প্রবাস মেলা ডেস্ক: সম্প্রতি প্রবাস মেলা অফিস ভিজিট করেছেন সুনামগঞ্জ জেলার কৃতি সন্তান স্কটল্যান্ড প্রবাসী এনামুল হক চৌধুরী। এ সময় তিনি প্রবাস মেলার কলাকুশলীদের সঙ্গে চা-চক্রে অংশ নিয়ে প্রবাস জীবন এবং দেশে বিনিয়োগ নিয়ে খোলামেলা আলাপ করেছেন।
প্রসঙ্গত-এনামুল হক চৌধুরী ১৯৬৭ সালে দক্ষিণ সুরমা থানার জালালপুর ইউনিয়নের রায়খাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জালালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে জালালপুর দ্বিপাক্ষিক উচ্চবিদ্যালয় থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন। পরে সিলেট মদন মোহন কলেজ থেকে ১৯৮৫ সালে এইচএসসি শেষ করে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মুরারিচাঁদ কলেজ (এমসি কলেজ) থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেন। নয় ভাই ও চার বোনের মধ্যে এনামুল হক অষ্টম।
ব্যবসা
৯০ এর দশকের শুরুতে ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করেন এনামুল হক চৌধুরী। তিনি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার ছিলেন। এছাড়া সিভিল এভিয়েশনের লাইসেন্স থাকলেও সেখানে তেমন একটা কাজ করেননি বলে জানান। ঠিকাদারি ব্যবসার পাশাপাশি সুনামগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে বড় খামার ছিল এনামুল হকের। তিনি সেগুলো নিজে দেখাশোনা করতেন। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এনামুল হক ঠিকাদারি ও পারিবারিক ব্যবসা দেখাশোনা করেছেন।

প্রবাস জীবন
দেশে ব্যবসায় খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি এনামুল হক। একপর্যায়ে বৈবাহিক সূত্রে ১৯৯৭ সালের মার্চ মাসে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। পরিবার এবং আত্মীয় স্বজনদের অনেকে সেখানে থাকায় এনামুল হকের আগে থেকেই প্রবাস জীবন সম্পর্কে ধারণা ছিল। শুরুতে তিনি বার্মিংহামে শ্বশুর বাড়িতে ছিলেন। সেসময় তার এক চাচা ছিলেন স্কটল্যান্ডের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। ৯৭ সালের জুনে এবারডিনে চাচার সহযোগিতায় ফাস্টফুড দোকান দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। এরপর আরেকটি ব্যবসা শুরু করলেও লোকসান হওয়ায় ব্যবসা কিছুটা গুটিয়ে নেন।
দেশে বিনিয়োগ
১৯৯৯ সালে নিজ দেশে বিনিয়োগ শুরু করেন এনামুল হক। পার্টনারশীপ এই বিনিয়োগে (নন্দন পার্ক) কয়েকজন প্রবাসী এবং একজন বাংলাদেশি উদ্যোক্তা ছিলেন। তবে এতে আশানুরূপ সাফল্য পাননি তারা।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার মতো অনেক প্রবাসী দেশে প্রাইভেট সেক্টরে বিনিয়োগ করে আশানুরূপ ফল পায়নি। এতে অনেকে নিজের দেশে বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়ে পেলে। এজন্য আমি মনে করি, সরকার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের মাধ্যমে সরকারি প্রজেক্টে যুক্ত করতে পারলে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি এখানে বিনিয়োগ আগ্রহী হবে। কারণ সরকারি প্রজেক্টে বিনিয়োগ করলে ব্যবসায়ীদের অর্থের নিরাপত্তা থাকে। এতে দেশ যেমন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাবে, পাশাপাশি বিনিয়োগকারীরাও লাভবান হবে। সরকারকে এ বিষয়ে শিগগিরই বিশেষ উদ্যোগ নেয়া উচত বলে আমি মনে করি।’
কৃষিক্ষেত্রে বিনিয়োগ
এনামুল হক চৌধুরী দেশে কৃষিক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে চান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশ কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক দেশ। কৃষি এখনও এদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। দেশে বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলে এখনও অনেক জমি অনাবাদি পরে থাকে। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে করোনা মহামারি পরবর্তী অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বের অনেক দেশেই খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। আমাদের দেশে যাতে সেরকম কোনো সংকট না আসে সেই জন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জমিতে চাষাবাদের ওপর জোর দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদি না থাকে। তাই আমিও কৃষি ক্ষেত্রে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়েছি।
এনামুল হক বলেন, তবে এক্ষেত্রে সমস্যা হলো আমাদের দেশের অনেক কৃষক রয়েছে যারা অর্থের জন্য ঠিকভাবে চাষাবাদ করতে পারে না। এছাড়া কৃষির উৎপাদন সম্পর্কে তাদের তেমন পড়াশোনা না থাকায় কাংখিত ফলন উৎপাদন করতে পারে না। আমি কৃষকদের আর্থিক এবং কারিগরি সহযোগিতার মাধ্যমে কৃষিতে উৎপাদন বাড়াতে সহযোগিতা করতে চাই।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
অস্বচ্ছল কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি স্কটল্যান্ড প্রবাসী এনামুল হক সিলেটে নিজ এলাকায় গ্রামীণ নারীদের উন্নয়নে হস্তশিল্প এবং সেলাই মেশিনের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করতে চান। এছাড়া একটি চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান এবং টেকনিক্যাল স্কুল প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান।
পারিবারিক জীবন
এনামুল হক চৌধুরীর স্ত্রীর নাম সামিনা খাতুন। তিনি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। বর্তমানে তিনি পারিবারিক প্রপার্টি দেখাশোনা করেন। তাদের রয়েছে দুই মেয়ে। বড় মেয়ে জান্নাত চৌধুরী নিলীমা ফার্মাসিউটিক্যালসে মাস্টার্স সম্পন্ন করে চাকরি করছেন। ছোট মেয়ে নিশাত চৌধুরী উপমা নার্সিংয়ে বিএসসি করছেন।