অসীম বিকাশ বড়ুয়া, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে: পৃথিবীর অন্যতম মানবাধিকারের দেশ বলে খ্যাত দঃ কোরিয়াতে সম্প্রতি দংদোছন, নামিয়াংজু সহ বিভিন্ন অঞ্চলে বিদেশি কর্মীদের মধ্যে কোভিডের ক্লাস্টার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায় তথা শ্রমিক এবং স্থানীয়দের মধ্যে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে দেওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য গিয়ংগি প্রদেশের ৩১ অঞ্চলের প্রায় দুই হাজার ৫০০ শত কর্মক্ষেত্রের ৮৫০০০ বৈধ অবৈধ সকল অভিবাসীদের বাধ্যতামূলক ২২ মার্চের মধ্যেই ফ্রি করোনা টেস্ট করার নির্দেশ দিয়েছে প্রদেশটির ভাইস গভর্নর লি ইয়ং চুন।
জানা যায়, ১০ হাজার ১৭১ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গিয়ংগি প্রদেশে ৩১ টি অঞ্চল রয়েছে। যেখানে দেশটির মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ কোরিয়ান বসবাস করে। সরকার ঘোষিত বিদেশি কর্মীদের বাধ্যতামূলক করোনা টেস্ট করার জন্য রেড জোন অঞ্চল গুলো হলো- দংদোছন, ওসান, নামিয়াংজু, পিয়ংটেক, হোয়াসং, সুয়ন, আনসান, গুনপো, সিহং, আনিয়াং, উইওয়াং, সংনাম, গাচ্ছন, গোয়াংমিয়ং, বুচ্ছন, গিম্পু, গয়াং, পাজু, উইজংবু, ইয়াংজু, ইয়াংছন, পুচ্ছন, গুরি, গাপিয়ং, হানাম, আনসং, ইয়ংইন, ইচ্ছন, ইয়জু, খোয়াংজু ও ইয়াংপিয়ং অঞ্চল।

সরকারি তথ্য অনুসারে গত দুই মাসে ১ হাজার ৭ শত ৪৭ জন বিদেশি নাগরিকের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি দংদোছন এলাকার একটি কোম্পানীতে ৮০ জন সহ মোট ১৫১ জনের এবং নামিয়াংজু এলাকার একটি প্লাস্টিক কোম্পানীতে ১২৪ জন বিদেশি কর্মীর করোনা পজিটিভ পাওয়া যাওয়ার কারণে বেসামাল পরিস্থিতি সহ কোরিয়া সরকারের উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রশাসনিক আদেশে বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে করোনা পরীক্ষা না করলে ২০ লক্ষাধিক ওন বা ১৭৭৪ মার্কিন ডলারের অধিক জরিমানা দন্ড সহ করোনা ভাইরাস সংক্রমণের জন্য দায়ী লঙ্ঘন কারীদের প্রাসঙ্গিক পরীক্ষা, তদন্ত এবং চিকিৎসার অর্থ ফেরতের জন্য আদেশ দেওয়া হতে পারে।
অপরদিকে সিউল সরকার প্রশাসনিক আদেশ জারি করেছিল যে, সিউল অঞ্চলের সমস্ত বিদেশি কর্মীদের করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়া রোধে ১৭ থেকে ৩১ মার্চের মধ্যে বাধ্যতামূলক করোনা টেস্ট করাতে হবে। এদিকে আমেরিকা চেম্বার অব কমার্স ইন কোরিয়া, বিদেশি চিকিৎসা কর্মী এবং মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবাদ ও সমালোচনার পরে ১৯ মার্চ ২০২১, শুক্রবার সিউলের সমস্ত বিদেশি কর্মীদের বাধ্যতামূলক করোনা টেস্ট করার প্রয়োজনের আদেশটি প্রত্যাহার ঘোষণা করে সিউল সিটি সরকার। সিউল সিটি কর্পোরেশন জানায়, এখন কেবলমাত্র উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ কর্মস্থলে বিদেশি কর্মীদের যেমন: ঘনিষ্ঠ, ঘন ও ঘেরা কাজের পরিবেশে থাকা কর্মীদের এবং একই প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত কোরিয়ানদের পরীক্ষা করার জন্য সুপারিশ করছে।

কোরিয়া জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান চো ইয়ং বলেছেন, বিদেশিরা এই আদেশকে বৈষম্য বলে অভিহিত করে আমাদের কাছে আবেদন করে বলেছে তারা ঘৃণা ও বর্ণবাদ অনুভব করছে। তাই তদন্ত শুরু হওয়ার পর শুক্রবার এই পরিবর্তন এসেছে। কোরিয়া হেল্লিম ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের প্রফেসর লি জে গ্যাপ জাতীয় পত্রিকা কোরিয়া হেরাল্ডকে বলেন, এটা হাস্যকর, মহামারী পরিস্থিতিতে বিদেশিরা কিভাবে কোরিয়ানদের থেকে আলাদা? কোরিয়ানদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র সমস্ত বিদেশিদের করোনা পরীক্ষার আদেশ, এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল।
এদিকে, গিয়ংগি প্রদেশের বিদেশিদের নতুন চাকরি সন্ধানের সময় কোভিড-১৯ নেগেটিভ সার্টিফিকেট জমা দেওয়ার আদেশটি প্রত্যাহার করেছে দেশটির সরকার এবং শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ২২ মার্চের মধ্যেই গিয়ংগি প্রদেশের বিদেশিদের বাধ্যতামূলক করোনা পরীক্ষা করার নির্দেশনা সম্বলিত সরকারি মেসেজ প্রত্যেক বিদেশি নাগরিকের মোবাইলে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে পরীক্ষা কেন্দ্রে হাজার হাজার প্রবাসীদের উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষিত হয়েছে। টেস্ট করাতে গিয়ে যাতে করোনা সংক্রমণ না হয় সে পরামর্শ দিয়ে ইপিএস কর্মীদের একমাত্র প্রশিক্ষক শেখ মুরাদ হোসেন স্যার বলেন, লোকজনের কাছাকাছি না গিয়ে নিরাপদে পরীক্ষা করাতে হবে। বৈষম্য বিষয়ে গিম্পু সিটি মেয়রের বিদেশিদের প্রধান উপদেষ্টা তাজুল ইসলাম টনি বলেন, সবার মঙ্গলের জন্যই ফ্রি করোনা টেস্ট করছে সরকার। এখানে বৈষম্যের কিছু নেই।
বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা যায়, বৈধ এবং ভিসাবিহীন বিদেশি কর্মীদের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করার জন্য পরীক্ষা কেন্দ্রে যেসব তথ্য সংগ্রহ করা হবে তা শুধুমাত্র মহামারী প্রতিরোধ সংক্রান্ত কাজে ব্যবহার করা হবে এবং পরীক্ষা কেন্দ্রে ভিসাহীন লোকদের বিরুদ্ধে এদেশের ইমিগ্রেশন বিভাগ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করবেনা।