সৈয়দ এম.হোসেন বাবু, লস এঞ্জেল্স, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি: যুক্তরাষ্ট্র ক্যালিফোর্নিয়ার বিভিন্ন শহর থেকে আগত লালন ভক্ত অনুসারী ও বাউল শিল্পীদের পরিবেশনায় উদ্বোধনী সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় সারাদিন ব্যাপী মেলা। জাত-পাত, ধর্ম ভুলে আজ সবাই এসেছে মরমী সাধকের কালজয়ী গান শুনতে। এখানে আজ কোন ধর্ম নেই, নেই কোন জাত-বেজাত বিভেদ আর নেই কোন নাস্তিক আর রাজাকার। এখানে আজ সবাই একাকার লালন প্রেমে। নানা বিভেদ থাকলেও আজ তাকে সবাই মনে করতে এসেছে। কেউ কি পেরেছে তার অচিন পাখি র খোঁজ?
লালন ফকির তাঁর ‘বাড়ির কাছে আরশীনগর’ গানটিতে রূপকের মাধ্যমে আত্মতত্ত্বের অনুসন্ধান করেছেন। আরশীনগর হল প্রত্যেক মানুষের মনের মধ্যে থাকা এক শুদ্ধ মন। প্রত্যেক মানুষের এই শুদ্ধ মনের মধ্যেই অবস্থান করেন আরশিনগরে বাস করা পড়শি। ইনিই হলেন সেই ঈশ্বর বা মনের মানুষ, যাঁকে বহু সন্ধানেও পাওয়া সহজ নয়। তাকে পেতে গেলে বস্তু জগতের মোহ থেকে মুক্ত হতে হবে। কিন্তু আমাদের মনের চারপাশকে ঘিরে আছে অগাধ পানি অর্থাৎ বিষয়বাসনা এবং লাভ লালসা। এমন কোন ‘তরণি অর্থাৎ মন্ত্রতন্ত্র, আচার-অনুষ্ঠান ইত্যাদি নেই যা মনের মানুষ বা পড়শির কাছে সাধককে সহজে পৌঁছে দিতে পারে। তাকে চাঁদে না দেখা গেলেও আজ তিনি তার চেয়েও উজ্জল। তিনি সমস্ত বিতর্ক ছাড়িয়ে সবার মনে জায়গা করে নিয়েছেন।
কুষ্টিয়ার ছেলে মোহাম্মদ রহমান রাজু লালন মেলা আয়োজনের প্রধান চিন্তা ধারক। তার অক্লান্ত পরিশ্রম ও রেডল্যান্ড প্রবাসী মারভিন অধিকারী রুপমের সহযোগিতায় লালন মেলা সার্থক হয়েছে। সবার উপরে লালন মেলার কমিটিতে যারা ছিলেন তাদের সবাই মন খুলে কাজ করেছে লালন মেলাকে সার্থক করে তোলার জন্য এবং সার্থকও হয়েছেন।
একটি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক, শিল্পী এবং দর্শক-শ্রোতার সেতুবন্ধ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, তিনি মঞ্চের অভিভাবক। বিভিন্ন পরিবেশনাগুলোকে তিনি সুন্দরভাবে সাজিয়ে দর্শক-শ্রোতাকে উপহার দেন।
অনুষ্ঠানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমগ্র অংশ জুড়েই তার দীপ্তিমান উপস্থিতি অনুষ্ঠানকে সমৃদ্ধ করে। সফল সঞ্চালকের গুণাবলী এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সেদিক থেকে মানজুরুল শাহিন, ইসরাত দোজা এবং মনিরা জাহান চমৎকার সঞ্চালনা করেছেন।
মারভিন অধিকারী রুপমের পরিচালনায় সংগীত পরিবেশন করেন, মন পবন শিল্পী গোষ্ঠী, সাইফ আলম হিমু, ওমর ফারুক, জাহাঙ্গীর আলম, সোনিয়া খুকু, শহিদ আহম্মেদ মিঠু, কাবেরী রহমান, এপলো হাফিজুর রহমান, রহিমা আক্তার, উর্মি আতাহার, আরজিন কামাল এবং বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রিত শিল্পী রেশমি মির্জা ও ও প্রিতম হাসান।
পুরো অনুষ্ঠানটিতে বাদ্যযন্ত্র সঙ্গতে ছিলেন তুষার রঞ্জন দত্ত (ডার্ম),মোবারক হোসেন (ঢোল), বিদ্যুৎ রহমান (গীটার), লাকি ইসলাম (বেইজ গীটার), সৌরভ দাস (কিবোর্ড) এবং রুপম অধিকারী (প্যাড)। নতুন প্রজন্মের চোখ জুড়ানো নৃত্য পরিবেশন করেন মিরা রহমান, মালিশা রহমান, কায়রা প্রিত, তানিশা আলী ও সিমরিন সারারুদোজা।