তানিজা খানম জেরিন, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র থেকে: আজ আটলান্টিকের অপর পাড় বিশ্বের রাজধানী খ্যাত নিউইয়র্ক শহর থেকে ভাষার মাসে বাংলা ভাষায় আরেকটি সাপ্তাহিক সংবাদপত্র ‘সাপ্তাহিক দেশ’ প্রকাশিত হলো। স্বাগতম ও অফুরান শুভেচ্ছা সাপ্তাহিক দেশ এবং পত্রিকার সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে। নিউইয়র্ক থেকে বিশটিরও বেশি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশিত হয় যদিও করোনা সঙ্কটে বর্তমানে নয়/দশটির মতো পত্রিকা প্রিন্ট সংস্করণ এবং দু/তিনটি অনলাইন ভিত্তিক প্রকাশিত হয়। উল্লেখ্য উনিশো পঁচাশিতে বাংলা ভাষায় নিউইয়র্কে থেকে প্রকাশিত প্রথম সাপ্তাহিক দিগন্ত সহ অনেক সাপ্তাহিক পত্রিকাই পরবর্তীতে প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। অনেক দিন বা কিছু দিন প্রকাশের পর পত্রিকা বন্ধের তালিকায় আছে সাপ্তাহিক প্রবাসী, সাপ্তাহিক গণবাংলা, সাপ্তাহিক আয়না, সাপ্তাহিক কাগজ, সাপ্তাহিক নিউইয়র্ক, সাপ্তাহিক এখন সময়, সাপ্তাহিক মুক্তকণ্ঠ, সাপ্তাহিক সন্ধান, সাপ্তাহিক জনতা, সাপ্তাহিক দেশকণ্ঠ, সাপ্তাহিক দর্পণ, সাপ্তাহিক সাদাকালা, সাপ্তাহিক জনতারডাক, সাপ্তাহিক আওয়াজ ইত্যাদি।
বর্তমান কোভিড নাইনন্টিনের কারণে সাপ্তাহিক বর্ণমালা, জনতার কষ্ঠ ও নিউইয়র্কের প্রথম ফ্রি পত্রিকা সাপ্তাহিক দেশবাংলা ও Bangla Times প্রকাশিত হচ্ছেনা। বাংলা ভাষার চর্চা শিক্ষা সাহিত্য সংস্কৃতি ঐতিহ্য ও শিকড় আঁকরে থাকার জন্য প্রবাসের সংবাদপত্রের ভূমিকা ও গুরুত্ব অপরিসীম; দেশ ও প্রবাসের সেতু বন্ধনে বা প্রবাসে একখণ্ড বাংলাদেশ এই শ্লোগানের মূল হাতিয়ার হলো বিশ্বের অন্য প্রান্ত থেকে প্রকাশিত একটি বাংলা ভাষার সংবাদপত্র।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাংলা ভাষায় অনেক সংবাদপত্র নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। যে দেশেই বাংলাভাষী অভিবাসী বা প্রবাসী আছে সেখান থেকেই বাংলা ভাষায় সংবাদপত্র প্রকাশনা একটি নিয়মিত ঘটনা। পত্রিকার সম্পাদক বা প্রকাশকের নজর থাকে বিজ্ঞাপনের দিকে, পাঠকের নজর থাকে একটি মানসম্পন্ন সংবাদপত্রের দিকে তদুপরি বিদগ্ধ পাঠক মূল্যায়ন করে পত্রিকাটি বাংলা ভাষার উন্নয়ন সাধনে কতটুকু অবদান রাখতে পারছে। নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত দু/তিনটি পত্রিকা বাদে অন্য পত্রিকাগুলো বাংলাদেশে প্রকাশিত পত্রিকার প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ফিচার-প্রতিবেদন, গল্প-কবিতা কপি পেস্ট করে হুবহু ছেপে দেয়। এতে করে এখানে নতুন লেখক সৃষ্টি হচ্ছে না বা বাংলা ভাষার চর্চায় পত্রিকাগুলো সঠিক দায়িত্ব পালন করছে না। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ ও ভারতের একাংশ ছাড়াও বিশ্বের অনেক দেশেই বাংলা ভাষার চর্চা হচ্ছে; আশা করা যায় অদূর ভবিষ্যতে দুই বাংলার বাইরেও বাংলা ভাষা প্রবাস বাংলা বা চার বাংলা নামে প্রতিষ্ঠিত হবে। তাই সময় এসেছে পত্রিকা সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রবাসের লেখক কলামিস্ট কবি সাহিত্যিকের লেখা বেশি প্রচার করা; প্রবাস বাংলার সার্বিক উন্নয়নে নতুন লেখকদের পৃষ্ঠপোষকতা করা।
