সম্প্রতি প্রবাস মেলা অফিসে বেড়াতে আসেন ইতালি প্রবাসী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন। এ উপলক্ষ্যে প্রবাস মেলা’র মিডিয়াকর্মীদের সঙ্গে চা চক্রে অংশ নিয়ে তার প্রবাস জীবনের নানা গল্প শোনান। এক ফাঁকে তার হাতে প্রবাস মেলা’র সৌজন্য কপি তুলে দেন পত্রিকাটির অনলাইন রিপোর্টার আশরাফুল আলম মাসুদ।
উল্লেখ্য, ইতালি প্রবাসী বেলাল হোসেন বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলা সদরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯৯ সালে স্থানীয় মান্দারী উচ্চ মাধ্যমিক থেকে এসএসসি এবং ২০০১ সালে লক্ষ্মীপুর কফিল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। একই বছর তিনি পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতার আশায় সৌদি আরবে পাড়ি জমান। দেশটির জেদ্দা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে একটি রেস্টুরেন্টে দীর্ঘ চার বছর কাজ করেন। পরে ২০০৫ সালে তিনি দেশে ফিরে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেন। দেশে দুই বছর থাকার পর স্পন্সর ভিসায় ২০০৭ সালে তিনি ইতালি চলে যান।
শুরুতে বেলাল হোসেন ইতালির আনকোনা শহরের একটি বইয়ের ফ্যাক্টরিতে যোগদান করেন। ২০০৯ সালে বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে ওই ফ্যাক্টরিটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে তিনি রাজধানী রোম শহরে চলে যান। রোমে কিছুদিন পার্টটাইম কাজ করার পর একটি ইতালিয়ান রেস্টুরেন্টে চাকরি পেয়ে যান তিনি। ২০১১ সালে ফ্যামিলিকে ইতালিতে নিয়ে যান। ২০১৫ সাল পর্যন্ত তিনি ইতালিয়ান রেস্টুরেন্টটিতে চাকরি করেন।
চাকরি করা অবস্থাতেই বেলাল হোসেন আরও কয়েকজনের সঙ্গে রেস্টুরেন্ট ও টেলিফোন দোকানে শেয়ারে ব্যবসা শুরু করেন। তবে আশানুরূপ লাভ না আসায় কয়েকমাস পর ওই ব্যবসা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। পরে নিজেই রেস্টুরেন্ট খুলেন। বর্তমানে তার চারটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেগুলো হলো একটি রেস্টুরেন্ট, একটি ফাস্ট ফুডের দোকান, একটি বার এবং একটি সুভিনিয়র পণ্যের ব্যবসা। এসব প্রতিষ্ঠানে ইতালিয়ান, রাশিয়ান, ইরাকি ও বাংলাদেশিসহ ১৭ জন কর্মচারী কর্মরত আছেন।
ব্যবসায়ের পাশাপাশি ইতালিতে প্রবাসী কমিউনিটিতে বেলাল হোসেন সক্রিয়ভাবে জড়িত রয়েছেন। তিনি অত্যাবিয়ানো ঐক্য পরিষদের সভাপতি, বৃহত্তর নোয়াখালী সমিতি, রোম শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ পরিষদ, ইতালির সহ-সভাপতি এবং বাংলাদেশ সমিতি, ইতালির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
পারিবারিক জীবনে বেলাল হোসেন দুই কন্যা সন্তানের পিতা। বড় মেয়ে লিমা হোসেন মিম কলেজে পড়ছে। ছোট মেয়ে ফাতেমা হোসেন লাইসা হাইস্কুলে পড়ছে। স্ত্রীর নাম নুসরাত জাহান লাইলী।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে বেলাল হোসেন বলেন, রেমিটেন্সের উপর বাংলাদেশ সরকারের প্রণোদনা দেয়ায় বাংলাদেশ সরকারকে আমি অভিনন্দন জানাই। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে প্রবাসীরা বিমান বন্দরে নানা রকম হয়রানীর শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এমন একটা পরিস্থিতি হয়েছে যে- বিমানবন্দর নামটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে আসে প্রবাসীদের হয়রানির কথা। বাংলাদেশ থেকে লাখ লাখ প্রবাসী নিয়মিত বিদেশে যাতায়াত করেন।
সেইসব প্রবাসীদের পাঠানো বৃহৎ রেমিট্যান্স বাংলাদেশে আসে। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সের বিনিময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি এতটা সচল আছে। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য যেসব প্রবাসী বাংলাদেশিরা দিনরাত প্রবাসে কাজ করে যাচ্ছেন, বিভিন্ন সময় দেখা যায়- সেইসব রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সঙ্গে বিভিন্ন অহেতুক আচরণ করে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। তাদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অনিয়মকে নিয়ম বলে শিখানো হয়। স্বাধীনতার এতো বছরে এসেও দেশে ‘টাকা পাঠানোর মেশিন’দের ন্যূনতম কোনো মর্যাদা দেওয়া হয় না। এমনকি বিদেশে কোনো প্রবাসী মারা গেলে সরকারিভাবে তার মৃতদেহটা পর্যন্ত অনেক সময় দেশের মাটিতে আনার ব্যবস্থা করা হয় না। এ ছাড়া তো নানা অবহেলা রয়েছেই। প্রবাসীদের মেধা, শ্রম ও রেমিটেন্স দিয়ে দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। তাই আমি আবারও জোর দাবী জানাচ্ছি- প্রবাসীদের যেন বিমানবন্দরে কোন রকম হয়রানির শিকার না হতে হয় সেক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষ যেন সজাগ দৃষ্টি রাখে।
শেষে প্রবাস মেলা সম্পর্কে বেলাল হোসেন বলেন, প্রবাসীদের নিয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে প্রবাস মেলা। এটি সত্যিই একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। আমি বলতে চাই- প্রবাস মেলা’র নেপথ্যে যারা কাজ করছেন তারা অত্যন্ত বড় মনের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। আমার এতোবছরের প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি- প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে তেমন কেউই ভাবেন না। এমনকি অনেক সময় দেখা যায় পরিবারের কেউও তেমন একটা ভাবেন না। এক্ষেত্রে প্রবাস মেলা প্রবাসীদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান, প্রবাসীদের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে কাজ করছে- এই বিষয়টাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে সাধুবাদ জানাই। ভবিষ্যতে এই পত্রিকা দেশে-বিদেশে আরও বেশি প্রশংসিত হোক এবং দেশের প্রবাসীদের কল্যাণে নিয়োজিত থাকুক- এমনটিই সর্বদা প্রত্যাশা করি।