আখি সীমা কাওসার, রোম, ইতালি প্রতিনিধি: এমনিতেই করোনা ভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত, বিষন্ন, অর্থনৈতিক অচলাবস্থা সব মিলিয়ে বিপর্যস্ত গোটা পৃথিবী। সাথে ইতালিও বাদ পড়ে না। ইতিমধ্যে নাসা বার্তা দিয়েছে চীনা রকেট এর ধ্বংসাবশেষ ইতালির যে কোন অঞ্চলে উড়ে এসে পড়বে। ইতালির অনেক অঞ্চল শনির দশায় পড়তে যাচ্ছে রীতিমতো ৮/৯ মে ২০২১, শনি/রবিবার।
এই ভূখণ্ডে কোটি কোটি মানুষ বিপদে পড়তে পারে, রকেট লং মার্চ ফাইভ বি’র ধ্বংসাবশেষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে ছুটে আসছে ভূপৃষ্ঠে। চীনারা যদিও বলছে যা পড়ার তা সাগরে কিংবা বনে-জঙ্গলে পড়বে (যদিও তা কতটুকু সঠিক তার কোন ব্যাখ্যা নেই)। ইতালিয়ান মহাকাশ সংস্থার দেয়া বিপদজনক তথ্যের ভিত্তিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে প্রধানমন্ত্রী ডক্টর মারিও দ্রাঘির কার্যালয়ের অধীনস্থ জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা সিভিল প্রটেকশন ডিপার্টমেন্টে। ৭ মে ২০২১,শুক্রবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রের অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সংস্থার বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়ে তারা জরুরি বৈঠক সেরে নেয়। সরকারিভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে জরুরি সতর্কবার্তা।

চীনা লংমার্চের ধ্বংসাবশেষ পৃথিবীতে আঘাত হানার সম্ভাব্য সময়কাল ৯ মে ২০২১, রবিবার ইতালির স্থানীয় সময় ভোর ২টা ২৪ মিনিট অর্থাৎ ৮ মে ২০২১, শনিবার দিবাগত রাতে। তবে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা খন্ডিত রকেটের সাথে বায়ুমণ্ডলের ঘর্ষণ এবং সূর্য রশ্মিজনিত প্রাসঙ্গিক কারণে সম্ভাব্য এই অঘটন ৬ ঘন্টা আগে পরেও হতে পারে। ইতালির আংশিক মধ্যাঞ্চল এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় সবকটিতেই রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়। শনি, রবিবার জনগণকে যার যার আবাসস্থলে বা অফিস ভবনে বদ্ধ জায়গায় থাকতে বলা হয়েছে সরকারি এক বিশেষ বার্তায়। ঝুঁকিপূর্ণ বিভাগ সমূহ হচ্ছে উম্বব্রিয়া, লাচ্ছিও, আব্রুচ্ছো, মোলিসে, কাম্পানিয়া, বাসিলিকাতা, কালাব্রিয়া, পুলিয়া, সিসিলিয়া, সার্দেনিয়া। এসব বিভাগের জনগণকে যার যার অবস্থানে, কাঁচের দরজা জানালা থেকেও নিরাপদ দূরত্বে থাকতে বলেছে সিভিল প্রটেকশন ডিপার্টমেন্ট।
৭ মে ২০২১, শুক্রবারের জরুরী এই সভার টেকনিক্যাল টেবিলে যোগ দেন ইতালিয়ান মহাকাশ সংস্থার (স্পেস এজেন্সি Space Agency) কর্মকর্তারা। এছাড়াও মন্ত্রিপরিষদের সামরিক উপদেষ্টা পরিষদ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ফায়ার সার্ভিস ডিপার্টমেন্ট, বিমান বাহিনী, সিভিল এভিয়েশন অথরিটি এবং জাতীয় পরিবেশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীরা উক্ত সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক রবিবার পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি রেখে সামগ্রিক পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হবে।
বিশেষ জরুরী সভার পর সিভিল প্রটেকশন ডিপার্টমেন্টের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চীনা রকেটের ধ্বংসাবশেষ বড় ভবনের উপরে পড়ার সম্ভাবনা যদিও কম, তথাপি যে-কোনো খোলা জায়গার তুলনায় ভবনের ভিতরে থাকা এই মুহূর্তে বেশি নিরাপদ। কোনভাবেই সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না, ঠিক কোথায় আঘাত আনবে? তার সুনির্দিষ্ট তথ্য যদিও আমাদের জানার সুযোগ নেই, তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে যদি তা বিভিন্ন ভবনের উপর এসে পড়ে, সে ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা অনিবার্য।
ইতালিয়ান সিভিল প্রটেকশন ডিপার্টমেন্ট আরো জানিয়েছে, সম্ভাব্য বিপদজনক বলে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। এইসময় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার জনগণ ভবনের নিচের তলায় অবস্থান করা তুলনামূলকভাবে নিরাপদ বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা। নিচতলায় কিংবা আন্ডারগ্রাউন্ডে কংক্রিটের দেয়াল আছে এমন যেকোন স্থান এবং ভবনের আশেপাশের এরিয়াকে নিরাপদ মনে রাখতে হবে। রকেট এর ধ্বংসাবশেষ এর ছোট ছোট অংশ ভূ-পৃষ্ঠে আছড়ে পড়ার সময় দিনের আলোতে খালি চোখে দেখতে পাবার সম্ভাবনা একেবারে কম। ধ্বংসাবশেষের বড় বড় অংশই টিকে থাকতে পারে ভূপৃষ্ঠে আঘাত হানার সময়। রকেট এর ধ্বংসাবশেষ ইতালির মাটিতে যে কোন স্থানে পড়ার পর কোথাও কারও দৃষ্টিগোচর হলে তা স্পর্শ না করতে কঠোর হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে এবং ন্যূনতম ২০ মিটার দূরত্ব বজায় রেখে প্রশাসনকে জানাতে বলা হয়েছে সেই নির্দেশনায়।
এদিক দিয়ে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ইতালির আকাশে আজ শনিবার ভোরে চিনা রকেটের খন্ড অংশের অস্তিত্ব খালি চোখে দেখা গেছে।