জুলি রহমান, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র থেকে:
আজ রাত তিনটায় এমন একটা খবর পেলাম যে, মানুষ হিসাবে নিজেকে একেবারেই তুচ্ছ লাগছে। অর্থহীন লাগছে জীবন। এখন কুইন্সের এক বাড়িতে মৃত স্বামী নিয়ে বসে আছেন স্ত্রী। মৃত বাবাকে সামনে নিয়ে বসে আছে সন্তানেরা। সারওয়ার ভাই এমনি লিখেছেন ফেইস বুকে।ঘুমাবার আগে একটু ফেইস বুকে ঢুকতেই দেখি- বিভিন্ন মৃত্যু কাহিনী। কিন্তু আজকের কাহিনীটা পুরোই হৃদয় উপরে ফেলা। লাশ নিয়ে বসে আছে পরিবার। শুধু তিনজন মানুষ? আর কেউ নেই? কিছু নেই? ঘুম কর্পোরের মতো উবে গেলো। ওঠে দাঁড়াই। জানালার কাছে। নিকশ অন্ধকার। নিয়নের বাতি লাইট পোস্ট ধপাধপ নিভে গেলো।আঁধারের ঢেউ। উঁচু উঁচু ফোলা ফোলা ঢেউ। সুনামী হয়ে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে দু-কুল ।কান্না? না-কি বাতাসের গোঙানী? রক্তের নদী। হোলি খেলে উপচে পড়ছে জল ।ভেতর গুলিয়ে ওঠছে ভনভন হাজার ড্রামাডোল। ছিঁড়ে যাচ্ছে মাথা। আবার দৌঁড়ে গিয়ে আরেক জানালার শার্ষিতে কপাল গেলো আটকে। দূরে দৃষ্টি! পথ শুয়ে আছে বুকে নিয়ে শোকের ছায়া। রাতের বাতাস গুমড়ে মরে।একলা হাঁটে রাত ।শুধু একলা। দেখি পায়ে রশি। হাতে শেকল। সামনে শাদা কাফন। ছয় জোড়া চোখ। বর্ষার নদী। কখনো সাগর।কখনো আটলান্টিকের অশান্ত ঢেউ হয়ে আঁছড়ে পড়ছে মেঝেতে, ঘরেতে কার্পেটে। চৌকাঠ পেরিয়ে রাস্তার কংক্রিট ছুলো। ছুতে পারলো না শুধু জীবন্ত মানুষের নাগাল। হায়রে মানুষ! হায়রে জীবন। হায় মৃত্যু!
বিভৎস হিংসুটে তুমি করোনা
জুলি রহমান –
রাত পোহাবার কতো দেরী হে যামী ?
মানুষেরা অসহায় করুনা যাচে অন্তর্যামী!
আঠারো হাজার মখলুকাতের শ্রেষ্ঠত্বে
একি নিদারুণ হেলা?
বন্ধ করো করোনা তোমার নিঠুর ঘাতকী খেলা।
আর নয় আর নয় জীবন জলের ফোটা।
ঝরে গেলো পেয়ে তোমার মরণ টোকা।
এক রত্তি জীবনে ঢালো এতো অন্ধকার?
কবে হবে ভোর? আলোতে ফিরে তাকাবার?
পথেরাও গ্যাছে বেঁকে যে যার পথে!
মানুষেরা চলেছে শূণ্য রথে
কেউ নেই কিছু নেই মৃত্যু থইথই!
চামড়া ছুঁয়ে দেখি সে আছে কই?
সে তো গ্যাছে উড়ে পলকা হাওয়ায়
তেঁতে ওঠে রোদ হাড়ের খাঁচায়।
ঘরহীন ঘর থাকে না গভীর মায়ায়
শেষকৃত্যে বাঁধা নিয়ম মানা তাও অজানা?
প্রিয়তম জীবন তুমি মৃত্যু তিলোত্তমা
হিংসোটে করোনা তুমি তা জানো না?
ভালোবাসি বলেই করি তাঁরে দান
অনুদানের আশাতো রাখি না!
অমাবশ্যার করপুটে তুমি এতোটাই উচ্ছৃঙ্খল করোনা?
তুমি জেনে যাও করোনা ?
ভালোবাসা মানে কাঁটার উপর পা ফেলে ফেলে নির্বিঘ্নে চলা-তুমি হেরে গ্যাছো মৃত্যু করোনা! মানুষের অমেয় প্রেম তোমার অনেক উর্ধে। তুমি জড়। প্রাণহীন উদ্বাস্ত! পথের যাযাবর ঘুরছো কেবল রক্ত নেশায় ঘর থেকে ঘর কী আছে তোমার আত্ন অহংকার? হনন ব্যাতিরিকে উন্মাদ!
মানুষেরা তোমাকে মড়ক বলে।
মহামারি বলে কতশত বিশ্রী উপাধী!
অদৃশ্য শত্রু তুমি!সাহস নেই তোমার দেখা দেবার; গায়ে তোমার দুর্গন্ধ পঁচা জীবানু! সাবান জলে ধুয়ে তোমাকে তাড়াবোই তাড়াবো আমরা এই মানুষেরা! তবে ভুলবো না তোমার হিংসুটে কুটিল ছোবল-