আবু তাহের মিয়াজী, দোহা, কাতার
আমাদের প্রত্যেকের কিছু না কিছু নানাবিধ জল্পনা কল্পনা সোনালী স্বপ্ন আছে বা থাকতেই পারে, তবে বাংলাদেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি যে স্বপ্নটা দেখে তা হলো প্রবাস। প্রবাস নিয়ে বেশি মানুষের স্বপ্ন দেখার অন্যতম কারণ হলো আমরা গরীব দেশের মানুষ। দরিদ্রতা আমাদেরকে এমনভাবে আষ্টেপীষ্ঠে বেষ্টনি দিয়ে রেখেছে যে আমরা বড় কোনো স্বপ্ন কল্পনায়ও আনতে পারিনা। তাই আমাদের দেশের মানুষ তার স্বপ্নে প্রবাসকেই স্থান দেয় অধিকহারে। আর সেই স্বপ্নকে পুঁজি বানিয়ে মানব ব্যবসা করে যাচ্ছে ফ্রি ভিসার নাম দিয়ে আমাদের দেশের কিছু অসাধু আদম ব্যবসায়ীরা।
বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অর্থ উপার্জনের জন্য যেসব বাংলাদেশি পাড়ি জমাতে চাচ্ছেন, তাদের কাছে ‘ফ্রি ভিসা’ এখন প্রবাস গমণের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। অনেকেই ভাবছেন, ফ্রি ভিসা নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে একবার পা দিতে পারলেই হলো, কোনো রকম বাধা-নিষেধ ছাড়া খুব সহজেই যে কোনো ধরনের কাজ করা যাবে। ভিসা ব্যবসায়ীদের প্রচারণার ফলেই জনমনে এ ধরনের মেকি ধারণার সৃষ্টি হচ্ছে। যদিও বাস্তবচিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। ফ্রি ভিসায় মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে প্রতারণার শিকার হবার পর ভুক্তভোগীরা বুঝতে পারেন ফ্রি ভিসা বিদেশ যাবার ফ্রি টিকিট নয়। মূলত, অর্থলোভী দালালদের আকাশ ছোঁয়া স্বপ্নের বাণীতে ফ্রি ভিসার নাম শুনে বেশি টাকা দিয়ে ভিসা কিনেন অনেকে। সেজন্য প্রলুব্ধ হন এবং ভাবেন এতো টাকা খরচ করে বিদেশ এসেছি যখন, বাইরে বেশি বেশি কাজ করে খুব তাড়াতাড়ি ভালো কামাই করা যাবে। ফলে এই ধরনের ভিসার দাম অনেক বেশি দিয়ে কিনলে সমস্যা নেই বরং লাভবান হব! বাস্তবে কিন্তু উল্টো।
মূল বাস্তবতা হল, কাতারে কেউ কাজ করতে আসতে চাইলে তার একজন স্পন্সর বা কফিলের দরকার হয়। সেই কফিল কোনো কোম্পানি কিংবা একজন ব্যক্তিও হতে পারে। ফ্রি ভিসার মানে হলো ভিসাধারীকে মালিকের বা স্পন্সরের কাজ করতে হবে না। সে তার ইচ্ছেমতো বাইরে কাজ করতে পারবে। একজন কফিল বা স্পন্সর সরকারের কাছ থেকে তার কোম্পানি, বাড়ির বা বাগানের কাজ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষ আনার অনুমতি পায়। অনেকে তার মধ্যে কিছু সংখ্যক মানুষ দিয়ে নিজের কাজ চালিয়ে বাকি মানুষকে অর্থের বিনিময়ে বাইরে কাজ করার অনুমতি দেয়। এভাবে মূলত কফিল কিছু টাকা আয় করলেও এ ধরনের কফিলের সংখ্যা খুব কম। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কফিলের লোভী কর্মচারীরা কফিলের অজান্তে ফ্রি ভিসার নামে টাকা কামিয়ে যাচ্ছে।
মনে রাখতে হবে, ফ্রি ভিসা নামের প্রক্রিয়াটি আইনগতভাবে বৈধ নয়। ধরা পড়লে কফিলের জরিমানা আটাশ হাজার আর কর্মচারীর বার হাজার রিয়াল। আবার জরিমানা দিয়ে থাকার সুযোগও নেই ধরা পড়লে দেশে পাঠিয়ে দেয়। বর্তমানে কাতারে যে কোনো প্রবাসীর প্রতিমাসে খরচ আছে ১০০০ থেকে ১১০০ রিয়েল। বলবেন কিভাবে? তাহলে বুঝিয়ে দিচ্ছি! প্রথমে থাকার জন্য রুম ভাড়া ৪০০ রিয়েল, খাওয়ার জন্য ৩০০ রিয়েল, নাস্তা খরচ সকাল-বিকাল পাঁচ রিয়েল করে হলে প্রতিদিন দশ রিয়েল, মানে নাস্তা বাবদ ৩০০ রিয়েল এবং দেশে টেলিফোন করলে ১০০ রিয়েল। সর্বমোট ১১০০ রিয়েল- একজন ফ্রি ভিসার প্রবাসীর প্রতি মাসে খরচ যদিবা অসুস্থ না হয়। আর প্রতি বছরে আইডি রিনিউ করতে শুধু আইডির জন্য ১২০০ এবং স্পন্সর বা কফিলকে দিতে হবে দুই থেকে তিন হাজার রিয়েল। তাই বলছি ফ্রি ভিসায় আসতে ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখবেন, আপনি কি কাজ জানেন বা প্রতি মাসে কত রিয়েল কামাই করতে পারবেন আপনিই ভালো জানেন। তবে হ্যাঁ, কিছু কিছু বাংলাদেশি ফ্রি ভিসায় কাজ করে সফল হলেও অনেকে চরম ব্যর্থ হয়ে ভুগছেন। তবে সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় হল, ফ্রি ভিসার নামে বাংলাদেশিরা প্রতারিত হচ্ছেন স্বদেশেরই অসাধু ভিসা ব্যবসায়ী এবং দালালদের কাছে। তাই বলছি, ফ্রি ভিসা বলতে যে কিছু নেই এই বিষয়টি সবার জানা উচিত।