মডেল, অভিনেত্রী, সংগীতশিল্পী, উপস্থাপনা ও রাজনীতিবিদ এসবগুলো চরিত্র যদি একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রেই বসাতে হয় তাহলে সেই ব্যক্তিকে নিয়ে আপনাকে অবাক হতেই হবে! সবগুলো শাখাতেই তার অসাধারণ পদচারণা, বলতে গেলে তিনি সফল। বলছিলাম বাংলাদেশি মিডিয়া জগতের জনপ্রিয় তারকা রওনক বিশাকা শ্যামলী’র কথা। সম্প্রতি এক সন্ধ্যায় তিনি এসেছিলেন পাক্ষিক প্রবাস মেলা কার্যালয়ে। আলাপনে জানালেন মিডিয়া জগতের পাশাপাশি জনগণের সেবক হিসেবে রাজনীতির মাঠেও তার স্বপ্নের কথা। মিডিয়া ও রাজনীতি এক্টিভিস্ট এই তারকার কথা জানাচ্ছেন মো: মোস্তফা কামাল মিন্টু।
প্রবাস মেলা: আপনার শৈশব সম্পর্কে কিছু জানতে চাই?
রওনক বিশাকা শ্যামলী: আমার জন্ম শরীয়তপুর, তবে বেড়ে ওঠা ঢাকায়। এখানে শান্তিবাগ স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি, বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং একই কলেজ থেকে অর্থনীতিতে সম্মান, ইডেন কলেজ থেকে মাস্টার্স এবং নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ সম্পন্ন করে এখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে পিএইচডি করছি।
প্রবাস মেলা: মিডিয়া জগতে কিভাবে এলেন?
রওনক বিশাকা শ্যামলী: আমাদের পরিবার ছিলো রাজনৈতিক পরিবার। আমার বাবা, নানারা ছিলেন শরীয়তপুরের প্রখ্যাত রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। আমি নিজেও রাজনীতির চর্চা করছি। তবে ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল মিডিয়াতে কাজ করবো। মিডিয়া জগতে পদার্পণ বিজ্ঞাপনে মডেলিংয়ের মাধ্যমে। গ্রামীণফোনের বিজ্ঞাপনে মডেলিং করার পরই আমার ক্যারিয়ারে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। বলা যায় রাতারাতি তারকা বনে যাই। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০টিরও অধিক বিজ্ঞাপনে মডেলিং করেছি। তারমধ্যে গ্রামীণফোন, ইগলু আইসক্রীম, সার্ফ এক্সেল, হার্পিক অন্যতম।
প্রবাস মেলা: বিজ্ঞাপন থেকে নাটক, উপস্থাপনায় ও গানের জগতে কিভাবে প্রবেশ করলেন?
রওনক বিশাকা শ্যামলী: আমার অভিনীত মডেলিংগুলো প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই নাটক ও উপস্থাপনায় আমার পদচারণা শুরু হয়। নাটকে আমি আসাদুজ্জামান নূর ভাই, তারানা হালিম আপাসহ অনেক জনপ্রিয় শিল্পীর সাথে কাজ করেছি। অনেক নাটকেই আমি অভিনয় করেছি, এখনও করছি। তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য রাক্ষুসী, ইলিশ, নেকলেস, নসীমন, লিলাই সুন্দরী, সুলতানা রাজিয়া, হর্তনের বিবি, টিয়া সমাচার, নীড় খোঁজে গাঙচিল, লকেট ইত্যাদি।
প্রবাস মেলা: আপনি তো বেশকিছু টিভি উপস্থাপনায় জনপ্রিয়তা পেয়েছেন?
