মনিরুল ইসলাম মনি, ব্রাজিল থেকে: বৈশ্বিক মহামারী আর ব্রাজিলে করোনাভাইরাসের ভয়াবহ সংক্রমণের মধ্যেও সীমিত পরিসরে ব্রাজিলিয়ায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব-এর ৯০ তম জন্মবার্ষিকী এবং মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল-এর ৭১তম জন্মবার্ষিকী পালিত হলো। ৭ আগস্ট ২০২০ অপরাহ্নে ব্রাসিলিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য ও প্রাণবন্ত পরিবেশে জাতির জনক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্যা পত্নী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব-এর ৯০তম জন্মবার্ষিকী এবং বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল-এর ৭১তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করে। করোনা মহামারীর কারণে এবং বাজিলিয়া সরকারের আরোপিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুধুমাত্র দূতাবাসের সদস্যদের অংশগ্রহণে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী সকল শহীদ, সম্ভ্রমহারা মা-বোন এবং ১৯৭৫ এর ১৫ই আগস্ট-এর সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। বঙ্গবন্ধুসহ মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ, ১৫ আগস্টে নির্মম হত্যাকান্ডে নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এবং বিদ্যমান করোনা ভাইরাস-সৃষ্ট পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশসহ পুরো পৃথিবীর সকল মানুষকে রক্ষা করার জন্য বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।

দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত বাণীসমূহ পাঠ করা হয়।
অনুষ্ঠানের পরবর্তী অংশে বঙ্গমাতা এবং শেখ কামাল-এর জীবনী ও কর্মের উপর ভিত্তি করে নির্মিত তথ্যবহুল তিনটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
আলোচনা পর্বে রাষ্ট্রদূত মো: জুলফিকার রহমান তাঁর বক্তব্যের শুরুতে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ উপহার দেবার জন্য বঙ্গবন্ধুকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন। এরপর তিনি বঙ্গবন্ধুর জীবনীর উপর আলোকপাত করে স্বাধীনতা অর্জনে তাঁর অবিস্মরণীয় অবদানের কথা উল্লেখ করেন এবং বলেন যে, বঙ্গবন্ধুর বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার পেছনে মহীয়সী নারী বঙ্গমাতার যে অপরিসীম ভূমিকা আছে, তা কোন মতেই ভুলে যাবার নয়। এ আলোচনায় বঙ্গমাতার আন্তরিক, নির্ভীক ও নিরন্তর সাহচর্য বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশের বিজয়ের জন্য কতখানি গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা বারংবার উচ্চারিত হয়। তিনি বঙ্গবন্ধুর জীবনের কিছু স্মৃতিচারণ করেন এবং ঐ ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে তিনি বঙ্গমাতার অবদান ব্যাখ্যা করেন। মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক পটভূমি বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন যে, বঙ্গবন্ধু যখন ৭ই মার্চের ভাষণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখন বঙ্গমাতা তাঁকে সাহস যুগিয়েছিলেন, তাঁর মনের কথা প্রকাশ করতে উৎসাহিত করেছিলেন। কোন লিখিত স্ক্রিপ্ট ছাড়াই বঙ্গবন্ধু সেদিন যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধের দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, যার ফলশ্রুতিতে আমরা পেয়েছিলাম স্বাধীনতা, সেই ভাষণই আজ বাংলাদেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। বিশ্ব পেয়েছে এক অনন্য সাধারণ দূরদর্শী রাজনৈতিক ভাষণ। আর এসব অনন্য অর্জনে বঙ্গমাতার বুদ্ধিদীপ্ত অবদান রাষ্ট্রদূত কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন।
রাষ্ট্রদূত এরপর বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র শহীদ শেখ কামাল এবং তাঁর পিতার মধ্যকার সম্পর্ক বিশ্লেষণ করেন একজন পিতা এবং একজন পুত্রের দৃষ্টিকোণ থেকে। রাজনৈতিক কারণে বঙ্গবন্ধু কিভাবে তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্রের জন্মের সময়ও উপস্থিত থাকতে পারেননি, এমনকি ছোটবেলায় বঙ্গবন্ধু যে তাঁর পিতা এটাও ছোট্ট কামাল বুঝতে পারেননি, আর কি করুণভাবে তিনি তাঁর হাসু-আপার আব্বাকে ‘আব্বা’ বলে ডাকার আবদার করেছিলেন, সেসবও উঠে আসে রাষ্ট্রদূতের আবেগঘন স্মৃতিচারণায়। সেই কঠিন শিশুকাল আর শৈশব পেরিয়ে শেখ কামাল তাঁর মাত্র ২৬ বছরের জীবনে বাংলাদেশের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণে যে আধুনিকতার সূত্রপাত ঘটান, তার বিস্তারিত উল্লেখ করে মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামালের কর্মবহুল জীবন কিভাবে আজকের বাংলাদেশের ক্রীড়া ও সাংষ্কৃতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে সে বিষয়েও রাষ্ট্রদূত আলোচনা করেন।
রাষ্ট্রদূত জুলফিকার তাঁর বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সকলকে একযোগে কাজ করে যাওয়ার আহবান জানান। তিনি আরো বলেন যে, করোনা পরিস্থিতি অর্থনৈতিকভাবে পুরো পৃথিবীকেই এক বিশাল চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশের ক্রম:অগ্রসরমান অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরো বেশী নিবেদিত হয়ে আগামী দিন গুলোতে কাজ করে যাওয়ার আহবান জানান।