মহিউল করিম আশিক, দুবাই, ইউএই প্রতিনিধি: বাংলাদেশ ইকোনমিক ফোরামের তথ্য অনুসারে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (৩৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন দিরহাম) বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিনিয়োগকারীরা। ১৫ সেপ্টেম্বর রবিবার দুবাইয়ের কনরাড হোটেলে বাংলাদেশ ইকোনমিক ফোরামের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশে বিনিয়োগের এ ঘোষণা দেয়া হয়।
বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য কয়েকটি প্রকল্পসহ পাঁচটি মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল করার ঘোষণা দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কের উন্নয়ন বিষয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। প্রায় ২৫টি নতুন বিনিয়োগ প্রকল্প বাংলাদেশ ইকোনমিক ফোরামে সামনে উপস্থাপন করা হয়। যেখানে বিনিয়োগকারীরা সালমান এফ রহমান ও সফররত বাংলাদেশের সরকারি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে তাদের প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করেন।
এ সময় জানানো হয়, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগকে (এফডিআই) তরান্বিত করতে বাংলাদেশ একশ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ২৮টি হাইটেক পার্ক নির্মাণ করছে। ফলে গত বছরে বিনিয়োগের পরিমাণ ৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে তিন দশমিক ৬১ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।’
সম্মেলনে জানানো হয়, এশিয়ান ইনফ্রাক্টাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) এর মতে- ২০২১ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশে অবকাঠামো খাতে বার্ষিক ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন। এআইআইবি তথ্য অনুসারে, ২০১৭ সালে অবকাঠামোগত কাজে বিনিয়োগ দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে ৩১ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে হয়েছে। যা ২০১৮ সালে আরও বেড়ে ৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। বাংলাদেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম ৩০তম দেশে পরিণত হতে হলে শুধু অবকাঠামো খাতে ৩২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে।
এ সময় দুবাইয়ের কনরাড হোটেলে বাংলাদেশ ইকোনমিক ফোরামের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এবং বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষর (বিএইচটিপিএ) কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত ২০ সদস্যের সরকারি প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সালমান এফ রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে অর্থনীতিতে সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিত্তিক স্থানীয় ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে আগ্রহ দেখে আমি অত্যন্ত খুশি।’ ‘আমরা সবসময় চীন, জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বড় ধরনের বিনিয়োগ দেখে আসছি। এখন আমরা বিশ্বাস করি জিসিসিভুক্ত দেশগুলো বিশেষ করে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ মাধ্যমে স্বল্প ব্যয়, অপারেশনস এবং উচ্চতর রিটার্নের সুবিধা নেয়া উচিত।’ ‘সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জিসিসিভুক্ত দেশগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রধান উৎস হতে পারে। দেশের ভবিষ্যত অর্থনীতি গঠনে সহায়তা করতে এ বিনিয়োগের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’ ‘বাংলাদেশ সরকার ও বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে বাংলাদেশ একশ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ২৮টি হাইটেক পার্ক নির্মাণ করছে। মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলের ধারণা বাস্তবায়ন করতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিনিয়োগকারীদের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ একটা সুযোগ।
উপসাগরীয় অঞ্চলে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সরকারের তিনটি বিনিয়োগ প্রচার সংস্থা বিডা, বেজা ও বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নেয়। এই সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ ইকোনমিক ফোরাম যা সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসকারী বাংলাদেশি পেশাজীবী ও উদ্যোক্তাদের একটি বেসরকারি উদ্যোগ।
বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে ব্যবসা ও বিনিয়োগের ধারা শক্তিশালী করতে দিনব্যাপী বিনিয়োগভিত্তিক এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ৩০০ জনেরও বেশি সরকারি কর্মচারী, ব্যবসায়িক নেতারা, বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তারা অংশগ্রহণ করেন।