মো: বাছের আলী
ভোজন রসিক হিসেবে বাঙালিদের বেশ সুখ্যাতি আছে। দেশ কাল পাত্র ভেদে আমাদের অনেক অভ্যাস বদলেছে, পেয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া, কিন্তু খাওয়ার সাথে কোন আপোষ হয়নি। একসময় বাঙালি খাদ্যে অভ্যস্ত থাকলেও বিশ্বায়ণের এ যুগে আমাদের খাদ্য তালিকায় যুক্ত হয়েছে অনেক বিদেশী খাবারও। তেমনি একটি খাবার হচ্ছে পিজ্জা। চলুন জেনে নেই বহুল পরিচিত এই পিজ্জার ইতিহাস।
ফাস্টফুড হিসেবে বেশ পরিচিত পিজ্জা একসময় ছিল সমাজের নিম্নবিত্ত শ্রেণির খাবার। পিজ্জা প্রথমে তৈরি হয় ইতালির নেপলসে। ১৬ শতাব্দীতে দরিদ্র নেপলসবাসিরা ব্যস্ত থাকতো নিজেদের কাজ নিয়ে। তাদের একরুমের থাকার জায়গায় সাধারণত আলাদা রান্নাঘর থাকতো না। তাই এমন খাবার তাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠে যা চলার পথে হাঁটতে হাঁটতে খাওয়া যায়। রাস্তার পাশে ছোট দোকানে গোলাকার রুটির উপর নানা রকম টপিংস দিয়ে তৈরি একপ্রকার খাবার তাদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে তখন; সেটাই আমাদের সবার প্রিয় পিজ্জা।
পিজ্জা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠার গল্পটিও বেশ মজার। কথিত আছে ১৮৮৯ সালে রাজা আম্বেরটো এবং রানী মার্গারিটা সমন্বিত ইতালির নেপলসে আসেন। ফ্রেঞ্চ রন্ধনপ্রণালীতে তৈরি খাবার খেতে খেতে তখন একেবারেই বিরক্ত রানী স্বাদ বদলাতে পিজ্জা খেতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। ‘ডা পিয়েট্রো পিজ্জারিয়া’ (Da Pietro Pizzyeria; বর্তমানে ‘পিজ্জারিয়া ব্র্যান্ডি’ নামে পরিচিত) এর একজন বেকার রাফায়েলে এস্পোসিটো (Raffaele Esposito) তখন রানীর জন্য পিজ্জা তৈরি করেন। শোনা যায় টমেটো সস, মোজারেলা চিজ এবং সবুজ বেসিল পাতা ব্যবহার করে রাফায়েল পিজ্জার উপর ইতালির পতাকা ফুটিয়ে তুলেছিল। পিজ্জার স্বাদে রানী এতোটাই অভিভূত হয়েছিলেন যে, সর্বস্তরে পিজ্জার প্রসারের কথা বলেছিলেন। এরপর থেকে এই ধরনের উপাদান সমন্বিত পিজ্জাগুলো ‘মার্গারিটা পিজ্জা’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
তবে নেপলসের বাইরে পিজ্জা পরিচিত হয় ১৮০০ শতকের শেষ দিকে যখন কাজের জন্য ইতালিয়ানরা আমেরিকা পাড়ি জমাতে থাকে। ১৯০৫ সালে ম্যানহাটনের স্প্রিং স্ট্রীটে প্রথম পিজ্জার দোকান দেন এবহহধৎড় খড়সুধৎফর। তার প্রতিষ্ঠিত বলে “‘জি লোম্বারডিস” আজো পিজ্জা তৈরি করে বিক্রি করছে, তবে এর স্থান পরিবর্তন হয়েছে; কিন্তু ১৯০৫ সালের বলে পিজ্জা তৈরির ওভেন তারা এখনো ব্যবহার করছে। বর্তমানে শুধু আমেরিকায় বছরে ৩ মিলিয়ন পিজ্জা বিক্রি হয়, যা থেকে রাজস্ব আসে প্রায় ৩২ মিলিয়ন।
পিজ্জার আসল প্রসার হয়েছিল ১৯৫৮ সালে ‘পিজ্জা হাট’ এর পথযাত্রার মাধ্যমে। এরপর বিভিন্ন সময় একে একে প্রতিষ্ঠিত হয় লিটল সিজারস, ডমিনোস, পাপা জনস এর মতো বিখ্যাত পিজ্জা কোম্পানিগুলো। পিজ্জা হাট এবং ডমিনোস বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশে তাদের শাখা তৈরি করেছে, “পিজ্জা” কে দিয়েছে একটি ভিন্ন মাত্রা। ১৯৫৭ সালে ‘সেলেন্টানো’ কোম্পানি প্রথম হিমায়িত পিজ্জা বাজারে আনে যা তৎকালীন সময়ে অন্য যেকোনো হিমায়িত খাবারের চেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
ইতিহাস বলে ১৬০০ শতাব্দীতে পিজ্জা তৈরি হলেও নিওলিথিক যুগ থেকেই পিজ্জার মত দেখতে ফ্ল্যাটব্রেড সদৃশ রুটির প্রচলন ছিল। সময়ের সাথে মানুষের রুচি বদলেছে। একসময় সমাজের নিম্নবিত্তরা খেলেও বর্তমানে ৮ থেকে ৮০ সবাইকে স্বাদের জাদুতে মুগ্ধ করে রেখেছে পিজ্জা।