সম্পাদকীয়:
প্রবাসে বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশিদের মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এসব মৃত্যু যেন অনেকটাই তাদের নিয়তিতে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি এথেন্সে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, গ্রিসে ২০২২ সাল থেকে ২০২৩ সালের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত গত এক বছরে অর্ধশতাধিক বাংলাদেশি মারা গেছেন বিভিন্নভাবে। ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত মোট ১০৯ জন বাংলাদেশি মৃত্যুবরণ করেছেন। ২০২০ সালের জুন থেকে গত বছরের ১২ আগস্ট পর্যন্ত ৮৬ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন। এদের বেশির ভাগেরই হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকে মৃত্যু হয়েছে।
প্রবাসী অধ্যুষিত অন্যান্য দেশেও একই চিত্র দেখা যায়। তবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক মারা যায়। ২০০৮ থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ৩ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৪৯ হাজার ৩০১ জন প্রবাসীর মরদেহ দেশে এসেছে। এর মধ্যে ৩০ হাজার ২৩১ জনের (৬৩ শতাংশ) মরদেহ এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের ৬টি দেশ থেকে। শুধু সৌদি আরব থেকেই এসেছে ১২ হাজার ৯৩০ জন প্রবাসীর মরদেহ। এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৫ হাজার ১২৩ জন, ওমান থেকে ৩ হাজার ৭৭৬ জন, কুয়েত থেকে ২ হাজার ৭২৪ জন, বাহরাইন থেকে ১ হাজার ১১ জন এবং কাতার থেকে ১ হাজার ৫৬২ জনের মরদেহ এসেছে।
এসব মৃত্যুর বড় কারণ কী? বিশ্লেষকরা বলছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যে তীব্র গরম, তাতে প্রচণ্ড পানি শূণ্যতা তৈরি হয়। সে অবস্থায় পানি বেশি পানের পাশাপাশি আরো কী করতে হবে সেটা বুঝতে না পেরে অসুস্থ হয়ে যান অনেকে। সে অবস্থায় কাজ করতে থাকলে হয় সে আরো অসুস্থ হয়ে পড়বে, নতুবা কাজে মন দিতে পারবে না। উভয় ক্ষেত্রেই শারীরিক ক্ষতির সঙ্গে মানসিক চাপ বাড়ে।
আবার অভিবাসন ব্যয় অনেক বেশি হবার কারণে শ্রমিকেরা ওখানে গিয়ে একটা মানসিক চাপের মধ্যে পড়েন। হয়তো ঋণ নিয়ে বিদেশে গেছেন, ফলে অনেকেই বেশি আয়ের চাপে ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করে পর্যাপ্ত ঘুমানোরও সুযোগ পান না, এতে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। যে কারণে দেখা যায়, হঠাৎ স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক হয়। এর বাইরে কর্মস্থলে দুর্ঘটনা, সড়ক দুর্ঘটনা, অগ্নিদগ্ধ হওয়া এবং অসুস্থতার কারণেও অনেকের মৃত্যু হয়।
বাংলাদেশে এখনো প্রায় ৪.৫ কোটি মানুষ যেখানে দরিদ্রসীমার নিচে বাস করে সেখানে অন্তত ৬ কোটি মানুষ প্রবাসীদের পাঠানো টাকায় জীবন যাপন করছে। অর্থনীতিকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে যে প্রবাসী আয় সেই রেমিটেন্স যোদ্ধারাদের অকাল মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে সরকারের কাযকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরী।
পবিত্র ঈদুল আযহা সমাগত। ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হোক ঈদুল আযহার মহত্ব। প্রবাস মেলা’র সকল পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীকে ঈদের শুভেচ্ছা। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন, নিরাপদে থাকুন।