প্রবাস মেলা ডেস্ক: দেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী ফাতেমা তুজ জোহরা। নজরুল গানের শিল্পী হিসেবে তিনি সমাদৃত। তার কণ্ঠে নজরুলসংগীত অনন্য হয়ে শ্রোতার হৃদয় ছুঁয়েছে কালে কালে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি সংগীতচর্চা করে যাচ্ছেন। পেয়েছেন দেশ-বিদেশে কোটি শ্রোতার ভালোবাসা। সম্প্রতি এক সন্ধ্যায় গুণী এই সঙ্গীতশিল্পী প্রবাস মেলা অফিস পরিদর্শন করেছেন। প্রবাস মেলার কলাকুশলীদের সঙ্গে আড্ডায় তার সঙ্গীত জীবনের নানা বিষয়ে কথা বলেন। এক পর্যায়ে ফাতেমা তুজ জোহরা’র হাতে প্রবাস মেলার সৌজন্য কপি তুলে দেন পত্রিকার অনলাইন রিপোর্টার আশরাফুল আলম মাসুদ।
ফাতেমা তুজ জোহরা একজন বাংলাদেশী সঙ্গীতশিল্পী। তিনি নজরুলগীতি ও আধুনিক গান করে থাকেন। তিনি টেলিভিশন নাটকে অভিনয়, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশনা এবং উপস্থাপনা করেন। এছাড়া তিনি একটি কবিতার বই, দুটি ছড়ার বই, একটি উপন্যাস, একটি গল্প ও কলাম সংকলন এবং নজরুলের গান নিয়ে একটি সঙ্গীতের বই প্রকাশ করেছেন। সঙ্গীতে অবদানের জন্য তিনি ২০০৬ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক রাষ্ট্রীয় সম্মান একুশে পদকে ভূষিত হন।
প্রারম্ভিক জীবন:
জোহরা তৎকালীন বৃহত্তর বগুড়া জেলার জয়পুরহাটে এক সংস্কৃতিমনা পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ডা. সৈয়দ ফরিদ উদ্দিন একজন রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী ছিলেন। জোহরা জয়পুরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। সেই সময় থেকে তিনি সঙ্গীত চর্চা শুরু করেন, পাশাপাশি অভিনয়ও করতেন। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা শেষ করেন। জোহরা সঙ্গীতচর্চা শুরু করেন ১৯৬৩ সালে হাবীবুর রহমান সাথীর নিকট। তিনি ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত তার নিকট সঙ্গীতের তালিম গ্রহণ করেন। এরপর তিনি মিথুন দে’র নিকট সঙ্গীতের তালিন নেন। এছাড়া তিনি নগেন ঘোষ এবং রফিকুল আলমের কাছে গানের তালিম নেন। গান শেখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমার বাবা বা আমার গুরুরা, ওস্তাদ হাবীবুর রহমান, নগেন ঘোষ ও রফিকুল আলম, কেউ আমাকে বলে নি যে বড় শিল্পী হতে হবে, বরং তারা আমাকে শিখিয়েছে কীভাবে সঠিকভাবে গান করতে হয়।”
সঙ্গীত জীবন:
২০০৮ সালে জোহরা তার আধুনিক গানের একক অ্যালবাম ‘রূপের বাজার’ প্রকাশ করেন। এছাড়া তিনি তার মেয়ে নাজিয়া বিশকাত তমার সাথে যৌথভাবে মিশ্র অ্যালবাম ‘প্রথম প্রদীপ জ্বালো’ প্রকাশ করেন।
অভিনয় জীবন:
জোহরা ১৯৮৪ সালে খ. ম. হারুন পরিচালিত লাগুক দোলা নাটকের মাধ্যমে টেলিভিশন নাটকে অভিনয় শুরু করেন। এই নাটকে তিনি একটি নির্বাক মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তার বিপরীতে ছিলেন খালেদ খান। পরবর্তীতে তিনি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত গল্প অবলম্বনে নির্মিত শিউলি মালা নাটকে এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত গল্প অবলম্বনে নির্মিত শেষের রাত্রি (২০১২) এবং ঘাটের কথা (২০১৭) নাটকে অভিনয় করেন। রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে নির্মিত ঘাটের কথা নাটকটি পরিচালনা করেছেন কাওনাইন সৌরভ।
সাহিত্য জীবন:
জোহরা তার কলেজ জীবন থেকে লেখালেখি শুরু করেন। ১৯৯২ সালে তিনি তার প্রথম কবিতার বই ‘যেখানে ভালোর বাস’ প্রকাশ করেন। তিনি নিয়মিত ‘শব্দঘর’ পত্রিকায় কলাম লিখতেন। পরে তার সেই কলামের সংকলনসহ কয়েকটি গল্প সংবলিত ‘কিছু নিয়ে কিছু কথা’ প্রকাশিত হয়। তিনি ছড়ার উপর দুটি বই – ‘তাল বাহারি ছড়া’ ও ‘ছড়ায় গড়ে বোল’ প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক একটি উপন্যাস রচনা করেন। ২০১৭ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় নজরুলগীতির উপর তার রচিত গীত ও সুরের ভিন্ন ঊর্মিমালায়: নজরুল সঙ্গীত বই অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়।
ব্যক্তিগত জীবন:
জোহরার মেয়ে নাজিয়া বিশকাত তমা একজন সঙ্গীতশিল্পী। জোহরা রম্য ও ব্যঙ্গাত্মক গল্প পছন্দ করেন। তার প্রিয় লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী এবং সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়।
সম্মাননা:
সঙ্গীতে অবদানের জন্য ফাতেমা তুজ জোহরা একুশে পদক (২০০৬), প্রেস ক্লাব পুরস্কার, নজরুল পুরস্কার, থিয়েটার সম্মাননা, শের-এ-বাংলা স্মৃতি পদক, স্বাধীনতা ফোরাম সম্মাননা, লন্ডন থেকে শুদ্ধ মঞ্চ পুরস্কার, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া সম্মাননা পুরস্কার, বাংলা একাডেমির ফেলো (২০১৫), নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় পুরস্কার (২০১৫), নজরুল ইনিষ্টিটিউট পুরস্কার লাভ করেন।