প্রবাস মেলা ডেস্ক: জন্মগত দিক থেকে যেহেতু বাংলাদেশি, মা, মাটি, দেশকে যেহেতু ভালোবাসি, শৈশব এবং কৈশোর কিংবা যৌবনের অংশ বিশেষ জীবন যেহেতু স্বদেশের মাটিতে, সেহেতু পৃথিবীর মানচিত্রে যতদিন রবে পদ্মা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র আর যমুনা জীবনের শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত কখনও ভুলবোনা, ভুলা যাবেনা।
বৈশাখ মাস শেষ হয়ে গেল বেশ কয়েক মাস তবে এ সময় কেন বৈশাখের আনন্দ বা বৈশাখ মেলা এ প্রশ্ন থাকতেই পারে প্রশ্নবিধ কিছু উৎসুকের মাঝে। ঋতু পরিবর্তনের ধারায় বিশেষ করে ব্রিটেনে মে পর্যন্ত ঠাণ্ডা আবহাওয়া এবং বৃষ্টি থাকে যার কারনে দেশীয় আমেজ এতোটা প্রভাব না পাওয়ার কারনে জুলাইর দিক থেকেই প্রবাসী বাঙালিরা আনন্দে মেতে উঠি দল মত নির্বিশেষে।
তবে এবারের বৈশাখী মেলা মাইলেন্ডে আউটডোরে দর্শক নন্দিত আইঅন টিভি’র সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং গানের পাখিরা শুধু ব্রিটেনেরই নয় আসবেন বাংলাদেশ থেকেও। এবারের আনন্দের বন্যা আর আমেজ একটু ভিন্ন মাত্রায়।
যদিও ১৪ এপ্রিল বাংলা বৈশাখ মাস, চৈত্রের খরা পেরিয়ে নতুন বছর যাত্রা শুরু বাংলা মাস, আনন্দও কম নয় বাঙ্গালীরা পৃথিবীর যে প্রান্তে যে যেখানেই থাকি। কারণ পৃথিবীর প্রতিটি জাতিসত্তার কাছে সেই জাতির ঐতিহ্য নতুন বছরের সূচনা অনেক পবিত্র। বাঙালিও এর ব্যতিক্রম নয়। সকল প্রকার ক্লেশ এবং গ্লানিকে ভুলিয়ে মনের অন্তঃস্থলে নতুন আনন্দের উচ্ছ্বাস জাগিয়ে তোলে, পুরুষরা লুঙ্গি কিংবা ধুতি আর সার্ট কিংবা পাঞ্জাবী আর মেয়েরা লাল নিল রঙের শাড়ি পরে তাইতো সেই দিনগুলির মধ্যে অন্যতম হলো বাংলা নববর্ষের সূচনা যদিও এখন ডিজিটাল যুগ কিংবা পরিবর্তন এসেছে তাই বলে ঐতিহ্যকে ধুয়ে মুছে শেষ করে ভুলা যাবেনা। তাইতো প্রবাসেও আমরা স্মরণ করছি সেকালের মোগল সম্রাট আকবরের আমলে ‘আকবরি শাসনামলে’ সৌর পঞ্জি এবং হিজরি সনের মেইল বন্ধনে যে বাংলা সনের উৎপত্তি সে নিয়ম নীতিকে বাংলা নববর্ষ এবং সুদীর্ঘকাল ধরে প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় বাঙালি সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে বসন্ত ঋতুর অন্তিম মাস চৈত্রের অবসানে বৈশাখের সূচনার মধ্যে দিয়ে বাঙালি নতুন বছরকে বরণ করে নেয়। বর্ষবরণের অনাবিল আনন্দে বাঙালির জীবন পুরাতন বছরের সকল দুঃখ ও গ্লানির কথা ভুলে নতুন করে বাঁচার আশায় বুক বাঁধতে থাকে। ছোট বেলায় হেলে দুলে যে সব পড়া পরতাম তা এখনো মনে পরে, ‘কলা রুয়ে না কেটো পাত তাতেই কাপড় তাতেই ভাত’। রোদ হচ্ছে বৃষ্টি হচ্ছে খেঁকশিয়ালের বিয়ে হচ্ছে। ভরা হতে শূণ্য ভালো যদি ভরতে যায়, আগে হতে পিছে ভালো যদি ডাকে মায়।
