এক. বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নারী। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে চাইলে এই বিপুল সংখ্যক নারীকে কোনভাবেই অবহেলা করা যাবেনা। স্বাধীনতার পর থেকে নানা সময়ে নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তন্মধ্যে, জনশক্তি রপ্তানীর অংশ হিসেবে প্রবাসে নারীকর্মীদের প্রেরণ অন্যতম। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তারা বিরাট ভূমিকা রাখলেও প্রয়োজনীয় মনিটরিং ও নিরাপত্তার অভাবে তাদের অনেককে বিদেশ থেকে নানা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন হজম করে দেশে ফিরতে হচ্ছে।
দুই. বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)’র তথ্যানুযায়ী প্রায় ৭ লাখের অধিক নারীকর্মী মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে কর্মরত আছেন, যাদের প্রায় ৩ লাখই সৌদিআরবে থাকেন। নিজের জীবন, পরিবারের উন্নতির জন্য এসকল উদ্যোগী নারীরা কাজের জন্য বিদেশ গেলেও অধিকাংশই সেখানে নানাভাবে হয়রানির শিকার হন। তাদেরকে গরম কিছু দিয়ে ছ্যাঁকা দেওয়া, বৈদ্যুতিক শক দেওয়া, অতিরিক্ত কাজ করানো, পাসপোর্ট রেখে দেওয়া, নিয়মিত বেতন না দেওয়া, খাবার খেতে না দেওয়াসহ যৌন ও মানসিক নির্যাতন তো অনেকটা নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিন. প্রায় প্রতিদিনই আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে জানতে পারি যে, সৌদিআরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ থেকে নারীশ্রমিকরা সবকিছু হারিয়ে দেশে ফেরত আসছেন। কি জন্য আসছেন সেটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অজানা নয়। কিন্তু এতকিছুর পরও দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই।
চার. বিদেশে কর্মরত এসব নারীশ্রমিকদের অনুকূল পরিবেশে কাজ করার জন্য জনশক্তি রপ্তানীকারক এজেন্সি, সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবং দূতাবাসগুলোকে আরও আন্তরিক হতে হবে। প্রয়োজনবোধে অনিয়মগুলো আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশে শ্রমিকের অধিকার ও মর্যাদার প্রশ্নে চুক্তি করে করে নারীশ্রমিক পাঠানো যেতে পারে। দেশের সার্বিক উন্নয়ন তথা নারীর ক্ষমতায়নের পথ প্রশস্ত করতে প্রবাসে নারীদের কর্মসংস্থানে নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত করার কোন বিকল্প নেই। এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের জরুরী পদক্ষেপের জোর দাবি জানাচ্ছি।
সবাইকে পবিত্র ঈদ উল আজহার শুভেচ্ছা।
সবাই সুস্থ্য থাকুন, ভালো থাকুন, নিরাপদে থাকুন।