আখি সীমা কাওসার, রোম, ইতালি প্রতিনিধি: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘প্রথম অর্থনৈতিক কূটনীতি’ সপ্তাহ পালনের অংশ হিসেবে ৩০ জুন ২০২২ বাংলাদেশ দূতাবাস, রোম বাংলাদেশ ও ইতালির মধ্যে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য প্রসারের জন্য ‘Mapping Exercise: Bangladesh-Italy Trade and Investment Opportunities’ শীর্ষক একটি আলোচনা সভা স্থানীয় একটি হোটেলে আয়োজন করে।
ইতালি, মন্টেনিগ্রো ও সার্বিয়াতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জনাব মো: শামীম আহসান তাঁর স্বাগত বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলেন যে বঙ্গবন্ধু একটি ‘সোনার বাংলা’ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি আরো বলেন যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ২৫ জুন ২০২২ সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের সুসংবাদ উপস্থিত সবাইকে জানান। দূতাবাস কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠান ইতালি ও বাংলাদেশের ব্যবসায়ী এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে বলেন যে, এক্ষেত্রে দু’দেশের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে এবং সম্ভাবনাসমূহ কাজে লাগিয়ে দু’দেশের বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে গতিশীলতা আনয়নে যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তীর কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন যে, তিনি আশাবাদী যে ইতালির বিনিয়োগকারীগণ বাংলাদেশে অধিকতর বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণলায় এর সচিব (পশ্চিম) রাষ্ট্রদূত জনাব সাব্বির আহমেদ চৌধুরী অর্থনৈতিক মুক্তিকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মুল লক্ষ্য হিসেবে উল্লেখ করে বলেন যে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন টেকসই উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু। তিনি তাঁর বক্তব্যে ফুড প্রসেসিং, কৃষি, প্রযুক্তি, ব্লু ইকোনমি প্রভৃতি খাতে বিনিয়োগের সম্ভাব্য ক্ষেত্র বের করে দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো জোরদার করার আহবান জানান। ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের প্রতিনিধি, দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের প্রধান জনাব জিয়ানপাওলো নেরি (Mr. Gianpaolo Neri) বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রার ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক দৃঢ়তর করতে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এর নির্বাহী চেয়ারম্যান জনাব মোঃ সিরাজুল ইসলাম বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিভিন্ন ক্ষেত্র, সম্ভাবনা ও সুযোগ সুবিধা গুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরে দু’দেশের মধ্যে একটি “বিজনেস কাউন্সিল” গঠনের উপর গুরুত্ব প্রদান করেন।
দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে ইতালির বিনিয়োগকারি ও ব্যবসায়ীদের নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশ বিনিয়োগ এবং দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নে একযোগে কাজ করবেন বলে জানান। টেক্সটাইল, চামড়া শিল্প, নবায়নযোগ্য শক্তি, কৃষি এবং ফুড প্রসেসিং, ফুড রিটেলিং এবং বেকারি, আইসিটি, সিরামিকস, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, পাট এবং পাটজাত পণ্য, সোলার মডিউল, সুনীল অর্থনীতি, রোবোটিকস, স্বাস্থ্য সেবা খাতের যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি ইত্যাদি খাতসমূহকে দু’দেশের সহযোগিতার সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিভাগের মহাপরিচালক, ইপিবির মহাপরিচালক, এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বেসিস (BASIS), এলএফএমইএবি, এপেক্স (Apex) ফুটওয়্যার এর প্রেসিডেন্ট এবং ওয়াল্টন, ই-ক্যাব এর প্রতিনিধিবৃন্দ এবং ইতালির পক্ষে নিউ দিল্লিতে অবস্থিত ইতালির দূতাবাসের ট্রেড কমিশনার, ইটা (ITA), কনফিন্ডাস্ট্রিয়া (Confindustria), এআইসিই (AICE), রিফলাইন (Rifline), এনি (ENI), মাগালদি পাওয়ার (Magaldi Power), ডিএম ইটালিয়া (DM Italia s.r.l) এর প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নেন। নেপোলি ও ফ্লোরেন্স এ বাংলাদেশের অনারারি কনসাল জেনারেলগণও আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। দুই দেশের বিনিয়োগকারি ও ব্যবসায়ীরা তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা আলোচনায় তুলে ধরেন যা একটি নতুন মাত্রা যোগ করে। ইতালির পক্ষে এনি, লিওনার্দো (Leonardo), মাগালধি পাওয়ার (Magaldi Power), রিফলাইন (RifLine), ব্রাচি (Brachi), ইডিওজি (iDOGI), ডিএম ইটালিয়া (DM Italia s.r.l) এবং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিজিএমইএ, এপেক্স, ওয়ালটন এর প্রতিনিধিরা তাদের আশাবাদ এবং নতুন দিগন্ত উন্মোচনে সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। হাইব্রিড ফরমেটে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সবাই একমত হন যে, এটি দুই দেশের মধ্যে দৃঢ় অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা পরে মধ্যাহ্ন ভোজে অংশগ্রহণ করেন। দূতাবাস ০১ জুলাই ২০২২ অনুষ্ঠানটির উপরে একটি ‘মিট দ্যা প্রেস’ আয়োজন করে যেখানে ইতালি ও ঢাকা থেকে অনেক সাংবাদিক যোগদান করেন।
ইতালি-বাংলাদেশ এর দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় ২.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ইতালি বাংলাদেশের ষষ্ঠ বৃহত্তম রপ্তানি বাজার। বাংলাদেশ দূতাবাস সরকারের অনুসৃত “অর্থনৈতিক কূটনীতি”র ধারাবাহিকতায় সক্রিয়ভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।