ভুলতে বসেছি সেসব খনার বচন তাছাড়া বাংলা ভাষার যে অ্যালফাবেট আছে আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্য এবং বর্ষপঞ্জী তা বোধ হয় পৃথিবীর বহু উন্নত দেশেও নেই। এটি একটি জাতিসত্ত্বার প্রাচীন ঐতিহ্য ও উৎকৃষ্ট কালের সাক্ষীও কম উদাহরন নয়! বৈশাখী মেলা বাঙালির জাতীয় জীবনের আবহমান সংস্কৃতিরই অংশ। বৈশাখী মেলা এখন শহরে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ মেলা এখন প্রতিটি শহরে বসছে নগর সংস্কৃতির আলোকে। বাংলার সংস্কৃতির ঐতিহ্য এ মেলা একসময় নির্দিষ্ট দিনে শুধু গ্রামে বসলেও এখন শহরে মেলার পরিধি বিস্তৃত হয়েছে পাকাপোক্তভাবে। শহুরে সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে গিয়েও যদি বাংলার লোকজ ঐতিহ্যের বৈশাখী মেলা টিকে থাকে, তাহলে হয়তো হারিয়ে যাবে না আমাদের এ লোক উৎসব। আমাদের গ্রামবাংলার লোকায়ত শিল্পধারা সময়ের ঘাত-প্রতিঘাতে বিলুপ্ত হতে চলেছে ঢোল আর ঢাক। যে মেলার সুত্রপাত ঘটে ১৭৯৭ সাল থেকে।
জানা যায় বৈশাখী মেলা আমাদের দেশের সব জনপদে একসময় সরব থাকলেও এখন যুগের পরিবর্তনে গ্রামে-গঞ্জের অনেক জায়গায় আয়োজন কমে গেছে। এক সময় শরিয়তপুর, মাদারীপুর, শিবচর, ফরিদপুর, ভাঙা, বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চল ছাড়াও ময়মনসিংহ, রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, মহাস্থানগড়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, গোপালগঞ্জ, ধামরাই, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে মেলার সরব আয়োজন লক্ষ করা যায়।
সুতরাং সমাজ এবং সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে ভুলে গেলে চলবেনা কারণ আমার দেশের রিপ্রেজেন্টিটিভ হয়েই আমাকে পরবর্তী প্রজন্মকে বুঝাতে হবে, আমার দেশের ঐতিহ্য আর সমাজ সংস্কৃতির ভালবাসার প্রাণবন্ধনকে প্রাধান্য দিয়ে তবেইতো আমি আমরা খাটি বাঙালি।
তাইতো জ্ঞান তাপস ও ভাষা সৈনিক ডক্টর মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ লিখেছিলেন, আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙ্গালী। মা প্রকৃতি আমাদেরকে এমনভাবে সাজিয়েছেন যেন দাঁড়ি টুপি লুঙ্গিতে কিংবা তিলক টিকা টিপ্পনীতে ঢাকবার জো নেই। তাই পৃথিবীর যেখানেই থাকি বারো মাসে তেরো পার্বণের দেশ, জন্মভুমি বাংলাদেশকে ভুলে গেলে চলবে না। তাছাড়া এই ভাষা বর্তমান পৃথিবীর ভাষা গত দিক থেকে ৫ম স্থানে। উন্নত বিশ্বে থেকে আধিপত্তবাদি ভাড়াটিয়া ভাষার দিকে ডুবে থাকলে একদিন আমদের পরে নতুন প্রজন্মগুলু হারিয়ে যাবে বাংলা ভাষা। তাই আমাদের আত্মমর্যাদার ভাষা, এই ভাষায় প্রতিটা বছর নয় প্রতিটা মুহূর্তেই হারিয়ে যেতে চাই উৎসাহ উদ্দীপনা কিংবা সংস্কৃতির আমাদের এই বৈশাখী মেলার মধ্য দিয়েই শুধু দেশেই নয় প্রবাসেও। আধুনিকায়নেও যত্নবান হতে হবে এই বাংলা ভাষাকে শুধু বৈশাখী মেলাই নয় কর্মক্ষেত্রেও।