রফিক আহমদ খান, কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া
দিনটি ছিলো বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আয়োজিত মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগের ফাইনাল খেলার। বসেছিলাম খেলার সবুজ মাঠকে সামনে নিয়ে। পেছনে গ্লাসে ঘেরা ক্লাব ঘর। কুয়ালালামপুরে দুপুর গড়িয়ে পড়ন্ত বিকেলে সবুজাত মাঠের প্রতিচ্ছবি গিয়ে পড়েছে গ্লাসে, তাই ছবির পেছনে দেখে মনে হচ্ছে- সবুজ মাঠটি যেনো পেছনেই।
পৃথিবীর যেখানেই সবুজ দেখি সেখানেই মনে পড়ে শৈশবে বইয়ে পড়া সেই বাক্যটি, ‘সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশ’। পাঠ্যবইয়ে সেই বাক্যটির কারণে সবুজের সাথে আমাদের চিরকালীন সম্পর্ক। অবশ্যই এর চেয়ে বড় কারণ সত্যিই সবুজ-শ্যামল গাঁয়ে-ই আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। যেখানে দিঘির পাড়ে একটি তালগাছ বহু বছর এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাত বাড়ালেই আমার শৈশবের ‘দেয়াং পাহাড়’। যেখানে এক সময় আপনাআপনি প্রাকৃতিক সবুজের চাষ হতো। এখন আর সেই দিন নেই। শিল্পের প্রসার ঘটতে যাচ্ছে এই পাহাড়ের পাদদেশেও।
আপনারা তো অনেকেই শুনেছেন, চায়না অর্থনৈতিক জোনের কথা। আনোয়ারায় হতে যাওয়া দুটি চায়না অর্থনৈতিক জোনের একটি এখানেই হচ্ছে। ‘দেয়াং পাহাড়ের’ পাদদেশে। কী আর করা দেশের জন্য শিল্পোন্নয়নও দরকার। তবে খেয়াল রাখা জরুরি সবুজের যেনো কমতি না হয়। সবুজই সজীবতা। শিল্পায়নের পাশাপাশি সবুজের সজীবতায় ছায়াঘেরা থাকুক আমার গ্রাম। আসলে বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে কী দারুণ সবুজের সমাহার তা বোঝা যায় ছবিতে। গ্রামে গিয়ে ছবি তুললে সেই ছবিতেই ফোটে ওঠে সবুজের বাহার। চারিদিকে সবুজে সবুজে প্রকৃতির নিপুণ হাতে সাজানো।
সরকার শিল্পের বিকাশ ঘটায় যেখানে চারিদিক থেকে ভৌগলিক সুবিধা বেশি সেখানে। আমার গ্রামে সেই সুবিধা আছে বলেই এখানে অতীতে গড়ে ওঠেছে দেশের অন্যতম বৃহৎ সারখানা সিইউএফএল, কাফকো ও কোরিয়ান ইপিজেড। নতুন করে হচ্ছে চায়না অর্থনৈতিক জোন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মনোযোগ থাকার কথা শিল্পোন্নয়নের ফলে যাতে এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপর্যয় না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা। কিন্তু, ভাবনার বিষয় হলো, উনারা সেটা না-করে অর্থনৈতিক জোন স্থাপন কার কৃতিত্ব সেই প্রচারে ব্যস্ত কিনা।
দূর প্রবাসে বসে এই মধ্যরাতে আমাদের গাঁয়ের মানুষের আরেকটি চিরচেনা দৃশ্যের কথা মনে পড়ল এখন; ধান ক্ষেতের কথা। প্রথম দিকে সবুজ, সবুজ থেকে আরো সবুজ, গাঢ় সবুজ। যখন ধান পাকতে শুরু করে তখন সোনালী, সোনালী থেকে আরো সোনালী, মাঠজুড়ে সোনালী ধান। কৃষকের চোখেমুখে হাসি ফোটানোর সোনালী ধান। দু’তিন মাসের ব্যবধানে এক মাঠে এই দুই দৃশ্য চিরচেনা। মনে পড়ে কবি শামসুর রাহমানের ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতার সেই লাইনও, ‘স্বাধীনতা তুমি ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি’।
ফসলী জমি বা সবুজ বিনষ্ট করে যেখানে শিল্পকারখানা হচ্ছে সেখানে অদূর ভবিষতেও কৃষকের হাসির সময় দূষণমুক্ত অক্সিজেন যেনো শরীরে যায় সে দিকে পর্যাপ্ত দৃষ্টি রাখবেন আমাদের জনপ্রতিনিধিরা এ প্রত্যাশাই রইলো।