শরীফ মুহম্মদ রাশেদ:
প্রবাসে থাকলেও সবসময় দেশের টান অনুভব করেন। সেই টান থেকেই দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে চান। তিনি তা করেও যাচ্ছেন। জালালাবাদ এসোসিয়েশন ইতালির সাথে সম্পৃক্ত থেকে দেশে-প্রবাসে নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে কাজ করে যাচ্ছেন। ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে আরও বৃহৎ পরিসরে দেশের উন্নয়নে কাজ করতে চান ইতালি প্রবাসী অলিউদ্দিন শামীম।
সম্প্রতি এক সন্ধ্যায় প্রবাসীদের প্রিয় মুখপত্র ‘পাক্ষিক প্রবাস মেলা’ কার্যালয়ে এসেছিলেন ইতালি প্রবাসী বিশিষ্ট সংগঠক অলিউদ্দিন শামীম। আলাপচারিতায় দেশে বিদেশে তার বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের কথা শেয়ার করেছেন প্রবাস মেলার পাঠকদের জন্য। সেসবের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।
সিলেটের বিয়ানীবাজারের কৃতি সন্তান অলিউদ্দিন শামীম। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে ইতালির রোমে বসবাস করছেন। সেখানে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরির পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটিতে বেশ পরিচিত মুখ তিনি।
এর আগে ১৯৯৪ সালে অলিউদ্দিন শামীম পরিবার এবং নিজের জীবনের স্বচ্ছলতার আশায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাড়ি জমান। দেশটির আবুধাবির ‘ওসমান টেইলারিং আ্যান্ড ফ্যাব্রিক্স’ কোম্পানিতে ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে চাকরি করতেন তিনি। ১৯৯৮ সালে ইউরোপের দেশ মাল্টায় একটি ফ্যাশন শোতে আমন্ত্রণ পান তিনি। মাল্টাতে সেই অনুষ্ঠানে ১৮ দিন থাকার পর ভিজিট ভিসায় ইতালিতে চলে যান।
ইতালি থেকে পুনরায় আবুধাবিতে আসার ইচ্ছা থাকলেও নিজের মেধা, যোগ্যতায় একটি বড় ফ্যাশন ডিজাইনার কোম্পানিতে কাজের অফার পান শামীম। কয়েকজন বন্ধুবান্ধবের পরামর্শে সেখানেই থেকে গেলেন।
অলি উদ্দিন শামীম জানান, ‘নাদিয়া ফ্যাশন ডিজাইন’ নামে এই কোম্পানিটি ছিল বিশ্বের অন্যতম নামকরা ফ্যাশন ডিজাইন প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের অনেক নামি-দামি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের। অনেক দেশে এর শাখা রয়েছে।
এ প্রতিষ্ঠানের হয়ে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের রাজ প্রাসাদে, বিএমডব্লিউ কোম্পানির অফিসের ইন্টেরিয়র ওয়ার্ক, ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর ইন্টেরিয়র ওয়ার্কে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এসব বড় বড় প্রতিষ্ঠানের ডিজাইন অলিউদ্দিন শামীম নিজেই করেছেন বলে জানান।
টানা দুই দশক তিনি এ প্রতিষ্ঠানে নিষ্ঠার সাথে কাজ করেছেন। এরপর ২০১৮ সালের শুরুর দিকে ইতালি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি চাকরিতে যোগ দেন কৃতি এই প্রবাসী। এখানে তিনি ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের প্রবাসীদের কাগজপত্রের দোভাষী এবং অনুবাদক হিসেবে কর্মরত আছেন।
বর্তমান চাকরি কেমন উপভোগ করছেন এক প্রশ্নের জবাবে অলিউদ্দিন শামীম জানান, ‘আমি খুব উপভোগ করছি। কারণ আমার বর্তমান পেশায় নিয়োজিত থেকে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশির সেবা করতে পারছি। বিশেষ করে যে সকল প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাগজপত্রের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, কোনো আইনি ঝামেলায় পড়ার সম্ভাবনা থাকে, তখন আমি আমার পেশাগত কাজের মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে তাদের কাজগুলো করে দিতে পারি। একজন বাংলাদেশি হিসেবে এ কাজগুলো করতে পেরে আমি নিজেকে নিয়ে খুব গর্ববোধ করি।’
