মোহাম্মদ ফিরোজ, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ থানাধীন অক্সিজেন মোড়ে এক ভুয়া ডাক্তারের অনুসন্ধান পাওয়া গেছে। ডিগ্রী না থাকা সত্বেও বাহারি ডিগ্রী নামের সাথে যুক্ত করে দীর্ঘ সাত বছর যাবত সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে চিকিৎসাসেবা ও রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
অক্সিজেন কাঁচাবাজার মোড়স্থ নাহার মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় ‘ফেইথ ডেন্টাল সার্জারি’ নামে আলিশান চেম্বার খুলে রোগীদের সাথে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরীর জন্য সংবাদ প্রতিনিধিদল সরেজমিনে উক্ত ভুয়া ডাক্তারের চেম্বারে গেলে দেখতে পাওয়া যায়, তার আলিশান চেম্বারে দিব্যি বসে আছে।
প্রতিবেদক ভুয়া চিকিৎসকের কাছে বাহারি ডিগ্রী এবং ডেন্টাল সার্জন এর বিষয়ে জানতে চাইলে এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট দেখাতে বললে তিনি মোবাইল ফোনে কথা বলার ভান ধরে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে প্রতিবেদকরা তাকে থামিয়ে এবং চেয়ারে বসিয়ে ১ সেপ্টেম্বর মিসেস নাজু (৩০) দেয়া ব্যবস্থাপত্রের কপি দেখালে ব্যবস্থাপত্রটি তার বলে স্বীকার করেন। ব্যবস্থাপত্রে উল্লেখিত এবং তার চেম্বারে প্রবেশ মুখে নামের সাথে ডিগ্রী সমূহ নিয়ে জানতে চাইলে সার্টিফিকেট বাসায় রয়েছে বলে এড়িয়ে যান। পরবর্তীতে তার প্রেসক্রিপশন প্যাড দেখতে চাইলে তিনি আর কোন প্রেসক্রিপশন প্যাড নেই বলে জানান এবং সাদা প্যাডে রোগীদের ব্যবস্থাপত্র দেন বলে জানান।
উক্ত ভুয়া চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলম কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তিনি সাংবাদিক বলে পরিচয় দিয়ে ভুয়া একটি আইডি কার্ড দেখান। প্রতিবেদক তিনি সাংবাদিক না চিকিৎসক জানতে চাইলে কোন উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান।
ভুয়া চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলমের বিষয়ে টেলিফোনে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডাক্তার আজিজুর রহমান সিদ্দিকী জানান, ২০১০ এর স্বাস্থ্য নীতিমালা অনুসারে বিএমডিসি অনুমোদিত এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রী ধারী ছাড়া নামের পূর্বে ডাক্তার লেখা আইনত দন্ডনীয় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এছাড়াও জাহাঙ্গীর আলমের নামের সাথে লাগানো ডি.ডি.এস(ডেন্টাল),ডি.টি(২), ডেন্টাল সার্জন বিষয়ে টেলিফোনে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন বলেন, জাহাঙ্গীর আলম নামের সাথে যে ডিগ্রীগুলো যুক্ত করেছেন বাংলাদেশ ওই ডিগ্রী গুলোর কোন অস্তিত্ব নেই এবং ডেন্টাল সার্জন লিখার তার কোন এখতিয়ার নেই।
সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেনের সাথে কথা বলে অচিরেই জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান। এদিকে ভুয়া চিকিৎসকের বিষয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোঃ ইলিয়াস হোসেনের সাথে টেলিফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত ভুয়া চিকিৎসকের আলিশান চেম্বারে একজন বৈধ চিকিৎসক ও চেম্বার করেন। উক্ত চিকিৎসকের নাম ডাক্তার ইফতেখারুল ইসলাম (বিডিএস)। ভুয়া চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলম এর বিষয়ে টেলিফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সপ্তাহে একদিন তার চেম্বারে আমার রোগীগুলোকে ব্যবস্থাপত্র দেই, তবে জাহাঙ্গীর আলম এর বিষয়ে আমি কিছুই জানি না এটা তারই একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। প্রতিবেদক ভুয়া চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলম এর বিষয়ে টেলিফোনে জানতে চাইলে বলেন, ২০১০ সালের স্বাস্থ্য নীতিমালা অনুসারে জাহাঙ্গীর আলম নামের পূর্বে ডাক্তার এবং ডেন্টাল সার্জন লিখতে পারেন না। এটি চরম অন্যায় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।