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পত্রিকাগুলোর পাঠক জনপ্রিয়তার মাপকাঠি পত্রিকা প্রচার সংখ্যায় বিবেচনা করলে প্রথমেই সাপ্তাহিক ঠিকানা, সাপ্তাহিক আজকাল, সাপ্তাহিক বাঙালী আবার প্রবাসে বাংলা ভাষায় নতুন সৃজনশীল লেখক সৃষ্টিতে প্রথমেই সাপ্তাহিক বাঙালী, সাপ্তাহিক ঠিকানা, সাপ্তাহিক আজকালের ভূমিকা অগ্রগণ্য। বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত খেকে আগত বাংলা ভাষীরাই মূলত বাংলা পত্রিকার পাঠক কারণ এখানে জন্ম নেয়া দ্বিতীয় প্রজন্মের নব্বই ভাগই বাংলা পড়তে পারেনা তাই পত্রিকার পাঠক সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছেনা। বয়োবৃদ্ধ-দের উন্নত চিকিৎসাসহ আরো কিছু অর্থনৈতিক সুবিধা বর্তমানে বহাল থাকাতে গত দশকে দেশ থেকে বাবা-মা, শ্বশুড় শাশুড়ী, বড়ভাই- ভাবি এইদেশে আনার একটা হিড়িক পড়েছে। আগে গ্রোসারিগুলোতে পত্রিকা বিলি হতো বেশি এখন হয় মসজিদে বেশি। দেশ থেকে ক্রমাগত আগত নতুন অভিবাসীরাই পত্রিকার পাঠক হিসেবে বেশি সমাদৃত হবে।
নিউইয়র্ক তথা উত্তর আমেরিকায় সকল পত্রিকারই একটি নিজস্ব নীতিমালা ও লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে প্রকাশিত হয়; কেউ জনপ্রিয়তার শীর্ষে কেউ প্রচারে শীর্ষে কেউ পাঠকপ্রিয়তায় শীর্ষে ইত্যাদি বাণীবাক্য লেখা থাকে কিন্তু কেউ বলেনা আমরা বাংলা ভাষার উৎকর্ষ সাধনে কাজ করছি এই দূর প্রবাসেও বাংলা ভাষা টিকিয়ে রাখার প্রত্যয়ে একদল সৃজনশীল লেখক তৈরি করছি। ইদানীং পত্রিকাতে কোন অনুসন্ধানী রিপোর্ট থাকেনা; কেন জানি সত্য প্রকাশে অনীহা, দলীয় তোষামোদে ভরপুর, প্রকাশিত হয় অমুক যায়গায় এবার পিঁয়াজের বাম্পার ফলন! আরে ভাই এ খবরেতো কোন প্রবাসী আহ্লাদিত হবে না সবাই জানে আগামী পঞ্চাশ বছর পিঁয়াজ আমদানী করতে হবে। সাপ্তাহিক দেশে’র প্রতি নিবেদন কমিউনিটির সবখবর গুরুত্ব দিয়ে ছাপুন, প্রবাসে বসবাসরত সকল লেখকদের লেখা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ছাপানোর ব্যবস্থা রাখুন, শুদ্ধ বাংলা ভাষা চর্চা- প্রচার ও প্রসারে অধিক গুরুত্ব দিন।
সংবাদপত্র শিল্প করোনাকালে বিশ্বের সব দেশেই কঠিন সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে তবুও একদল সাহসী উদ্দোমী কর্মঠ কর্মী সংবাদপত্রের সাথে অনেক দিন জড়িত থাকার সুবাদে কঠিন সময়ে সাপ্তাহিক দেশ প্রকাশের সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে। অভিন্ন অভীষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য দৃঢ়চেতা মনোভাব নিয়ে পথচলা শুরু হোক; পথ চলতে অনেক বাধা বিপত্তি আসবে তবুও এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাভাষী কমিউনিটির সর্ব কল্যাণে নিবেদিত হোক সাপ্তাহিক দেশ। পথ চলা শুরু হোক অবাধ, মসৃণ, সাবলীল, নিষ্কন্টক। চিরজীবি হোক সাপ্তাহিক দেশ; ভাষার মাসে ভাষার জয়গান বেজে উঠুক সকল প্রাণে, সাপ্তাহিক দেশ এসো প্রাঙ্গণে মোর।