মার্ক রায়, তুলুজ, ফ্রান্স প্রতিনিধি: ফ্রান্স বনাম covid-19- তুমুল যুদ্ধে করোনা ভাইরাস পরাজিত,পরিশ্রান্ত। বিশ্ব মানবতার দেশ ফ্রান্স অতঃপর করুণা করেছে করোনা কে।মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহের পর হঠাৎ করেই করোনা আক্রমণ করে বসে ফ্রান্সের জনগণকে। ফ্রান্সের মহামান্য প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ কাল বিলম্ব না করে জাতির উদ্দেশে ভাষণে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন।আর জনগণকে আহ্বান করেছিলেন, সহযোগিতার জন্য। শুরুর দিকে যুদ্ধটা একটু কঠিন মনে হলেও সকল মানুষের আন্তরিক সহযোগিতা এবং প্রতিরোধের মুখে করোনা পিছু হাঁটতে বাধ্য হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে অতি মূল্যবান কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের যন্ত্র গুলো পরম নিশ্চিন্তে বিশ্রাম নিতে শুরু করেছে। ডাক্তার ,নার্স এবং স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গরা শান্তির হাসি হাসতে শুরু করেছে। ঘুমন্ত নগরী আবারও নতুন সকালে জেগে উঠেছে। ফ্রান্সের জনগণ প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। তবে এখনো চারিদিকে অলিখিত সর্তকতা। ১১ মে, ২০২০ নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ফ্রান্সের লকডাউন তুলে নেয়া হলো। লকডাউন তুলে দেবার প্রথম ধাপে কিছু ব্যাতিক্রম বাদে বাচ্চাদের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিপণিবিতান খুলে দেয়া হচ্ছে। ইউরোপিয়ানদের জন্য উম্মুক্ত হচ্ছে সীমান্ত। সমুদ্র সৈকত সহ পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় সকল স্থান আপাতত বন্ধ থাকছে। রাস্তাঘাটে অন্তত ৫০% ভাগ গণপরিবহন চলাচল নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ঘর হতে বাহির হলে, মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ,অন্যথায় জরিমানা গুণতে হবে।

৫৫ দিন ফ্রান্স জুড়ে লকডাউন থাকার পর, ১১ মে, ২০২০ কাজে যাওয়ার পথে এক অন্য ভাবনা মাথায় এলো। যাবার সময় দেখলাম মেট্রো ট্রেনে উঠার জন্য কি সুন্দর দিক নির্দেশনা। সকলেই নিয়ম কে সম্মান করে, ট্রেনে ওঠা নামা করছে, অবাক হলাম ট্রেনের ভিতরে ঢুকে,করোনা কে ভালবেসে তার কথা প্রতি মুহূর্তে মানুষকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য। মুহূর্তের ভিতরে মনের ভাবনায় ভেসে উঠলো, এইতো কদিন আগেই বাংলাদেশে সংবাদ মাধ্যমে দেখেছিলাম করোনার ভয়ে রাতে মাকে জঙ্গলে ফেলে ছেলে পালিয়ে যাওয়া, করোনার ভয় ডাক্তারদের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি বীভৎস কত ঘটনা। অথচ ফ্রান্সের গণপরিবহনে করোনাকে ভালোবেসে তার সাথে সহ-অবস্থানের কি সুন্দর দিক নির্দেশনা। জয় হোক এই মহা মানবতার। পরিস্থিতি আমাদের এই বলে দিচ্ছে,করোনা আমাদের অতিথি হয়ে আরো অনেক দিন থাকবে। খুব তাড়াতাড়ি মানব সমাজ ছেড়ে যাবার পাত্র সে নয়। কিন্তু আমাদের সবাইকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে হবে, প্রিয়জন এবং নিজের জন্য।
আসুন আমরা নিরাপদ থাকি এবং অন্যকে নিরাপদ রাখি। করোনা রোগীকে নয়, করোনা কে ঘৃণা করি।