প্রবাস মেলা ডেস্ক: ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যে মাদক পাচাররোধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এ লক্ষ্যে আরও জোরাদার করা হয়েছে তল্লাশী ব্যবস্থা। কঠোর নজরদারিতে আনা হয়েছে যাত্রীদের ব্যাগেজ। পাশাপাশি প্রবাসীযাত্রীদের সমস্যাগুলো নিরসনসহ বাড়ানো হচ্ছে সেবার পরিধি।
১০ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজ দপ্তরের সভাকক্ষে চট্টগ্রাম সমিতি ওমানের প্রতিনিধিদলের সাথে বৈঠকে এ তথ্য জানান বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার এবিএম সারওয়ার-ই-জামান। তার সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইমিগ্রেসন, কাস্টম, নিরাপত্তা, বিমানসংস্থাসহ বিমানবন্দরে দায়িত্বে থাকা সকল সংস্থার প্রতিনিধিরা।
চট্টগ্রাম সমিতি ওমানের সভাপতি ও প্রবাসী সিআইপি মোহাম্মদ ইয়াছিন চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা ওমানে মাদক পাচার, যাত্রী দুর্ভোগ, ইমিগ্রেসন প্রক্রিয়া, মরদেহ পরিবহন এবং সিআইপি সুবিধাসহ প্রবাসীদের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন।
মাদকদ্রব্যের চালান ধরা পড়ায় ওমান বিমানবন্দরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরে মোহাম্মদ ইয়াছিন চৌধুরী বলেন, খাবার, দাঁতের মাজন, পেস্টসহ নানা মাধ্যমে যাওয়া ইয়াবা-গাজার চালান আটকের পর বাংলাদেশি যাত্রীদের কঠোর তল্লাশীতে পড়তে হচ্ছে। যা দেশের ইমেজেই ক্ষুণ হচ্ছে না শুধু, জনশক্তি বাজারের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কতিপয়ের অপকর্মে দুশ্চিন্তায় আছেন প্রায় ৮ লাখ ওমানপ্রবাসী। এজন্য চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিমানবন্দরে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া জরুরী হয়ে পড়েছে।
বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক সারওয়ার-ই-জামান বলেন, ওমানে মাদক পাচারের তথ্য এই প্রথম জানা গেছে। বিষয়টি আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। আমাদের অত্যাধুনিক স্ক্যানার দিয়ে এসব পার হবার সুযোগ কম। তারপরও তল্লাশি জোরদার ছাড়াও বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। এছাড়া দূতাবাসের মাধ্যমে আটকদের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে দেশীয় হোতাদের খুঁজে বের করতে জানানো হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।
বিমানবন্দরে প্রবাসীদের সমস্যা নিয়ে তিনি বলেন, রেমিটেন্সযোদ্ধা হিসেবে প্রবাসীদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব ও সবোর্চ্চ সেবা দেয়া হয়ে থাকে। তাদেরই জন্য খোলা হয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক ও সার্বক্ষনিক তথ্যকেন্দ্র টামিনাল ভবন জুড়ে সুপেয় পানির কল ও টেলিভিশন বসানো হয়েছে। সহজ ও দ্রুত করা হয়েছে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া। এরপরও তাদের যেকোন অভিযোগ আগ্রধিকার ভিত্তিতে সমাধানের নিশ্চিয়তা দিচ্ছি। অপেক্ষামান কক্ষটি আধুনিকায়নসহ প্রবাসী সিআইপিদের জন্য আরও কিছু বিশেষ সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন ব্যবস্থাপক।
বিমানবন্দর প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক’র উপ-পরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম মজুমদার বিদেশ থেকে আসা মরদেহ ও অসুস্থদের পরিবহন সুবিধাসহ প্রবাসীদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার তথ্য দিয়ে বলেন, বহির্গমন কার্ড পুরণে দুজন কর্মি নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। ফলে লেখাপড়া না জানা প্রবাসীদের কার্ড পুরণে দুর্ভোগে আর পড়তে হবে না।
অবৈধ গমন ঠেকানোর পাশাপাশি রোহিঙ্গা ইস্যুতে সবোর্চ্চ সর্তকতা অবলম্বনের কথা উল্লেখ করে ইমিগ্রেশনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন মজুমদার বলেন, এ জন্য কোন কোন যাত্রীর ক্ষেত্রে কিছুটা সময় নিতে হচ্ছে। দেশের সুনামের স্বার্থে আমাদের তা করতেই হচ্ছে। তারপরও প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী নির্ধরিত সময়েই তাদের ফ্লাইট ধরছেন। ই-ভিসার পর ই-ইমিগ্রেসন চালু হলে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয় দ্রুত ও সহজ হয়ে যাবে বলে তিনি আশা করেন।
ওমান থেকে দেশে মরদেহ পরিবহনে জটিলতার বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনবেন বলে জানান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সহকারী স্টেশন ব্যবস্থাপক ইমরুল হাসান আনসারী।
মাদকরোধে নেয়া উদ্যোগেকে স্বাগত জানিয়ে চট্টগ্রামের জেষ্ঠ্য সাংবাদিক এজাজ মাহমুদ বলেন, তল্লাশী জোরদারে প্রবাসীদের দুর্ভোগে যেন না বাড়ে সেদিকে যেমন খেয়াল রাখতে হবে তেমনি প্রবাসীদেরও সর্তক হতে হবে চালানী গ্রহণে। অচেনার চালানী না নেয়া আর চেনা জনের চালানী পরীক্ষা করে নেয়াই উত্তম। ওমানে আটকদের অনেকেই শুধু চালানীর জন্যই বিপদে পড়েছেন।
বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে বিমানবন্দর এপিবিএন-এর সহকারি পুলিশ সুপার মো. হুমায়ুন কবির খান, কাস্টমস কর্মকর্তা মো. ফজলুল হক, স্টেশন যোগাযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্লাহ, নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম, ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের স্টেশন ইনচার্জ মো. মাঈনুল ইসলাম, রিজেন্ট এয়ারওয়েজের ডেপুটি স্টেশন ইনচার্জ জেসমিন আক্তার জেসি, বিমানবন্দর আনসার ক্যাম্পের কমান্ডার মো. শফিুকল ইসলাম, নিরাপত্তা সুপারভাইজার মো. মেশকাত হোসেন, মো. ইউছুফ ও মো.কামরুজ্জামান এবং চট্টগ্রাম সমিতির উপদেষ্টা মো. সামসুল আজিম আনছার সিআইপি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান চৌধুরী শাবু এবং আমেরিকা প্রবাসী মোহাম্মদ সামশুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।