হাকিকুল ইসলাম খোকন, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি: নিউয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল ৩০ জুন ২০২২ ‘বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের পঞ্চাশ বছর: বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশ’ বিষয়ক একটি গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। বৈঠকে মূলধারার যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী, একাডেমিক, সাংস্কৃতিক ও মিডিয়া ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ করে যারা সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সফর করেছেন। দি সোসাইটি এন্ড ডিপ্লোমেটিক রিভিউর প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক মিজ্ গ্লোরিয়া স্টার কিনস, এমপেঞ্জো ইন্ডাস্ট্রিয়াল গার্মেন্টস প্রাঃ লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব হালিল আকদোগান এবং ট্রাভেল জার্নালিস্ট পিটার স্টুয়ার্ড গাটম্যান তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
গোল টেবিল বৈঠককালে, বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপট ও বাস্তবতায় বৈশ্বিক ও আঞ্চলিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে বক্তারা আলোচনা করেন। এ সময়ে কনসাল জেনারেল ড. ইসলাম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত পররাষ্ট্র নীতির মূল প্রতিপাদ্য ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারও সাথে বৈরিতা নয়’ উল্লেখ পূর্বক বাংলাদেশের সাথে প্রতিবেশীসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মধ্যেকার বিরাজমান সম্পর্কের উপর আলোকপাত করেন। ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-অর্থনৈতিক বিবেচনায় বাংলাদেশ ক্রমবর্ধমান হারে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে বলে কনসাল জেনারেল যোগ করেন। বৈঠকে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নানা দিক উঠে আসে যার মধ্যে প্রাধান্য পায় রোহিঙ্গা ইস্যু, জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা, ব্যবসা বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতাসমূহ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে যে অভাবনীয় উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তা বর্ণনা করে কনসাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম বলেন যে, বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। দারিদ্র বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলা এবং বিশ্বশান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের ভূমিকা বিশ্ব নেতৃত্ব দ্বারা স্বীকৃত ও প্রশংসিত হচ্ছে বলে কনসাল জেনারেল মন্তব্য করেন। ভৌগোলিকভাবে কৌশলগত সুবিধাজনক অবস্থান, তারুণ্যের প্রাচুর্যতা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিভিন্ন ধরনের ট্যাক্স ও ট্যাক্স বর্হিভূত সুবিধাসমূহ বিবৃত করে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বিনিয়োগ বান্ধব গন্তব্য বলে আখ্যায়িত করেন। বিকাশমান বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহের প্রাপ্ত সুবিধাসমূহের বর্ণনা দিয়ে বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পপতি ও বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশে বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে তিনি অন্যান্যের মধ্যে নবায়ণযোগ্য জ্বালানী, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, তথ্য প্রযুক্তি, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও পর্যটন খাত সমূহের কথা বিশেষভাবে চিহ্নিত করেন।
বৈঠকে অংশগ্রহণকারী অতিথিবৃন্দ বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করার সময় বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন অগ্রযাত্রার প্রশংসা করার পাশাপাশি বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্বপূর্ণ ক্রমবর্ধমান সম্পর্ককে আরো শক্তিশালী ও কার্যকর করার পক্ষে অভিমত পোষণ করেন। তারা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বিচিত্রতা ও জনগণের আতিথেয়তায় দারুনভাবে মুগ্ধ হয়েছে মর্মে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। এ বছরটি বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি হওয়ায় তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে অভিহিত করেন এবং দু’দেশের মধ্যেকার ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও গবেষণা সহযোগিতাসমূহকে আরও বেগবান ও ফলপ্রসূ করার উপর জোর গুরুত্ব আরোপ করেন। প্রসঙ্গক্রমে, প্রবাসী বাংলাদেশীদের মেধা, শ্রম ও সৃজনশীলতার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও গভীর ও প্রসারিত করার ক্ষেত্রে তারা শক্তিশালী নিয়ামকের ভূমিকা পালন করছে বলে অতিথিবৃন্দ যোগ করেন।
আমন্ত্রিত অতিথিদেরকে বিভিন্ন প্রকার ঐতিহ্যবাহী দেশীয় খাবার পরিবেশনের মধ্য দিয়ে কর্মসূচী পরিসমাপ্তি ঘটে।