কাফি কামাল, বার্মিংহাম, ইংল্যান্ড থেকে: ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রহ ও প্রচার’ শীর্ষক একটি আকর্ষণীয় প্রকল্প গ্রহণ করেছে নিউ হোপ গ্লোবাল। যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে দক্ষিণ এশীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য সম্পর্কে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং পরিবেশনের উপর গুরুত্ব দেবে প্রতিষ্ঠানটি। এই প্রকল্পের জন্য তারা ন্যাশনাল হেরিটেজ ফান্ড থেকে অনুদানও পেয়েছে। এই উপলক্ষে সম্প্রতি একটি ভার্চুয়াল আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল নিউ হোপ গ্লোবাল। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফয়েজ উদ্দিন এমবিইর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য কনজারভেটিভ পার্টির ডেপুটি চেয়ার ও সাবেক এমইপি আন্থিয়া এলিজাবেথ ম্যাকইনটায়ার প্রধান অতিথি এবং ওয়েস্ট মিডল্যান্ড রিজিউনের সাবেক এমইপি ফিলিপ বেনিয়ন প্রধান বক্তা হিসেবে অংশ নেন। আলোচনা সভায় বাংলাদেশ থেকে সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম; সাবেক মন্ত্রী জাকারিয়া খান চৌধুরী; মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির সাবেক ভিসি ও মুক্তিযুদ্ধ স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ড. কবির চৌধুরী; সাধনা বাংলাদেশের আর্টিস্টিক ডিরেক্টর ও সেক্টর কমান্ডার কর্নেল কাজী নুরুজ্জামান তনয়া লুবনা মরিয়াম, জাস্টিস অব পিস আবদুল লতিফ, ড. পিটার রোকস আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন প্রকল্প সমন্বয়ক ড. মারুফ আহমেদ ও প্রকল্প পরিচালক জুমা বেগম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কনজারভেটিভ পার্টির ডেপুটি চেয়ার আন্থিয়া এলিজাবেথ ম্যাকইনটায়ার প্রকল্পের সাফল্য কামনা করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের গর্বিত ও উজ্জ্বল অধ্যায়। বার্মিংহামের নতুন প্রজন্মের কাছে সে ইতিহাস পৌঁছে দিতে নিউ হোপ গ্লোবালের এই উদ্যোগ আশাকরি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রধান বক্তা ফিলিপ বেনিয়ন বলেন, বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর উপর মুক্তিযুদ্ধের প্রভাব অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। বাংলাদেশের মানুষের দেশপ্রেম, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশে প্রেরণার কেন্দ্রস্থল মহান মুক্তিযুদ্ধ। আমার বিশ্বাস এই প্রকল্পের মাধ্যমে বার্মিংহামের তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের অদ্ভূদ্যয় সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করতে পারবে। আলোচনা সভায় মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম; জাকারিয়া খান চৌধুরী; ড. কবির চৌধুরী ও লুবনা মরিয়াম মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনসমর্থন সৃষ্টি ও রণাঙ্গনের স্মৃতিচারণ করেন। যুক্তরাজ্যে বসবাসরত নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয়ায় নিউ হোপ গ্লোবালকে সাধুবাদ জানান। নিউ হোপ গ্লোবালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফয়েজ উদ্দিন এমবিই বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার গর্বিত ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে বার্মিংহামের নাম। বার্মিংহামে বসবাসরত সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে পরিচিত করার লক্ষ্যে এই প্রকল্পটি গ্রহন করা হয়। প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য আমি ন্যাশনাল হেরিটেজ ফান্ডকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। সেইসাথে বার্মিংহামের কমিউনিটিতে বাংলাদেশ স্বাধীনতার গর্বিত ইতিহাসকে ধরে রাখতে সবার প্রতি সহযোগিতার আহবান রইল।
উল্লেখ্য, মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে বার্মিংহামের। এই শহরে বসবাসরত বাঙালিরা ১৯৬৯ সালে গঠন করেছিল পূর্ব পাকিস্তান মুক্তি ফ্রন্ট। কিন্তু বার্মিংহামের, বিশেষত দক্ষিণ এশীয় সম্প্রদায়ের তরুণ প্রজন্মের কাছে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ইতিহাস অজানা। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এই প্রকল্প গ্রহণ করেছে নিউ হোপ গ্লোবাল। প্রকল্পের আওতায় যুদ্ধের ডকুমেন্টারি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আলোচনা, যুদ্ধের গল্প ও সাক্ষাত্কার, চিত্র-চারু ও কারুশিল্প কর্মশালা ও প্রদর্শনী এবং মুক্তিযুদ্ধের উপর নাটিকা প্রদর্শন করা হবে। প্রতিষ্ঠানটির প্রত্যাশা বার্মিংহামে বসবাসরত বাংলাদেশী জনগোষ্ঠীর অন্তত ৫০০ জন এই প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারবেন। প্রকল্পের স্বেচ্ছাসেবীরা তাদের সাক্ষাত্কার গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য লিপিবদ্ধ করবে। সাক্ষাত্কার অনুলিখন, অনুবাদ ও অনুলিপি তৈরি এবং গবেষণার ভিত্তিতে একটি প্রামান্য গ্রন্থ প্রকাশ করা হবে। কর্মকর্তা এবং স্বেচ্ছাসেবীদের ওরাল হিস্ট্রী, আর্কাইভ স্কীলস এবং গ্রাফিক্স ডিজাইন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ থাকবে। এই প্রকল্পটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্য চিহ্নিত করা ও ব্যাখ্যা করা, সংঘাতের ঘটনা সম্পর্কে মানুষকে আলোকিত করা এবং বাংলাদেশী ও পাকিস্তানি সম্প্রদায়ের মধ্যে বন্ধু-সুলভ আলোচনার জন্য এবং মৈত্রী বাড়ানোর জন্য কাজ করবে। প্রকল্পের অধীনে তিনটি পত্রিকা, একটি বই এবং মৌখিক ইতিহাস সাক্ষাত্কারের একটি ডকুমেন্টারিও তৈরী করা হবে- যা বার্মিংহামের লাইব্রেরিতে সংরক্ষণ করা হবে। এই প্রকল্পের অন্যতম গবেষক ও বাংলাদেশ প্রতিনিধি বিশিষ্ট সাংবাদিক জামালউদ্দীন প্রকল্পের বাংলাদেশ অংশের সমন্বয় সাধন করবেন। উল্লেখ্য, নিউ হোপ গ্লোবাল ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের চ্যারিটি কমিশনে নিবন্ধিত একটি সমাজসেবা প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটি সমাজের সদস্যদের ব্যক্তি ও পরিবার হিসাবে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের জন্য বিস্তৃত পথপ্রদর্শন এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে আমাদের সমাজে সুবিধাবঞ্চিতদের সহায়তা করে থাকে। বার্মিংহাম এবং এর আশেপাশের অঞ্চলে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের সক্ষমতা এবং দক্ষতা বিকাশের প্রাথমিক লক্ষ্যের ভিত্তিতে নিউ হোপ গ্লোবাল নানা প্রকল্প গ্রহন ও বাস্তবায়ন করে। এছাড়া বেকারদের পেশাগত বিকাশে সহায়তা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, পরিবেশ সুরক্ষা, মানসিক সঙ্কট রোধ, শিক্ষা ও ক্রীড়া উন্নয়নের প্রচার চালিয়ে তৃণমূল পর্যায়ের সামাজিক কল্যাণমূলক কাজের প্রতি এবং শিল্প, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যগত অগ্রগতিতে কাজ করে।