রওনক বিশাকা শ্যামলী: জি ঠিকই বলেছেন, আমি অভিনয়ের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেলে উপস্থাপনা করেছি, এখনও করছি। তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হল.. চ্যানেল আইতে সপ্তডিঙ্গা, এটিএন বাংলার হাউজফুল, ছায়া ঝংকার, আনন্দ আয়োজন, বৈশাখীতে ঢাকঢোল, বিটিভিতে শুভ সকাল যেটি এখনও চলছে। এছাড়াও আমি স্ট্যাজে নিয়মিত পারফর্ম করে থাকি। ওস্তাদ আব্দুল আলীমের ছেলে আজগর আলীম, মিতা হক, সানজীদা খাতুন এবং ছায়ানট থেকে আমি গানের তালীম নিয়েছি। গত বৈশাখে মন মিউজিক এর ব্যানারে ‘পহেলা বৈশাখ’ নামে আমার একটি গান প্রকাশিত হয়েছে। আমি আধুনিক গানের পাশাপাশি সবধরনের গানই গেয়ে থাকি।
প্রবাস মেলা: আমরা শুনেছি আপনি তো সিনেমা, নাটক ও বিদেশি সিরিয়ালে ভয়েস দিয়ে থাকেন? এটা কিভাবে রপ্ত করলেন?
রওনক বিশাকা শ্যামলী: জি ঠিকই বলেছেন, অনেকগুলো বিদেশি সিরিয়ালে বাংলা ভয়েস দিয়েছি। তার মধ্যে ‘কারবালার প্রান্তরে’ অন্যতম। এছাড়াও আমি বেশ কয়েকটি বাংলা সিনেমায় ভয়েস দিয়েছি। এটা আসলে আত্মবিশ্বাসের জায়গা। সিনেমা কিংবা সিরিয়ালে ভয়েস দেওয়া আমার কাছে খুব একটা চ্যালেঞ্জিং মনে হয়না। নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস থাকলেই কাজটা করা যায়। প্রথম দিকে একটু কষ্ট হলেও পরে ঠিক হয়ে গেছে। বলতে পারেন এটাও একধরণের আর্ট।
প্রবাস মেলা: শোনা যাচ্ছে আপনি শরীয়তপুর থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন? শিল্পী হয়েও কেন রাজনীতির মাঠে আসতে চান?
রওনক বিশাকা শ্যামলী: শিল্পী হলেই যে রাজনীতিতে আসা যাবেনা এমন কোন কথা নেই। আমি রাজনৈতিক পরিবারে থেকেই বড় হয়েছি, আমার বাবা ও নানার পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘ দিন এলাকার মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। আমি পরিবার থেকেই রাজনীতির দীক্ষা নিয়েছি। আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের রাজনীতি করি। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম আমার নানা। তার থেকেই আমি রাজনীতির হাতেখড়ি শিখছি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি শরীয়তপুর থেকে নির্বাচন করতে চাই। মানুষের সেবা করার সংকল্প নিয়েই আমি রাজনীতি করছি। রাজনীতির মাধ্যমে আমি এমন কিছু করে যেতে চাই যাতে আমি না থাকলেও জনগণ আমাকে সারাজীবন মনে রাখবে। আমি একযুগেরও অধিক সময় উপস্থাপনা, অভিনয়, মডেলিং করে মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। সারাজীবনই মানুষের কল্যাণে কাজ করে যেতে চাই। তাছাড়া রাজনীতির মাধ্যমেই জনগণের খুব কাছে আসা যায় বলে আমি মনে করি।
প্রবাস মেলা: পাক্ষিক প্রবাস মেলা পত্রিকা নিয়ে কিছু বলুন।
রওনক বিশাকা শ্যামলী: আমি এই পত্রিকাটি নিয়মিত পড়ি। প্রবাসী বাংলাদেশিদের সুখ-দুঃখ নিয়ে প্রবাস মেলা নিয়মিত সংবাদ তুলে ধরছে, এটা নিশ্চয়ই ভালো খবর। পত্রিকাটির মাধ্যমে প্রবাসীরা উপকৃত হবে বলেই আমার বিশ্বাস। এজন্য আমি এ পত্রিকার সকল কলা-কুশীলদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আমি পত্রিকাটির উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি।
প্রবাস মেলা: সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
রওনক বিশাকা শ্যামলী: প্রবাস মেলা পরিবারকেও ধন্যবাদ।