জাহাঙ্গীর আলম সিকদার, লন্ডন, যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি:
গত ৩১শে মে, ২০২০ রবিবার ভার্চুয়াল মিডিয়া ঝুমের মাধ্যমে লন্ডনে অনুষ্ঠিত সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দের এক জরুরী প্রতিবাদ সভায় সম্প্রতি প্রবাসী বাংলাদেশিদের সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অশালীন মন্তব্য করার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়। সভায় বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী বরাবরে একটি প্রতিবাদ লিপি প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও কমিউনিটি নেতা ড. হাসনাত এম হোসেইন এমবিইর সভাপতিত্বে ও সাবেক ডেপুটি নির্বাহী মেয়র আম ওহিদ আহমদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় বক্তব্য রাখেন- বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ড. ওয়ালী তছর উদ্দীন এমবিই, গ্রেটার সিলেট কাউন্সিল ইউকের চেয়ারপারসন ব্যারিস্টার আতাউর রহমান, বিশিষ্ট রাজনীতিবীদ মহিদুর রহমান, কমিউনিটি নেতা ও সরকারি অফিসার ফয়েজ উদ্দিন এমবিই, ব্যারিস্টার আব্দুল মজিদ তাহের, বিশিষ্ট সাংবাদিক শামসুল আলম লিটন, এন এইচ এস এর সিনিয়র কর্মকর্তা ডা. মুস্তাফিজুর রহমান, ব্যারিস্টার কাউন্সিলার নাজির আহমদ, ড. এম এ আজিজ, কমিউনিটি নেতা হাজী হাবিব, নিউক্যাসল বাংলাদেশ এসোসিয়েশনের সভাপতি মাহতাব মিয়া ,অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল কাদের সালেহ, ভয়েস ফর জাস্টিস ইউকের সেক্রেটারী কে এম আবুতাহের চৌধুরী প্রমুখ।
বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন বলেন -পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে মোমেনের আমাদের সাথে এত ভাল সম্পর্ক থাকার পর এ ধরনের বক্তব্য বড়ই দুঃখজনক। উনি আমাদের কাষ্টডিয়ান। উনার বক্তব্যে আমরা কষ্ট পেয়েছি।মন্ত্রীর ব্যাখ্যায় প্রবাসীরা খুশী নয়। এর কড়া প্রতিবাদ জানানো দরকার ।
ফয়েজ উদ্দিন এমবিই বলেন, ড. মোমেন একজন ক্যারিয়ার ডিপ্লোমেট নন। সরকারের রোল অব বিজনেসে ভুল রয়েছে। প্রবাসীরা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রাখার পরও এ ধরনের বক্তব্য অপ্রত্যাশিত। এ জন্য তাঁর পদত্যাগ করা উচিত।
মাহতাব মিয়া বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১৫.৫ বিলিয়ন নেট রেমিট্যান্স দেশে প্রেরণ করেন। প্রবাসীদের কমেডি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। ৪৯ বছর ধরেই আমরা আঘাত পেয়ে যাচ্ছি। পলিসিগতভাবে সরকার প্রবাসীদের মূল্যায়ন করেনা। ১ কোটি ৩০ লাখ প্রবাসী জাতিকে সাহায্য করে যাচ্ছে। প্রবাসীদের কটুক্তি ও অসম্মান করলে সরকার বা প্রশাসন কিছু বলেনা। মন্ত্রীর এসব বেফাঁস কথাবার্তার বিরুদ্ধে সবাই প্রতিবাদ করা উচিত।
ব্যারিস্টার নাজির আহমদ বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী চারবার বেফাঁস কথাবার্তা বলেছেন। তার মতো একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে আমরা এমন কথা আশা করি না ।প্রবাসীদের রিমিট্যান্স কেন কমছে তা চিন্তা করে দেখা দরকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে হবে। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে প্রবাসীদের আসন ও প্রতিনিধিত্ব দাবী করেন।
আম ওহিদ আহমদ বলেন, প্রবাসীদের বাড়িতে লাল পতাকা উঠানো হয় ও বাড়ি ঘর ভাঙ্গা হয়। সরকার প্রবাসীদের জান মালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে।
শামসুল আলম লিটন বলেন, অন্যান্য দেশ তাদের প্রবাসীদের নিজ দেশে ফেরত নিচ্ছে। বিশেষ করে এয়ার এম্বুলেন্স দিয়ে দেশে নিয়ে চিকিৎসা করছে। বিশ্বের এ ক্রান্তিকালে দায়িত্বশীল মন্ত্রীদের কটুক্তির প্রতিবাদ জানিয়ে সরকারকে কড়া চিঠি লেখা দরকার।
ড. এম এ আজিজ বলেন, বিনা ভোটের এমপি ও মন্ত্রীদের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশী কিছু আশা করা যায় না। তিনি মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবী করে প্রবাসী বান্ধব মন্ত্রী নিয়োগের আহ্বান জানান ।
হাজী হাবিব বলেন, প্রবাসীদের বাড়িতে হামলা ও জরিমানা করা হচ্ছে। সরকার সুবিধামত তাদের স্বার্থে অযোগ্য লোকদের মন্ত্রী বানাচ্ছে। যার কারণে তারা প্রবাসীদের পাশে না থেকে আবোল তাবোল বকছে।
অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল কাদের সালেহ বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রীর প্রফাইলের সাথে এ ঘৃণাজনিত বক্তব্য মানায় না।তাদের ঘাড়ে পাগলামী আছর করেছে। তাদের কথাবার্তা প্রবাসীদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছডিয়েছে।যার কারণে প্রবাসীরা কোন চিকিৎসা পায় না। মন্ত্রীদের এসব বক্তব্য সংবিধানের লংঘন ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল এবং কুটনীতির শিষ্টাচার বহির্ভূত ।
মাহিদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। মন্ত্রী জ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছে এবং সংবিধান লংঘণ করেছেন। তিনি প্রবাসীদের স্বার্থ রক্ষায় আন্তর্জাতিক ক্যাম্পেইন গড়ে তোলার আহ্বান জানান ।
ব্যারিস্টার আতাউর রহমান বলেন, মন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্য আমাদের হতাশ করেছে। জাতির দুর্দিনে আমাদের অবদানকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। তিনি তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান ।
কে এম আবুতাহের চৌধুরী বলেন, সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সাবধানে কথা বলা উচিত। আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। দেশে আমাদের বাড়ি-ঘর ,সহায়-সম্পত্তি, মাতা-পিতা ও আত্মীয় স্বজন রয়েছে। আমাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে কারো বাধা দেওয়ার এখতিয়ার নেই। এ ধরনের বক্তব্য নতুন প্রজন্মকে দেশ বিমুখ করবে।
সভাপতির বক্তব্যে ড. হাসনাত এম হোসেইন এমবিই বলেন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে সিডর, আইলা, জলোচ্ছাস, করোনা মহামারী, আম্পান সহ প্রত্যেকটি দূর্যোগময় মুহূর্তে প্রবাসীদের অবদান ইতিহাসের অন্তর্গত। ৫০ বছর প্রবাসীরা বাংলাদেশকে দিলেন। আজ প্রবাসীদের পাশে কেউ নেই। তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রীর অসংলগ্ন কথাবার্তার প্রতিবাদ জানিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সভায় সারা দেশ থেকে অর্ধ শতাধিক সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ অংশ গ্রহণ করেন।