সোয়েব সাঈদ, রামু, কক্সবাজার থেকে: রামুতে ভুয়া ওয়ারিশ সনদ দিয়ে রেললাইনের ক্ষতিপূরণের অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা চালাচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। চক্রটি র্দীঘদিন রেললাইনের জমি অধিগ্রহণের ফলে সুবিধাভোগীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি ও হুমকী ধমকি দিয়ে আসছে। এ অসাধু চক্রটির অব্যাহত অপকর্মের ফলে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ অগ্রাধিকার প্রকল্প এ রেল লাইনের অধিগ্রহণকৃত ভূমি মালিকরা চরমভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে।
তবে সম্প্রতি ভূয়া ওয়ারিশ সনদ দিয়ে রেললাইনের অর্থ আত্মসাতের চেষ্টায় লিপ্ত মামলাবাজ চক্রের হোতা, রামু মনসুর আলী সিকদার আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুল হাশেম সহ জড়িতদের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নং-১ এ ফৌজদারি দরখাস্ত দায়ের হয়েছে। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ রামুর পশ্চিম মেরংলোয়া গ্রামের বাদশা আলমের ছেলে সমাজসেবক জহির উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নং সিআর-২১৫/২০। যা বর্তমানে রামু থানায় তদন্তাধিন রয়েছে।
এতে অভিযুক্তরা হলেন, রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মধ্যম মেরংলোয়া গ্রামের মৃত হাজ্বী আবদুল কাদেরের ছেলে প্রধান শিক্ষক আবদুল হাশেম, আবদুল মতলব, মোজাফ্ফর আহমদ, মীর কাশেম, মেয়ে আনোয়ারা বেগম, ফাতেমা বেগম, রাবেয়া বসরী, রাজিয়া সুলতানা রাজু, হাসান বসরী এবং একই ইউনিয়নের পশ্চিম মেরংলোয়া গ্রামের মৃত কবির আহমদের ছেলে রেজাউল করিম।
মামলার বাদী জহির উদ্দিন জানিয়েছেন- তিনি এবং তার শ্যালিকা শাহিদা বেগম মুন্নী ২০০৫ সালের মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ গং হতে ৪৮৪ নং কবলা দলিলমূলে ৯০ শতক জমি ক্রয় করেন এবং ১০১২ ও ১০১৪ নং সৃজিত বিএস আলাদা খতিয়ান সৃজন করে ভোগদখলে আছেন। এসব খতিয়ানের বিএস ১৮৮ ও ১৮২ নং দাগের জমি রেল লাইন প্রকল্পে অধিগ্রহণের আওতাভূক্ত হলে মামলায় অভিযুক্তরা এসব সম্পদ আত্মসাতের পাঁয়তারা শুরু করে। এরই লক্ষ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা এসব জমি প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে মাইমন খাতুন ও মায়মনা খাতুন একজন ব্যক্তিনী উল্লেখ করে একটি মিথ্যা ও ভূয়া ওয়ারিশ সনদ নেয়। পরে এ সনদপত্র সংযুক্ত করে ফৌজদারি দরখাস্তের বাদি জহির উদ্দিন সহ ৬৬ জনকে বিবাবী করে কক্সবাজার বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ আদালতে নিজেদেরকে অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তির ওয়ারিশ দাবি করে অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে মামলা (অপর ১৪/২০১৯) দায়ের করেন। এ মামলায় বিজ্ঞ আদালত বিরোধিয় জমিতে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করলেও সনদ প্রতারণার বিষয় আদালতকে অবহিত করলে বিজ্ঞ আদালত তা প্রত্যাহার করেন।
এদিকে অভিযুক্তদের নেয়া ভুয়া ওয়ারিশ সনদ সম্পর্কে অবহিত করা হলে ফতেখাঁরকুল ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম ২০১০ সালের ১১ মার্চ মহম্মদ সোলেমানের স্ত্রীদ্বয়ের মধ্যে ময়মনা খাতুন ও মাইমন খাতুন দুই স্ত্রীর নাম মর্মে উল্লেখ করে পূর্বে দেয়া ওয়ারিশ সনদ বাতিল করেন। অন্যের জমির অধিগ্রহণের অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ২জন স্ত্রীকে একজন উল্লেখ করে মিথ্যা ওয়ারিশ সনদ নিয়ে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির ঘটনায় এলাকায় জনমনে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নং-১ এ ফৌজদারি দরখাস্তের বাদি জহির উদ্দিন জানান, এ মামলায় যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে তারা সবাই ভুয়া ওয়ারিশ সনদ জালিয়াত চক্রের সদস্য। তারা এভাবে আরো অনেক প্রভাবশালী এবং নিরীহ লোকজনের কাছ থেকেও নানা অপকৌশলে এভাবে অধিগ্রহণের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।
জহির উদ্দিন আরো জানান, তিনি এসবের প্রতিবাদ জানালে সিআর মামলার অভিযুক্তরা ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ তার বাড়িতে দেশীয় অস্ত্র, লাঠি-সোটা নিয়ে হামলার চেষ্টা চালায় এবং তার পরিবারের সদস্যদের প্রাণনাশের হুমকী দেয়। এ ঘটনায় তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এছাড়া মোটা অংকের অর্থ দিলে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করবে নতুবা এভাবে একের পর এক মামলা দিয়ে রেলের ভূমি অধিগ্রহণের টাকা পেতে ক্ষতিগ্রস্তদের বাধাপ্রদান করবে বলেও হাকাবকা করছে।