আখি সীমা কাওসার, রোম, ইতালি থেকে: সব সময় মানুষের আনন্দ উল্লাসের খেসারত দিয়েছে প্রকৃতি, পশুপাখি বাতাস, মাটি। প্রকৃতি আমাদেরকে সৌন্দর্য উপহারের পাশাপাশি অক্সিজেন দেয়, ঋতু বিশেষ্য ফুল-ফল, শাকসবজি কি না দেয় প্রকৃতি আমাদেরকে। কিন্তু আমরা প্রকৃতির উপর খড়ক মারা বন্ধ করছি না, নানাভাবে প্রকৃতিকে আমরা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছি, অথচ মানুষকে আল্লাহ সৃষ্টির সেরা জীব বলেছে, মানুষ কি আসলেই সৃষ্টির সেরা জীব?
ইতালির রাজধানী রোমের রাস্তায় মরে পড়ে আছে বেশ কিছু পাখি। থার্টি ফার্স্ট নাইটের আনন্দ উৎসবের অন্যতম হল আকাশের উপরে আতশবাজি ফোড়ানো সেই আতশবাজির মাধ্যমেই ইতালির রোম শহরে নতুন বছর উদযাপনের পর রাস্তায় শতশত পাখির মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেল। এই ঘটনাকে ‘গণহত্যার’ সঙ্গে তুলনা করেছে প্রাণী অধিকার রক্ষার আন্তর্জাতিক সংগঠন আইওপিএ।
ইতালির নিউজ মাধ্যম গুলোর বরাতে ও স্কাই নিউজের খবরে বলা হয়েছে, রোমের প্রধান ট্রেন স্টেশনের কাছে অনেক পাখি মারা পড়েছে। এদের মধ্যে অধিকাংশ স্টার্লিং পাখি, যে পাখি গুলো হাজার হাজার পাখি আকাশে নান্দনিক খেলা দেখায়, অনেকেই বলছে যখন গাড়ি দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় যায় তখন আকাশে প্রায়ই পাখির দলের নিত্য দেখা যায়, অপরূপ এক নান্দনিক দৃশ্য মনমুগ্ধকর দৃশ্য এটি। প্রকৃতির চমৎকার আবেদন মানুষের জন্য পাখিপালের নৃত্য, মানুষের খুশির বলি হয়। প্রাকৃতিক অনেক জীবজন্তু, গাছপালা, পশুপাখি বাদ যায় না। অনেকের প্রশ্ন, থামবে কি মানুষের এই অত্যাচার,প্রকৃতির উপর ?
এই প্রতিবেদক স্বশরীরে একজন পুলিশের কাছে জানতে চেয়েছে ঘটনাটির সত্যতা, তারাও বলছে ঠিক ঠিক কী কারণে এত পাখি মারা গেল সে বিষয়ে ইতালি সরকার এখনো কোনো ব্যাখ্যা শুনতে পায়নি প্রাণী সুরক্ষা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন আইওপিএ, সরাসরি দাবি করছে, গাছগাছালির অঞ্চলগুলোতে ব্যাপক হারে আতশবাজি পোড়ানো হয় বিভিন্ন খুশির দিনগুলোতে এই বৎসর করোনার কারণে মেয়ে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উন্মুক্ত যেসব মেলা হতো সেগুলো বন্ধ ছিল বিধায় ২০২০ আতশবাজি কম পোড়ানো হয়েছে, না হয় অন্যান্য বছর প্রায় পাঁচ মাস পর্যন্ত উন্মুক্ত মেলাগুলোর শেষে অনেক আতশবাজি পোড়ানো হতো সেইকারণে ওইসব বনাঞ্চলে পশুপাখি নেই বললেই চলে । মানুষের আনন্দ-উল্লাসের অন্যতম আতশবাজি পোড়ানোর কারণে পাখিদের এই পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে।
আইওপিএ সংগঠনের মুখপাত্র লোরেডানা ডিজিলিও বলছেন, ‘তারা ভয় থেকেও মরতে পারে, বিকট শব্দ শুনে সবাই একসঙ্গে আকাশে উড়েছে, একে-অপরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছে, জানালায় গিয়ে পড়েছে, বিদ্যুতের তারে বিঁধেছে। ভুলে গেলে চলবে না, তারা হার্ট-অ্যাটাকেও মরতে পারে বলেও ধারণা করছে।
ইতালির সরকার করোনার কারণে থার্টিফার্স্ট এর আগে ২৩ ডিসেম্বর ২০২০ থেকে ৬ জানুয়ারী ২০২১ পর্যন্ত সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবার জন্য কারফিউর মতো সর্বোচ্চ সতর্ক জারি করেছে, তারপরেও মানুষের আনন্দ উচ্ছাস কন্ট্রোল থাকেনি, বিশিষ্টজনদের ধারণা সবার আগে মানুষকে সচেতন হতে হবে, ভালোবাসতে হবে প্রকৃতিকে, পৃথিবীর প্রতি মানুষের দায়িত্ব ভুলে গেলে চলবে না। ইতালির সরকার এক বার্তায় সবাইকে সতর্ক করেছে, করোনার প্রকোপ ঠেকাতে রোমে আতশবাজি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, কারণ থার্টি ফাস্ট নাইটের রাতে আতশবাজি পোড়ানোর সময় লাখো মানুষের ঢল নামে, রোমের piazza del popolo তে, তাই ঐদিন রাতদশটা পর্যন্ত শহরে কারফিউ ছিল। তারপরেও মানুষকে ঠেকানো যায়নি যদিও খুব স্বল্প সংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে অনেক স্থানে আতশবাজি পোড়ানো হয় ।
এ ঘটনার পর প্রাণীদের সুরক্ষার জন্য আতশবাজির বিক্রি নিষিদ্ধে করার আহ্বান জানিয়েছে, আইওপিএ-এর ইতালি শাখা।