ এবং ৫টি ইমো নাম্বার +৮৮০১৪০০৬১১৯৯৫-৮ এবং +৮৮০১৯৫৮১০৫০২ নাম্বারে কল দিয়ে প্রবাসীরা স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ নিতে পারবেন।