প্রবাস মেলা ডেস্ক: ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে দুই নারীকে নগ্ন করে ক্যামেরার সামনে রাস্তায় হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের একটি মাঠে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে সেখানকার আদিবাসী একটি সংগঠন। এ ঘটনায় ভারতজুড়ে ব্যাপক নিন্দা চলছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভয়ংকর এ ঘটনাটি ঘটে গত ৪ মে। তবে বুধবার (১৯ জুলাই) এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে এ নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। ইন্ডিজেনাস ট্রাইবাল লিডারস ফোরাম (আইটিএলএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত ৪ মে মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে কাংপোকপি জেলায় এ ঘটনাটি ঘটেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভিডিওতে দেখা গেছে, এক দল পুরুষ অসহায় দুই নারীর শ্লীলতাহানি করছে। তারা কাঁদছে এবং তাদের ছেড়ে দেয়ার জন্য অপহরণকারীদের কাছে মিনতি করছে। ওই দুই নারীর ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর দেশটির বিরোধীদল কংগ্রেস ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। দলটির প্রেসিডেন্ট মালিকঅর্জুন খার্গে এক টুইট বার্তায় বিজেপির তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, ‘মণিপুরে মনুষত্ব মরে গেছে। মোদি আর বিজেপি সরকার সেখানে গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনকে উশৃঙ্খলশাসনে পরিণত করেছে, রাজ্যের সামাজিক কাঠামো ধ্বংস করেছে। যদি কোনো লজ্জা থাকে, মণিপুরে কী হয়েছে সেটি নিয়ে পার্লামেন্টে কথা বলবেন।’ মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা এন বিরেন সিংও এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এটি মানবাধিকার লঙ্ঘন। এর সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এরইমধ্যে এ ঘটনায় মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে রাজ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
এদিকে মণিপুরের ঘটনা ভারতের জন্য লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শুক্রবার (২০ জুলাই) সংসদের বাদল অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মণিপুরের ঘটনা মেনে নেয়া যায় না। এটা ভারতের জন্য লজ্জাজনক ঘটনা। যে কোনো সভ্য সমাজের পক্ষে মণিপুরের ঘটনা মেনে নেয়া সম্ভব নয়।’ মণিপুরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে আরও শক্ত করা যায়, সে বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
অপরদিকে মণিপুরের ঘটনা দৃশ্য দেখে ‘শিউরে’ উঠেছেন বলিউড অভিনেতা অক্ষয় কুমার। বৃহস্পতিবার এক টুইটে তিনি বলেন, বিবস্ত্র করে তাদের ক্যামেরার সামনে হাঁটানোর দৃশ্য দেখে আমি ‘শিউরে’ উঠেছি। এ ঘটনায় আমি চরম বিরক্ত। তিনি আরও বলেন, ‘এর সঙ্গে জড়িতদের এমন শাস্তি দেওয়া হোক যা দেখে কেউ ভবিষ্যতে এমন কিছু করার চিন্তাও যেন না করে।’
প্রসঙ্গত, গত মে মাসের ৩ তারিখ থেকে মণিপুরে আদিবাসী মেতাই সম্প্রদায়কে বিশেষ মর্যাদা দেয়া নিয়েই সংঘাতের শুরু। কুকি সম্প্রদায়ের দাবি, এর মধ্য দিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাড়তি সুযোগ-সুবিধা পাবে মেতাইরা। রাজ্যটিতে চলমান সংঘাতে এরই মধ্যে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন শত শত মানুষ। আর বাস্তুচ্যুত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ।