প্রবাস মেলা ডেস্ক: ২০১৮ সালে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মারা গেছেন প্রায় ৩৮০০ বাংলাদেশি শ্রমিক। ২০০৫ সালের পর এক বছরে এ সংখ্যা সর্বোচ্চ। বিশেষজ্ঞরা বলছে, বিদেশে মারা যাওয়া বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা এভাবে বাড়ার সাথে তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণের বিষয়টিও জড়িত রয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।
‘হোয়াই আর সো ম্যানি ওভারসিস বাংলাদেশি ওয়ার্কার্স ডাইং?’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জর্ডানে মারা যান বাংলাদেশি এক যুবতী শ্রমিক। তার মৃত্যুতে ক্ষোভ দেখা দেয়। দাবি ওঠে, কী কারণে বিদেশে কাজ করতে গিয়ে প্রাণহীন দেহ হয়ে ফেরত আসা শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে তা খুঁজে বের করতে হবে।
২০১৭ সালে মৌসুমী আক্তার (২০) ৫০০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে জর্ডান পৌঁছেন একজন গৃহকর্মী হিসেবে। পরিবারের মুখে হাসি ফুটিয়ে ভালো রাখাই ছিল তার সেখানে যাওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য। কিন্তু দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তাকে ফিরে আসতে হয়েছে মৃত অবস্থায়। ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, সরকারের প্রকাশিত নতুন ডাটা অনুযায়ী গত বছর বিদেশে কাজ করতে গিয়ে মারা গেছেন বাংলাদেশি ৩৭৯৩ জন শ্রমিক। তাদেরই একজন মৌসুমী আক্তার।
রিপোর্টে বলা হয়, জর্ডানে মৃত মৌসুমী আক্তারের চাচা মোহাম্মদ ইমরান খান বলেছেন, জর্ডান থেকে পাঠানো মৌসুমীর মেডিকেল রিপোর্ট অনুযায়ী স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে তার। কিন্তু তার দেহ দেশে আসার পর আমরা তাতে কালো কালো চিহ্ন দেখতে পেয়েছি। এ থেকে বোঝা যায়, তাকে নির্যাতন করা হয়েছিল। আর সে কি কারণেই বা স্ট্রোকে আক্রান্ত হবে? তার বয়স মাত্র ২০ বছর। তিনি দাবি করেন, এ জন্য সরকারের উচিত ছিল তার মৃত্যুর আসল কারণ উদঘাটনে দ্বিতীয়বার ময়না তদন্ত করা। তিনি বলেন, বিদেশ থেকে যেকোনো মৃতদেহ দেশে এলেই তার দ্বিতীয়বার ময়না তদন্ত হওয়া উচিত।
সরকারি ডাটা থেকে দেখা যায়, ২০১৭ সালে ১০ লাখের বেশি বাংলাদেশি কাজ নিয়ে বিদেশে গেছেন। এ সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছে, ক্রমবর্ধমান হারে মারা যাওয়ার ফলে অনেক অভিবাসী শ্রমিকের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে।
ওই রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, তৈরি পোশাকের পরেই বাংলাদেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স আসে অভিবাসী শ্রমিকদের কাছ থেকে। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত প্রকৃত সত্য ঘটনাগুলো তাদের পরিবারের কাছে তুলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া। তা না হলে বাংলাদেশের বৈদেশিক শ্রমবাজারে দীর্ঘ মেয়াদী ঝুঁকির সম্ভানা এড়িয়ে দেয়া যায়না।