এক. বাংলাদেশে মানব পাচার একটি বড় সমস্যা হিসেবে ইতিমধ্যে চিহ্নিত। বিভিন্ন সংস্থার হিসাবমতে, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ চাকরির নাম করে স্থল, বিমান ও সমুদ্রপথে দালাল চক্রের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে পাচার হচ্ছে। মানব পাচারের ভিকটিমদের বেশিরভাগই বেকার যুবক, নারী ও শিশু। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ সালে লিবিয়া হয়ে সাগরপথে ইতালি গেছে প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবে সমুদ্রে ডুবে বহু বাংলাদেশির মৃত্যুর খবরও প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন রিপোর্টে। আবার ইউরোপীয় কমিশনের পরিসংখ্যান দফতর ইউরোস্ট্যাট-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৮ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত এক লাখেরও বেশি বাংলাদেশি ইউরোপের দেশগুলোতে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছেন। অন্যদিকে ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ দাবি করেছে, প্রতি বছর ভারতে বাংলাদেশ থেকে গড়ে ৫০ হাজার নারী ও শিশু পাচার হয়। এক শ্রেণীর অসাধু দালাল চক্রের অবৈধ এ বাণিজ্যের পরিমাণ বছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।
দুই. বাংলাদেশ থেকে মানব পাচারের অন্যতম কারণ দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও অজ্ঞতা। সরকারি হিসেবে বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ২ কোটি লোক হতদরিদ্র। শিক্ষিত অশিক্ষিত মিলে দেশের বেকারত্বের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৩ কোটি। বেকারত্ব ঘোচাতে অনেকেই অজ্ঞতার বশবর্তী হয়ে তথ্য গোপন করে ‘দালাল বা বিভিন্ন উপায়ে’ বিদেশে পাড়ি জমান।
তিন. দেশে মানব পাচার প্রতিরোধে চমৎকার আইন রয়েছে। কিন্তু এ আইনের বাস্তব প্রয়োগ খুবই সীমিত। ২০১২ সালে মানব পাচার আইন প্রণীত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত চার হাজার ১৫২টি মামলা হলেও শাস্তির ঘটনা খুবই নগন্য। অপরাধীদের শাস্তি কম হওয়ায় মানবপাচারের মতো বড় অপরাধীরা সহজেই পার পেয়ে যাচ্ছে।
চার. মানব পাচার প্রতিরোধে সকলের সম্মিলিত উদ্যোগের প্রয়োজন। পাশাপাশি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। এজন্য সরকার, দাতা সংস্থা ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। তাই আমরা মনে করি, মানব পাচার রোধে যে আইন আছে সেটির সঠিক বাস্তবায়ন, দালাল চক্রের মূল হোতাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা, অভিবাসন খরচ কমিয়ে আনা, আইন শৃংখলা বাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা ও গণমাধ্যমের সাহায্যে সচেতনতা তৈরি করা জরুরী। এছাড়া নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিতকরণে এই সংক্রান্ত সঠিক তথ্যভান্ডার, আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্ম ও বিদেশ যেতে ইচ্ছুক কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। আর এসবের সঠিক বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। এতে নিরাপদ অভিবাসন সহজতর হবে এবং মানবপাচার অনেকটাই কমে আসবে বলে আমরা মনে করি।
সবাই সুস্থ্য থাকুন। ভালো থাকুন।