নিজের পেশাগত কাজের পাশাপাশি অলিউদ্দিন শামীম দেশে-বিদেশে একজন সোস্যাল এক্টিভিস্ট হিসেবে বেশ পরিচিত। বিশ্বজুড়ে সিলেট প্রবাসীদের অন্যতম সেতুবন্ধন জালালাবাদ এসোসিয়েশন ইতালির প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০১৩ সাল থেকে টানা তৃতীয়বারের মত দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে ২০০৮ সালে এবং ২০১০ সালে সংগঠনটির কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ সংগঠনে ইতালি শাখার ৪৩ জন কার্যকরী সদস্য এবং ৫০০ জন সদস্য রয়েছে বলে তিনি জানান। সংগঠনটি ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের কৃষ্টি কালচার তুলে ধরতে ব্যাপক প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে।
এক প্রশ্নের জবাবে অলি উদ্দিন শামীম জানান, ‘আমরা জালালাবাদবাসী শুধুমাত্র সিলেট বিভাগের জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করি না, জালালাবাদ এসোসিয়েশন বৃহত্তর সিলেটবাসীসহ সারাবিশ্বের বাংলাদেশিদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।’
‘যারা নতুন বিদেশে আসেন তাদের কাগজপত্র থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সব কাজ আমরা জালালাবাদ এসোসিয়েশন ইতালির পক্ষ থেকে করে দিয়ে থাকি। এছাড়া প্রবাসে কেউ মারা গেলে সংগঠনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়,’ যোগ করেন শামীম।
সংগঠনের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে বর্তমানে ইতালির বিভিন্ন শহরে জালালাবাদ এসোসিয়েশনের শাখা কমিটি করা হচ্ছে জানিয়ে অলিউদ্দিন শামীম বলেন, ‘আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে কমিউনিটিকে আরও এগিয়ে নিতে চাই।’ প্রবাসের পাশাপাশি জালালাবাদ এসোসিয়েশন ইতালির দেশেও অনেক সামাজিক কার্যক্রম রয়েছে বলে শামীম জানান। এরই অংশ হিসেবে, সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় রিক্সা, হুইল চেয়ার, সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে যে সকল সরকারি কর্মকর্তা বিদেশ সফরে যায় তারা সবাই জালালাবাদ এসোসিয়েশনের মাধ্যমে যান বলে অলিউদ্দিন শামীম জানান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘২০১৯ সাল থেকে জালালাবাদ এসোসিয়েশনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা যারা বিভিন্ন দেশে সফরে যান তাদের আমন্ত্রণপত্র, হোটেল বুকিং, মিটিং, সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের সাথে দ্বিপাক্ষিক সমন্বয় পরররাষ্ট্র মন্ত্রণালরের মাধ্যমে করা হয়।’ এ কাজের অংশ হিসেবে শামীম ইউরোপের বিষয়গুলো দেখভাল করেন বলে প্রবাস মেলাকে জানান।
বিশ্বের ২০টি দেশে এ সংগঠনের অনুমোদন রয়েছে জানিয়ে শামীম বলেন, ঢাকার কারওয়ান বাজারে জালালাবাদ এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় রয়েছে। এছাড়া বনশ্রীতে জালালাবাদ হোটেল নামে একটি ১০ তলা বিল্ডিং হচ্ছে।
প্রবাসে থাকলেও দেশের জন্য সবসময় কিছু করার টান অনুভব করে জানিয়ে শামীম জানান, ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে আরও বৃহৎ পরিসরে দেশের উন্নয়নমূলক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে চান।
ইতোমধ্যে ভালো সংগঠক এবং সমাজ সেবার স্বীকৃতি হিসেবে দেশে বিদেশে ৮০টিরও বেশি পুরস্কার রয়েছে কৃতি প্রবাসীর ঝুলিতে।
অলিউদ্দিন শামীমের স্ত্রীর জেসমিন সুলতানা মীরা। ইতালি রোম প্রবাসী কমিউনিটির সামাজিক কর্মকাণ্ডে বেশ সক্রিয় আছেন মীরা। ইতালি মহিলা সংস্থার সভাপতি হিসেবে কাজ করছেন। তিনি প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটিতে অনেক সামাজিক কাজের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। তাদের সংসারে রয়েছে দুই ছেলে। বড় ছেলে আহসান ৪র্থ শ্রেণিতে এবং ছোট ছেলে আলিয়ান নার্সারীতে পড়ে।