মো: জাহাঙ্গীর আলম হৃদয়, রিয়াদ, সৌদিআররব
ভালোবাসা শব্দটা আগে একরকম থাকলেও এখন তার ভিন্নতা খুঁজে পেয়েছি, যা আগে কখনো ভাবিনি। গত ১৫ জানুয়ারি সৌদি আরব থেকে নিজ দেশে ফিরে প্রায় ৬ মাস ছুটিতে থাকাকালীন সময়ে বুঝতে পারি ভালোবাসা কাকে বলে।
মায়ের ভালোবাসা, বোনের ভালোবাসা, বউয়ের ভালোবাসা, বন্ধুদের ভালোবাসা, সব কিছুর চাইতেও অধিক ভালোবাসা হল নিজ সন্তানের মুখে বাবা বলে ডাকা শব্দের ভালোবাসা। যা কিনা মনের গভীরে গিয়ে লাগে। বলছিলাম আমার রাজকন্যা তাসনীম আলম জারার ভালোবাসার কথা। ঠিক যেমনটা ছোট বেলায় আমাদের মা-বাবা আমাদের জন্য করেছেন।
প্রবাস জীবন থেকে ছুটিতে গিয়ে চাঁদপুর শাহরাস্তি উপজেলার নানা কাজের পরে যখন বাসায় ফিরে যেতাম, দরজা কড়া ধরে নাড়া দিতেই আমার মেয়ে জারা বলতেন বাবা এসেছে। আর দরজা খুলে রুমের ভিতরে ঢুকার পর বলতেন বাবা কোলে যাব। তারপর যখন পকেট থেকে লেয়ার কেক বা কিটকাট চকলেট বের করে ওর হাতে দিতাম গাল ভরা হাসি দিয়ে দুই গালে দুটি চুমো দিত।
আর সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই আমায় খোঁজ করত, না পেয়ে ওর দাদির রুমে গিয়ে বলতেন দাদু বাবা কই? তখন মা বলতেন বাজারে গেছেন, তখন সে মাথা নিচু করে মায়ের কাছে চলে আসতো। মাঝে মাঝে আমার মা যখন আমায় জড়িয়ে ধরে বলতেন এটা আমার বাবা, তখন আমার মেয়ে জারা আমায় জড়িয়ে ধরে বলতো না এটা আমার বাবা।
ঘরের চারপাশে বাবা বলে ডাকাডাকি শব্দটা কি যে মধুর তা মহান আল্লাহ ভালো জানেন, কারণ এটা যে এক রহমত। পুরো দুনিয়াটা পায়ের কাছে এনে দিলেও ততটা খুশি হওয়া যাবেনা যতটা খুশি হওয়া যায় সন্তানের মুখের বাবা ডাক শব্দে।
গত ৯ জুলাই ২০১৮ আবারো প্রবাসের পথে পাড়ি দেই। যখন মা, ভাই, বোনের কাছ থেকে বিদায় নিলাম আমার আদরের কন্যা জারা তখনও আমার কোলে। সে বুঝতে পারেনি তার বাবা আর প্রতিদিনের মত চকলেট বা কেক হাতে ঘরে ফিরে আসবেনা। সে ভেবেছে বাবা আগের মতই বাজারে যাচ্ছেন, যেই গাড়িতে উঠছিলাম শক্ত হাতে আমায় জড়িয়ে ধরে বাবা বলে ডাকতে লাগলো। আমার মেঝো বোন আমার কোল থেকে জারাকে নিয়ে গেল।
আজ প্রবাসে এসে হাজার কাজের মাঝেই যেন চারপাশ থেকে আগের মতই আমার মেয়ে তাসনীম আলম জারা আমায় বাবা বলে ডাকছে। দেশে যখন কল দেই মেয়ে বলে বাবা তুমি কোথায়? আসোনা কেন? কি জবাব দিব বুঝতে পারিনা। মিথ্যা আশ্বাস দিতেও পারিনা আমি আসছি। কবে ফিরে যাব আপনালয়ে, কবে আবার সন্তানের ভালোবাসা পাব জানিনা।
হায়রে প্রবাস ভালবাসাহীন প্রবাস। ভাতিজি-ভাতিজা জান্নাত, জেরিন, জুই, জুনায়েদ, ভাগ্নি – আইরিন, উর্মী – ভাগিনা- বাবলু, সোহরাব, সাকিল সবার একটাই কথা মামা তুমি ফিরে এসো। কত মানুষ দেশে আছে কাজ করে খাচ্ছেন, প্লিজ তুমি ফিরে আসো। কিন্তু আমি নিরুপায়। এই দূর পরবাসে কেবলই প্রিয়জনদের ডাক শুনতে পাই।