নাজমুল ইসলাম মকবুল: টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল লন্ডন এর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। এর আয়তন ২০ বর্গ কিলোমিটার। লোক সংখ্যা প্রায় ৩লাখ। এর মধ্যে বাংলাদেশি জনসংখ্যা প্রায় ৩২%। এখানে প্রশাসনিক মেয়র জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। ২০১৮ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত টাওয়ার হ্যামলেটস নির্বাচনে বিপুল ভোটে মেয়র নিবাচিত হন লেবার পাটির মনোনীত প্রার্থী জন বিগস্। এর পর তিনি ৯ সদস্য বিশিষ্ট কেবিনেট গঠন করেন। কেবিনেটের পর স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নিবাচিত করা হয়।
এবারে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে কাউন্সিলর মো. আয়াছ মিয়াকে বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় সর্বসম্মতিক্রমে কাউন্সিলর সর্বোচ্চ সম্মানিত স্পিকার পদে নির্বাচিত করা হয়। লন্ডনের অন্যান্য কাউন্সিলে এই পদকে সিভিক মেয়র বলা হয়। কিন্তু টাওয়ার হ্যামলেটসে প্রশাসনিক মেয়র থাকায় সিভিক মেয়রকে স্পিকার বলা হয়।
১. স্পিকার হলেন কাউন্সিলের চেয়ারপার্সন। ২. এই কাউন্সিলে ৩শত হাজার লোক সংখ্যার মধ্যে স্পিকার হলেন ফাস্ট সিটিজেন (প্রথম সদস্য)। ৩. কাউন্সিলের প্রতিটি সভা স্পিকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। স্পিকার প্রতিটি অধিবেশনে প্রত্যেক দলের কাউন্সিলারবৃন্দের কথা বলার অধিকার নিশ্চিত করে থাকেন। ৪. লন্ডনের অন্যান্য কাউন্সিলের সিভিক অনুষ্ঠানে টাওয়ার হ্যামলেটস এর প্রতিনিধিত্ব করেন। ৫. এই কাউন্সিলের ভিতরে যখন দেশী ও বিদেশী ভিআইপি অতিথিদেরকে স্বাগত ও আমন্ত্রণ জানান তাদের কে নিয়ে স্পিকারের অফিসে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন। ৬. স্পিকার বিভিন্ন স্কুল বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করেন। ৭. তিনি কাউন্সিল ও কমিউনিটির মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করেন। ৮. টাওয়ার হ্যামলেটস এ রাজ পরিবারের কোনো সদস্য আসলে তাকে অভ্যর্থনা জানান। ৯. এই কাউন্সিলের মধ্যে যে কোনো মিটিং সভা সমাবেশ হলে স্পিকার আমন্ত্রিত হয়ে থাকেন। অনুষ্ঠানে যদি রাজ পরিবারের কেউ উপস্থিত থাকেন তাহলে ব্যতিক্রম নতুবা স্পিকারকে প্রধান অতিথি হিসাবে রাখতে হয়। ১০. আন্তর্জাতিক কোনো জাহাজ বা যুদ্ধ জাহাজ বিভিন্ন সময় টাওয়ার হ্যামলেট কাউন্সিলের বর্ডারে আসলে স্পিকারের অফিসে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে হয়। ১১. এই কাউন্সিলের এলাকার ভিতরে যারা ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পান তখন স্পিকার তাদের হাতে সিটিজেন সার্টিফিকেট প্রদান করে থাকেন ও নতুন নাগরিকদের কে স্বাগতম জানানো সহ স্পিকার অন্যান্য ভূমিকা পালন করেন। ১২. স্পিকারের দায়িত্ব কাউন্সিলের সংবিধানকে সমোন্নত রাখা। ১৩. কাউন্সিলের কার্যক্রম ও সাফল্য জনগণের সামনে তুলে ধরা। ১৪. বিভিন্ন দিবসে কাউন্সিলের পক্ষ থেকে স্পিকারের নেতৃত্বে পুস্পস্তবক অর্পণ। ১৫. প্রতি বছর ব্রিটেনের রাণী কর্তৃক চা চক্রের আমন্ত্রণে অংশগ্রহন করেন এবং রাজ পরিবারের সদস্যদের সাথে মতবিনিময় করে থাকেন। ১৬. সর্বোপরি কাউন্সিলকে প্রমোট করা, একজন এ্যাম্বসেডর হয়ে কাজ করে থাকেন স্পিকার। ১৭. বাংলাদেশ তথা অন্য দেশ থেকে যখন কোনো মন্ত্রী, এমপি বা মেয়র এই কাউন্সিলে আসেন তখন তাদেরকে নিয়ে মতবিনিময় সভা করার মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা পালন করেন এবং কাউন্সিলদের পক্ষ থেকে তাদেরকে ক্রেস্ট প্রদান করেন স্পিকার। ১৮. অফিসিয়ালভাবে আমন্ত্রণের মাধ্যমে তিনি বিদেশ গমন করতে পারেন। ১৯. তিনি স্পিকার থাকাকালীন সময়ে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের জন্য ফান্ডরাইজিং করে থাকেন।
এছাড়া আরো আনুসাঙ্গিক দায়িত্বগুলো স্পিকারকে পালন করতে হয়। স্পিকারের পি.এ ডায়েরী মেন্টেইন করে থাকেন। স্পিকারের গাড়িতে ক্রেস্ট লাগানো থাকে এবং বিভিন্ন অফিসিয়েল মিটিং এ যেতে হলে স্বর্ণ ও ডায়মন্ডের অফিসিয়াল চেইন পরে তাকে যেতে হয়। যা টাওয়ার হ্যামলেটস এর শত বছরের ঐতিহ্য। স্পিকার যদি বাংলাদেশী বংশভূত হয়ে থাকেন তাহলে বাঙ্গালী কমিউনিটির বিভিন্ন সভা-অনুষ্ঠানে স্পিকারকে অতিথি হিসেবে উপস্থিত করতে পেরে সকলেই উৎসাহবোধ করে থাকেন। ব্রিটেনের মাটিতে প্রবাসী অধ্যুষিত বিশ্বনাথ উপজেলার অনেক কৃতিসন্তান বিভিন্ন পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্টিত রয়েছেন। বিশেষ করে ব্রিটেনের টাওয়ার হ্যামলেটস এই প্রথমবারের মতো বিশ্বনাথের কোন ব্যক্তি স্পিকার বা সিভিক মেয়র পদে অধিষ্টিত হয়েছেন। কৃতিসন্তান কাউন্সিলর মো. আয়াছ মিয়াকে আমরা অভিনন্দন জানাই।