প্রবাস মেলা ডেস্ক: সম্প্রতি প্রবাস মেলা অফিস ভিজিটে এসেছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সুরকার ও মিউজিক-ডাইরেক্টর মকসুদ জামিল মিন্টু। প্রবাস মেলা’র কর্মীদের সঙ্গে তিনি চা-চক্রে অংশ নিয়ে নানা সঙ্গীতাঙ্গনের নানা বিষয়ে কথা বলেন। আলোচনার এক ফাঁকে তার হাতে প্রবাস মেলা’র সৌজন্য কপি তুলে দেন পত্রিকাটির অনলাইন রিপোর্টার আশরাফুল আলম মাসুদ।
উল্লেখ্য, হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ সিনেমার ‘একটা ছিল সোনার কন্যা’ গানটির সুরকার হিসেবে মকসুদ জামিল মিন্টু ১৯৯৯ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। জনপ্রিয় কথাশিল্পী হুমায়ুন আহমেদের লেখা এবং সুবীর নন্দীর কণ্ঠে ‘ও আমার উড়াল পঙ্খীরে’, ‘একটা ছিল সোনার কন্যা’ গান দুটো ছিল সুরকার ও সংগীত পরিচালক মকসুদ জামিল মিন্টুর সুর করা তুমুল জনপ্রিয় গান।
এছাড়াও শেখ ইশতিয়াকের গাওয়া ‘নীলাঞ্জনা’, ‘আমার মনের ফুলদানিতে’, ‘একদিন ঘুম ভেঙে দেখি’, ‘নন্দিতা তোমার কথা’, বেবী নাজনীনের গাওয়া ‘এলোমেলো বাতাসে উড়িয়েছি শাড়ীর আঁচল’, তপন চৌধুরীর কণ্ঠে ‘কাইন্দা আসে ভবের মানুষ’, শুভ্রদেবের ‘কোনও এক সন্ধ্যায়’, সাবিনা ইয়াসমিনের ‘আমার ভাঙা ঘরে ভাঙা চালা’ ও ‘বরষার প্রথমদিনে’, আগুনের কণ্ঠে ‘মাথায় পড়েছি সাদা ক্যাপ’, বারি সিদ্দিকীর ‘ওগো ভাবীজান’, অ্যান্ড্রু কিশোরের ‘গরুর গাড়ীর দুই চাকা’, মমতাজের ‘ঢোল বাজে দোতরা বাজে’, ফজলুর রহমান বাবু ও শফি মন্ডলের যৌথ কণ্ঠে ‘বাজে বংশী রাজহংসী নাচে’ শিরোনামের শ্রোতাপ্রিয় গানগুলোর সুর করে বাংলা গানের শ্রোতাদের মনে চিরস্থায়ী আসন গড়ে নিয়েছেন মকসুদ জামিল মিন্টু।
মিন্টু যন্ত্রশিল্পী হিসেবে সংগীতজীবন শুরু করলেও গানের প্রতি অদম্য আগ্রহ তাকে দ্রুতই একজন সফল সুরকার ও সংগীত পরিচালক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। তার বাবা একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক ও কবি মাহফুজ উল্লাহ তাকে এসব কাজে উৎসাহ দিতেন। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই সাংস্কৃতিক অঙ্গণে তার পদচারণা শুরু হয়। শুরুতে তিনি হারমোনিয়ামের প্রতি জোর দেন। অল্প সময়েই একজন দক্ষ হারমোনিয়াম বাদক হিসেবে পরিচিতি তৈরী হয় মকসুদ জামিল মিন্টুর। পুরান ঢাকার সংগীতানুষ্ঠানে নিয়মিত হারমোনিয়াম বাজাতে থাকেন।
হারমোনিয়াম ছেড়ে ১৯৭৮ সালে গিটার বাজানো আয়ত্ত করেন গুণী মানুষটি। ১৯৭৯ সালে একজন গিটারবাদক হিসেবে বিটিভিতে কাজ শুরু করেন। ১৯৮২ সালে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সংগীত পরিচালনায় ‘মেঘ বিজলী বাদল’ সিনেমায় আবহ সংগীতে গিটার বাজান। মতিন রহমানের পরিচালনায় ‘আগুন জ্বালো’ সিনেমা দিয়ে বড়পর্দায় প্রথম গানের সুর করেন মিন্টু। তবে সুরকার ও সংগীত পরিচালক হিসেবে কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের সিনেমাতেই বেশি কাজ করেছেন। সিনেমার পাশাপাশি অডিও অ্যালবামের কাজেও তিনি সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন।
১৯৮৬ সালে শেখ ইশতিয়াকের একক গানের অ্যালবাম ‘নন্দিতা’ ও গানগুলো তারই সুর ও সংগীত পরিচালনা করা। এরপর বেবী নাজনীন এবং সুবীর নন্দীর একক গানের অ্যালবামের সুর করেও প্রশংসিত হন মিন্টু। ১৯৮৮ সাল থেকে তিনি টিভি নাটকের সংগীত পরিচালনার কাজ করছেন। তার উল্লেখযোগ্য কাজ হলো সেলিম আল দীনের ‘গ্রন্থিকগণ কহে’, আবদুল্লাহ আল মামুনের ‘শীর্ষবিন্দু’ এবং মোহাম্মদ বরকতুল্লাহর ‘কোথাও কেউ নেই’, হুমায়ূন আহমেদের ‘আজ রবিবার’। হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত ‘ঘেঁটুপুত্র কমলা’ সিনেমাতেও কাজ করেছেন তিনি।
হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ সিনেমার ‘একটা ছিল সোনার কন্যা’ গানটির সুরকার হিসেবে তিনি ১৯৯৯ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। তিনি ২০২১ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরিবোর্ডের একজন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।