জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়, কোলকাতা, ভারত থেকে: গতানুগতিকতার বাইরে দাঁড়িয়ে গত কয়েক বৎসর লিটিল ম্যাগাজিনের অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখার সাথে সাথে ‘চন্দ্রপুর মনন ফর লিটারেচর’ বা মনন সাহিত্য সংস্থা সমাজের প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষের কাছে বছরে দু’য়েকবার পৌঁছে যায় জেলাভিত্তিক ভাবে।
গত কয়েক মাসের অতিমারির যন্ত্রণা আমাদের জীবনকে করে তুলেছে অতিষ্ঠ। স্বজনহারা মানুষের আর্তনাদে পৃথিবী আজ নিঃস্ব মনে হয় বহু মানুষের কাছে। ক্ষমতার বৃত্ত দেখাচ্ছে শুধুই অদূরদর্শিতা, স্খলন ও ভ্রষ্টাচার। ব্যতিক্রমী কিছু ডাক্তার, নার্স ও প্রশাসনের স্বল্প অংশ, তারা জীবনবাজি রেখে মানবসেবায় নিয়ত নিয়োজিত। সময়ের এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েও ‘চন্দ্রপুর মনন ফর লিটারেচর’ সরকারি বিধি মেনেই নিয়ন্ত্রিত আকারে এবার ‘মনন পূজা সংখ্যা ২০২০’ প্রকাশ করেছে ২২ নভেম্বর, ২০২০ শিয়ালদহস্থিত কৃষ্ণপদ ঘোষ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট হলে।
নারী ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, নারী লাঞ্ছনা রাশিতত্ত্বের হিসেবে গুণিতক আকারে বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে অত্যন্ত ঘৃণ্যভাবে। তবে নারী-নির্যাতন ও নারী-লাঞ্ছনা বিষয়টি একেবারে নব্য, সে কথাও বলা যায় না। এতদসত্ত্বেও, আমাদের ধারণা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আমরা কিন্তু প্রকৃতিরই সন্তান। হয়তো কোনো এক নির্দিষ্ট কারণেই প্রকৃতি পুরুষকে করেছে বলশালী, কিন্তু তার মানে এই নয় যে নারী-নির্যাতন ও নারী-লাঞ্ছনা পুরুষের অধিকারে পরিণত হবে। পুরাণ থেকে প্রাপ্ত হয়, যম পূর্ণ যৌবনে আপন ভগ্নী যমীর প্রতি সাময়িক উত্তেজনাবশত রিপুর প্রকাশ ঘটান, আর যমী নিজেকে সংযত রেখে শুরু করেন ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দেওয়া, সে ধারাই চলেছে আজও।
আমরা আজকের দিনটিকে সমাজের মূলস্রোতের বাইরে দাঁড়িয়ে প্রবেশ করতে চাইছি সৃজন-ভাঙ্গণের নতুন এক অভূতপূর্ব অধ্যায়ে ‘বোনফোঁটা দিবস’ পালন করে। আমাদের প্রত্যাশা সমাজ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মনের ভিতরে অটুট রাখুক মানুষে-মানুষে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে। চলুন আমরা স্বপ্ন দেখি আগামী প্রজন্মে নারী-নির্যাতন ও নারী-লাঞ্ছনা ক্রমশ অবলুপ্ত হয়ে যাবে এই পৃথিবী থেকে।
আমাদের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকেছেন সাহিত্য একাডেমী পুরস্কারপ্রাপ্ত সাহিত্যিক শ্রদ্ধেয় শ্রী ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়, প্রাবন্ধিক ও সংস্থার কর্ণধার শ্রী স্নেহাশীষ চক্রবর্তী, বিশিষ্ট কবি ও বাচিক শিল্পী শ্রী জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়, কবি শ্রী অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী, কবি অমিত চক্রবর্তী, কবি শ্রীমতী মহাশ্বেতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কবি মানিক দে ও কবি আরণ্যক বসু মহাশয়। এছাড়াও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে না পেরে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য শ্রী সুজিত বসু মহাশয় ও বিশিষ্ট কবি শ্রী মন্দাক্রান্তা সেন মহাশয়া। আমরা আমাদের কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি সমাজের সকল বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে ও উপস্থিত সকল মনন সদস্য-সদস্যাকে।