ডক্টর আব্দুল মালেক ফরাজী, প্যারিস, ফ্রান্স: বাংলাদেশের প্রায় দুই কোটি রেমিটেন্সযোদ্ধা (NRB) প্রবাসীরা দেশের বাহিরে কর্মরত রয়েছি। তাদের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী, শুভাকাঙ্খী সহ দেশের অন্তত আরো পাঁচ থেকে সাত কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে এই রেমিটেন্সযোদ্ধা (NRB) প্রবাসীদের উপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই কোনো না কোনোভাবে প্রবাসীদের আয় রোজগারের উপর নির্ভরশীল। সরকারি হিসাব অনুযায়ী দেশের ১৭ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ১১ কোটি কর্মক্ষম তার মাঝে প্রায় ৬ কোটি বেকার। প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ৮ থেকে ১০ লক্ষ বেকার যুবক বিদেশে কর্মের খুজে যাচ্ছে। এই রেমিটেন্সযোদ্ধা (NRB) প্রবাসী শ্রমিকরা প্রতি মাসে ১৬ (ষোল) বিলিয়ন মার্কিন ডলার তথা ১৬ (ষোল) শত কোটি টাকা বাংলাদেশে পাঠিয়ে থাকে। দেশ পরিচালনায় এবং দেশ-জাতির ভবিষৎ কর্ম-পরিকল্পনায় প্রায় এই দুই কোটি রেমিটেন্সযোদ্ধা (NRB) প্রবাসীদের কোন অংশগ্রহণ ও ভূমিকা নেই। প্রবাসীদের অর্জিত মূল্যবান জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দেশ ও জাতির টিকসই উন্নয়ন, উন্নতি, অগ্রগতির গতি ত্বরান্বিত করতে কোন কাজেই লাগছেনা। যাদের কষ্টার্জিত অর্থে দেশের উন্নয়ন, উন্নতি, অগ্রগতি, সমৃদ্ধি হচ্ছে এবং জাতীয় অর্থনীতি সচল রয়েছে, গাড়ীর চাকা ঘুরছে তাদের মান-ইজ্জত-সন্মান, অর্থ-সম্পত্তি, বাড়ি-ঘর, পরিবার তথা অস্ত্বিত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ রাষ্ট্রযন্ত্রের তেমন কোন ভূমিকাই নেই। আমাদের কষ্টার্জিত অর্থে বাংলাদেশ পরিচালিত হলেও আমাদের নিজের দেশ পরিচালনায় অংশগ্রহণ ও ন্যায্য অধিকার পাই না। তাই আমরা ভোটাধিকার ও জাতীয় সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের অধিকার চাই। আমাদেরকে প্রবাসীদের স্ব-স্ব দেশে ন্যায্য-মানবিক-আইনী অধিকার তথা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশেও প্রবাসীদের ন্যায্য-নাগরিক অধিকার, মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার আদায়ের প্রতিজ্ঞায় নিরলসভাবে কাজ করতে হবে। রেমিটেন্সযোদ্ধা (NRB) প্রবাসীরাও সাধারণ মানুষের মত দেশে এবং বিদেশেও খুবই অসহায় ও অনিরাপদ। তাই সারা বিশ্বে ছড়ানো প্রবাসীদের মাঝে পারস্পরিক যোগাযোগ ও ঐক্যবদ্ধতা গড়ে তোলা অত্যাবশক। প্রবাসীদের কর্মরত দেশে ন্যায্য, আইনী অধিকার, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম পরিচালনা করা প্রয়োজন। বাংলাদেশেও প্রবাসীদের মৌলিক অধিকার, নাগরিক অধিকার, জান-মাল, মান-সন্মান ও সহায়-সম্পত্তির নিরাপত্তা এবং প্রবাসীদের অস্তিত্ব রক্ষার জোরালো সংগ্রাম গড়ে তোলা আজ বাধ্যতামূলক। রাষ্ট্রই একমাত্র সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী প্রতিষ্ঠান। কাজেই জাতীয় সংসদে ভাল-মন্দের ভিত্তিতে রেমিটেন্সযোদ্ধা (NRB) প্রবাসীদের প্রতিনিতিত্ব থাকতেই হবে। প্রবাসীদের নাম বিক্রি করে অনেক সামাজিক পরগাছা, আগাছা অর্থাৎ যাদের প্রবাসীদের সুখ-দুঃখের সাথে কোন সম্পর্কই নাই, আজ তারা সরকার থেকে নানাবিদ সুযোগ সুবিধা নিচ্ছে। প্রবাসীরা বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১০% (এক দশমাংশেরও) বেশি। প্রবাসীদের বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের (৩৭.৫০) সাড়ে সাঁইত্রিশটি আসনের দাবীদার। আমাদের ভোটাধিকার ও জাতীয় সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব চাই। প্রবাসে জন্ম নেওয়া সন্তানদেরকে জাতীয় ইতিহাস-এতিহ্য, সাহিত্য-সাংস্কৃত, পছন্দ-অপছন্দ, চাওয়া-পাওয়ার সাথে তথা জাতীয মূলধারার সাথে অবশ্যই সম্পর্কিত করতে হবে। তারা বাংলাদেশের শিক্ষিত, সচেতন, দক্ষ, যোগ্য ও অভিজ্ঞ জাতীয় সম্পদ। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভবিষৎ জাতীয় প্রতিনিধি ও অগ্রদূত। জাতীয় প্রতিষ্ঠায় তারাও হতেপারে আমাদের পথহারা জাতির অধিনায়ক, পথ প্রদর্শক ও সঠিক পথের দিশারী। তাদের ধরে রাখার দায়িত্ব রাষ্টের। সেই প্রয়োজনে অবশ্যই বাংলাদেশ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় আমাদের জাতীয় মূলধারার সাথে জোরালো একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সেতু-বন্ধন তথা সাহিত্য-সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র গড়ে তোলা বাধ্যতামূলক। যার মাধ্যমে সঠিক পথ ও পাথেয় নির্ধারণের লক্ষ্যে দেশে দেশে নিয়মিত আয়োজিত হবে কর্মশালার, সভা-সমাবেশ এবং মুক্ত আলোচনার। তৈরি হবে মুক্তচিন্তা চর্চা মঞ্চের, মতবিনিময় আসর ও চৈতন্য জাগরণের উন্মুক্ত মঞ্চ ও ক্ষেত্র। প্রবাসে জন্ম নেওয়া সন্তানদেরকে বিনা শর্তে নাগরিকত্ব, ভোটাধিকার ও জাতীয় সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের অধিকার দিয়ে দেশপ্রেম ও পিতৃভূমি বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠায় তাদের দৃঢ় প্রত্যয়ী করে তোলার দায়ীত্ব আমাদেরই।
(এই বিবৃতি ও মতামত লেখকের নিজস্ব। এতে প্রবাস মেলা কর্তৃপক্ষের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই)
লেখক: এনআরবি ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, প্যারিস, ফ্রান্স।